Puri Jagannath Temple: পুরীর জগন্নাথদেবের বিপুল রত্নভাণ্ডার পাহারা দেয় বিষধর সাপ, চাবি-রহস্যের মধ্যেই প্রকাশ্যে গোপন তথ্য

TV9 Bangla Digital | Edited By: Sukla Bhattacharjee

May 02, 2023 | 10:50 PM

রত্নভাণ্ডারের বিপুল রত্নের মাত্র ১০ শতাংশ জগন্নাথদেবকে পরানো হয় বলে জানা গিয়েছে। তাই বিপুল রত্নভাণ্ডারে ঢুকতে শরীরের সমস্ত অলঙ্কার, পোশাক খুলে কেবল গামছা পরে পরিদর্শকদের ঢুকতে হয় বলে জানা যায়।

Puri Jagannath Temple: পুরীর জগন্নাথদেবের বিপুল রত্নভাণ্ডার পাহারা দেয় বিষধর সাপ, চাবি-রহস্যের মধ্যেই প্রকাশ্যে গোপন তথ্য
পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের রত্নভাণ্ডারের রহস্য।

Follow Us

পুরী: হদিশ নেই পুরীর (Puri) জগন্নাথ মন্দিরের  (Jagannath Temple) বিপুল রত্নভাণ্ডারের সিন্দুকের চাবির। গত ৫ বছর ধরেই নিখোঁজ এই চাবি। চাবির খোঁজে অবশ্য ৫ বছর আগেই তদন্ত কমিশন গড়েছিল ওড়িশার (Odisha) নবীন পট্টনায়কের সরকার। কমিশন তদন্ত রিপোর্ট জমাও দিয়েছে। কিন্তু, সেই রিপোর্ট প্রকাশ্যে আনেনি নবীন পট্টনায়কের (Naveen Pattnaik) সরকার। তবে এবার এই বিষয়ে কড়া ওড়িশা হাইকোর্ট। চলতি বছরের জুলাইয়ের মধ্যেই জগন্নাথ মন্দিরের রত্নভাণ্ডারের চাবি বিষয়ক তদন্ত কমিশনের রিপোর্ট প্রকাশ করতে হবে বলে নির্দেশ দিয়েছে ওড়িশা হাইকোর্ট (Odisha High Court)।

এদিকে, ওড়িশা হাইকোর্ট চাবি নিখোঁজের ঘটনায় জবাব তলব করতেই জগন্নাথদেবের রত্নভাণ্ডার সম্পর্কে প্রকাশ্যে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য। জগন্নাথদেবের রত্নভাণ্ডার ২টি ভাগে বিভক্ত- অন্তর্ভাণ্ডার ও বহির্ভাণ্ডার। দুটি ভাণ্ডার মিলিয়ে ৭টি ঘর রয়েছে। জগন্নাথদেব, বলভদ্র ও সুভদ্রাকে যে অলঙ্কার পরানো হয়, সেটা বহির্ভাণ্ডারে থাকে। এখানে সেবায়তরা ঢোকেন। জগন্নাথদেবের মাথার ব্রহ্মজ্যোতি হীরা, বলভদ্রের নীলা ও সুভদ্রার মাথার মাণিক এখানে থাকে। অন্তর্ভাণ্ডারে এর কয়েক গুণ মহামূল্য রত্ন রয়েছে। সেই কুঠুরি ঘুটঘুটে অন্ধকার। সেখানে যে পরিমাণ মণি-মাণিক্য রয়েছে, তার পরিমাণ দক্ষিণ ভারতের একাধিক মন্দিরের সম্পত্তির পরিমাণকে হার মানাবে।

কী পরিমাণ রত্ন রয়েছে জগন্নাথদেবের রত্নভাণ্ডারে?

রাজা গজপতি রামচন্দ্রের ১৯২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে তালিকা অনুসারে, ওই রত্নভাণ্ডারে জগন্নাথ, বলভদ্র ও সুভদ্রার সোনার মুকুট সহ ১৫০টি সোনার অলঙ্কার সহ ৮৩৭টি জিনিস রয়েছে। মোট সোনার ওজন ১৫ কেজির বেশি। সেই তালিকা করার পর প্রায় ১০০ বছর হতে চলেছে। এর মাঝে অলঙ্কারের পরিমাণ যে বাড়বে, সেটাই স্বাভাবিক। রত্নভাণ্ডারে ঢুকতে না পারায় অলঙ্কারের সঠিক পরিমাণ এখন স্পষ্ট নয়। তবে রত্নভাণ্ডারের বিপুল রত্নের মাত্র ১০ শতাংশ জগন্নাথদেবকে পরানো হয় বলে জানা গিয়েছে। তাই বিপুল রত্নভাণ্ডারে ঢুকতে শরীরের সমস্ত অলঙ্কার, পোশাক খুলে কেবল গামছা পরে পরিদর্শকদের ঢুকতে হয় বলে জানা যায়।

শেষবার কবে রত্নভাণ্ডার খোলা হয়েছিল?

জানা গিয়েছে, ১৯৭৮ সালে শেষবার পুরীর জগন্নাথ দেবের রত্নভাণ্ডারের খতিয়ান নেওয়া হয়। সেই সময় রত্নভাণ্ডার খোলা হয়েছিল। তারপর ১৯৮৪ সালে জগন্নাথদেবের মাথার রত্নচিতা ভেঙে যায়। সেই সময় আবার রত্নভাণ্ডার খুলে সেখান থেকে কিছু সোনা নেওয়া হয়েছিল। তারপর আর রত্নভাণ্ডার খোলা হয়নি। এরপর ২০১৮ সালে রত্নভাণ্ডারের মেঝে, ছাদ, দেওয়ালের অবস্থা কেমন আছে জানতে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া-কে দরজা খোলার নির্দেশ দেয় ওড়িশা হাইকোর্ট। কিন্তু, আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া, ওড়িশা সরকার ও জগন্নাথ মন্দিরের প্রতিনিধিরা সেই রত্নভাণ্ডারে যাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই ফিরে আসেন। আসলে তাঁরা ভিতরে ঢুকতেই পারেননি। তখনই রত্নভাণ্ডারের চাবি হারিয়ে যাওয়ার খবরটি প্রকাশ্যে আসে।

কার কাছে ছিল জগন্নাথদেবের রত্নভাণ্ডারের সিন্দুকের চাবি?

জানা গিয়েছে, পুরীর জগন্নাথদেবের রত্নভাণ্ডার খোলার জন্য মোট ৩টি চাবি লাগে। ১টি চাবি থাকে গজপতি রাজার কাছে, ১টি চাবি থাকে মন্দিরের সেবায়ত ভাণ্ডার মেকাপ-এর দায়িত্বে। আরেকটি চাবি থাকে পুরীর কালেক্টর দায়িত্বে। এই তৃতীয় চাবিটি অমিল।

রত্নভাণ্ডারের চাবি নিখোঁজ প্রসঙ্গে পুরীর কালেক্টর জানিয়েছেন, রত্নভাণ্ডার শেষবার খোলার পর চাবি জমা পড়ার তথ্য নেই। তবে ২০১৮ সালে একটি নকল চাবি মিলেছিল। সেই চাবি কোথা থেকে এল! প্রশ্নের জবাব নেই কারও কাছে। এরপরই বিপুল রত্নভাণ্ডারের আসল চাবির খোঁজ পেতে তদন্তের নির্দেশ দেন ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক। হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি রঘুবীর দাসের নেতৃত্বে তদন্ত কমিশন গঠন করেন তিনি। ২০১৮ সালেরই নভেম্বরে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয় কমিশন। কিন্তু, ৪ বছর পরেও সেই রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসেনি।

কী আছে তদন্ত রিপোর্টে? চাবির সন্ধান না পেলে জগন্নাথ মন্দিরের রত্নভাণ্ডার কি বন্ধ থাকবে? — এই সমস্ত প্রশ্নের জবাব নেই কারও কাছে। তবে চাবি হারিয়ে গেলেও প্রভু জগন্নাথের রত্নভাণ্ডারের পাহারা দিচ্ছে একাধিক বিষধর সাপ। শুনতে গল্পের মতো লাগলেও ২০১৮ সালে শেষবার যখন রত্নভাণ্ডার খুলতে গিয়েছিলেন সরকারি প্রতিনিধি ও মন্দিরের সেবায়তরা, তখন তাঁরা চাক্ষুষ করেছিলেন সেই ঘটনা। ওই রত্নভাণ্ডারে পৌঁছনোর জন্য সরকারি প্রতিনিধিদের সঙ্গে ছিলেন সাপের ওঝাও।

এদিকে, রত্নভাণ্ডারের ঘরের দেওয়ালে, ছাদে চিড় ধরেছে। দ্রুত সংস্কার জরুরি বলে মনে করছে আর্কিওলজি সার্ভে অফ ইন্ডিয়া। ফলে কী ভাবে সেই সংস্কার হবে, সেটাই এখন প্রশ্ন! নবীন সরকারই তদন্ত কমিশনের রিপোর্ট গোপন করছে এবং সেটি প্রকাশ্যে আনলে চাবি-রহস্যের জট খুলবে বলে দাবি বিরোধীদের। কিন্তু, কেন রাজ্য সরকার রত্নভাণ্ডারের চাবি বিষয়ক কমিশনের রিপোর্ট গোপন করবেন! রিপোর্টে কী রয়েছে! এমন প্রশ্ন উঠেছে। যদিও সরকারের তরফে কোনও জবাব মেলেনি। বরং জগন্নাথদেবের রত্নভাণ্ডার নিয়ে রাজনীতি না করার বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক। তবে সম্প্রতি রঘুবীর দাসের তদন্ত কমিশনের রিপোর্ট কেন প্রকাশ্যে আসেনি, তা নিয়ে ওড়িশা হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা হয়। সেই মামলার ভিত্তিতেই এবার এই বিষয়ে নবীন পট্টনায়ক সরকারের জবাব তলব করেছে ওড়িশা হাইকোর্ট। আগামী ১০ জুলাইয়ের মধ্যে জবাব দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে ২০১৮ সালে রত্নভাণ্ডারের নকল চাবি কী ভাবে মিলল, তারও জবাব তলব করেছে হাইকোর্ট। এবার পট্টনায়ক সরকার কী জবাব দেয়, সেটাই দেখার!

Next Article