অরিত্র ঘোষ ও সায়ন্ত ভট্টাচার্য
হাওড়া: ঘড়িতে তখন পৌনে ৫টা। প্রায় ১৩০ কিলোমিটার গতিবেগে ছুটছে পুরী-হাওড়া ডাউন বন্দে ভারত এক্সপ্রেস (Vande Bharat Express )। বাইরে তখন প্রচণ্ড ঝড় ও বজ্রপাত সহ বৃষ্টি হচ্ছে। হঠাৎ করেই ট্রেনের ভিতর প্রচণ্ড জোরে একটি আওয়াজ হয়। তারপর আরও ৩-৪টে আওয়াজ হয় এবং ট্রেনটা ধীরে-ধীরে দাঁড়িয়ে পড়ে। তখন ট্রেনটির অর্ধেক অংশ ব্রিজের উপর ও অর্ধেক অংশ ব্রিজের নীচে। রবিবার পুরী থেকে ফেরার পথে এমনই ভয়াবহ অভিজ্ঞতার (Experience) সম্মুখীন হন পুরী-হাওড়া ডাউন বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের যাত্রীরা। সেই সময় ওই ট্রেনের মধ্যে ছিলেন কলকাতার বাসিন্দা, ইউটিউব ব্লগার, শিবাজী পাল। TV9 বাংলা-কে ফোনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন।
TV9 বাংলা-কে ফোনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শিবাজী পাল জানান, প্রচণ্ড আওয়াজে ট্রেনটি দাঁড়িয়ে পড়তেই যাত্রীদের সকলের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তারপর ধীরে-ধীরে জানা গেল, প্রচণ্ড ঝড়ে কোনও একটি গাছের ডাল সামনের উইন্ডস্ক্রিনে ধাক্কা মারে। তারপর সেটি উপরের দিকে প্যান্টোগ্রাফের উপর পড়ে। ফলে প্যান্টোগ্রাফ ছিঁড়ে যায় এবং ট্রেনে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। তার জন্যই ট্রেনটি দাঁড়িয়ে পড়ে। এই ঘটনায় ট্রেনের সামনের উইন্ডস্ক্রিনটি ফেটে গিয়েছে এবং অনেকগুলি ফাটল হয়েছে। এই দুর্ঘটনার পর ট্রেনটি দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে পড়ে। তবে নিরাপত্তারক্ষী থেকে ট্রেনের কর্মীরা খুব সহযোগিতা করেছিলেন বলে জানান শিবাজীবাবু। তাঁর কথায়, “অনেকক্ষণ ট্রেনটি দাঁড়িয়ে যায়। তারপর জানতে পারলাম, অন্য ইঞ্জিন আসবে এবং আমাদের নিয়ে যাওয়া হবে।”
ট্রেনটি মাঝপথে দাঁড়িয়ে যাওয়ায় এসি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। তবে দরজা খুলে দেওয়ায় খুব একটা সমস্যা হয়নি বলে জানান শিবাজীবাবু। এরপর রাত সওয়া ৮টা নাগাদ ডিজেল ইঞ্জিন আসে এবং কাপলিং করে বন্দে ভারত এক্সপ্রেসকে টেনে নিয়ে যায়। কিন্তু, কিছুটা গিয়ে ফের দাঁড়িয়ে যায় ট্রেনটি। শিবাজীবাবু বলেন, “ট্রেনটি ৮-১০ কিমি বেগে ধীরে-ধীরে টেনে কেন্দুয়াপাতা পর্যন্ত আনা হয়। এই সময়ে ট্রেনে এসি বন্ধ ছিল। ফলে প্রচণ্ড গরম হচ্ছিল। দরজা বন্ধ ছিল। ফলে বাচ্চা, বয়স্ক সহ সকলের সমস্যা হচ্ছিল। তারপর ৯টা ৪ মিনিট নাগাদ ট্রেনটি কেন্দুয়াপাতায় এসে দাঁড়িয়ে পড়ে।” সেখান থেকে TV9 বাংলাকে ফোনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বাড়ি পৌঁছনো নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেন শিবাজীবাবু। তাঁর কথায়, “শুনলাম, ট্রেনটি সারাই হচ্ছে। সারাইয়ের পর ট্রেন ছাড়বে। কিন্তু, কখন ছাড়বে জানি না। সকালও হয়ে যেতে পারে। তবে আশার কথা এসি চলছে। ভিতরের পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে।”
যদিও সকাল পর্যন্ত যাত্রীদের অপেক্ষা করতে হয়নি। রাত ১০টার মধ্যেই হাওড়া স্টেশনে এসে পৌঁছয় পুরী-হাওড়া ডাউন বন্দে ভারত এক্সপ্রেস। হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন যাত্রীরা। তবে ট্রেন মাঝপথে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে পড়লেও নিরাপত্তারক্ষী থেকে প্যান্ট্রিকারের কর্মীরা সহযোগিতা করেছিলেন। দুপুরে লাঞ্চের পর সন্ধ্যায় যাত্রীদের স্ন্যাক্স খেতে দেওয়া হয়েছিল বলেও জানান শিবাজীবাবু। তিনি বলেন, “সবাই সুস্থ আছে। কারও কোনও আঘাত লাগেনি। প্রথমে আতঙ্ক হলেও পরেও ঘটনাটি বুঝতে পেরে আর আতঙ্ক ছিল না। সবাই ধৈর্য ধরে রয়েছে। সবার সময় গেল। ভুল সময়ে ভুল জায়গায় ঘটেছে।”
এটা একটা দুর্ঘটনা এবং রেলের পরিষেবায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন শিবাজী পাল সহ এদিনের পুরী-হাওড়া বন্দে ভারতের যাত্রীরা। শিবাজীবাবুর কথায়, “এই পরিস্থিতিতে রেলের তরফে যতটা করার করেছে। পরিষেবায় খুশি। খাবার, জল দেওয়া হয়েছে। কেবল বাথরুমে জল ছিল না। ফলে মহিলাদের সমস্যা হয়েছে। তবে সেটা কিছু করার ছিল না। খুব খারাপ অবস্থা হয়নি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।”