নয়া দিল্লি: বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর), রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে ইন্ডিয়া গেট পর্যন্ত রাস্তাটির, অর্থাৎ, নয়াদিল্লির আইকনিক ‘রাজপথের’ নাম বদলে হল কর্তব্য পথ। ৭৫তম স্বাধীনতা দিবসে প্রধানমন্ত্রী মোদী ঔপনিবেশিক মানসিকতার সঙ্গে সম্পর্কিত সমস্ত প্রতীক বিলুপ্তির উপর জোর দিয়েছিলেন। সেই আহ্বানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই এই নাম বদল। এদিন কর্তব্যপথের উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ঔপনিবেশিকতার প্রতীক ‘রাজপথ’ এখন ইতিহাস”। এই অবসরে আসুন জেনে নেওয়া যাক, ‘রাজপথে’র ইতিহাস। যা প্রথমে ছিল কংস ওয়ে, সেখান থেকে হয়েছিল রাজপথ, আর আজকের পর কর্তব্য পথ নামে পরিচিত হবে।
১৯১১ সালে ব্রিটিশ সরকার ব্রিটিশ ভারতীয় সাম্রাজ্যের রাজধানী কলকাতা থেকে দিল্লিতে স্থানান্তরিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। ওই বছরই নয়াদিল্লি জেলায় নতুন শহর নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছিল। এর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল ব্রিটিশ আর্কিটেক্ট স্যার এডউইন লুটিয়েন্সকে। লুটিয়েন্স একটি ‘আনুষ্ঠানিক অক্ষ’কে কেন্দ্র করে একটি আধুনিক সাম্রাজ্যবাদী শহরের নকশা তৈরি করেছিলেন। সেই অক্ষটি পরবর্তীকালে কিংস ওয়ে বা রাজপথ নামে পরিচিত হয়।
লুটিয়েন্সের চেয়েছিলেন এটি এমনভাবে বানাতে যাতে ভাইসরয়ের প্রাসাদ থেকে গোয়া দিল্লি শহরের একটি বিস্তৃত দৃশ্য নজরে আসে। ফলে রায়সিনা হিলস থেকে রাজপথ এবং ইন্ডিয়া গেট হয়ে দৃষ্টিপথ প্রায় বাধাহীন, শুধুমাত্র জাতীয় স্টেডিয়ামে ধাক্কা খায়। রাজপথের আশেপাশের বেশিরভাগ ভবনি লুটিয়েন্স এবং শহর প্রকল্পের দ্বিতীয় স্থপতি স্যার হারবার্ট বেকার নকশা করেছিলেন।
১৯১১ সালে ব্রিটিশ রাজা পঞ্চম জর্জ দিল্লি সফর করেছিলেন। তিনিই আনুষ্ঠানিকভাবে রাজধানী স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছিলেন। তাঁর সম্মানেই রাস্তাটির নামকরণ করা হয়েছিল কিংসওয়ে। এই নামকরণ করা হয়েচিল লন্ডনের কিংসওয়ের অনুকরণে। ১৯০৫ সালে লন্ডনের এই রাস্তাটি তৈরি করা হয়েছিল রাজা পঞ্চম জর্জের বাবা, রাজা সপ্তম এডওয়ার্ডের সম্মানে।
স্বাধীনতার পর রাস্তাটির ইংরেজি নামকরণের জায়গায় এর হিন্দি নামকরণ করে, ‘রাজপথ’ দেওয়া হয়। তবে একে নামকরণ বলার থেকে নিছক অনুবাদকরণ বলাই ভাল। কারণ, হিন্দি নামকরণ করার পরও, কিংসওয়ের অর্থ বদলায়নি। ‘রাজপথ’ মানেও ‘রাজা চলার পথ’। ভাইসরয়ের প্রাসাদটি হয় ভারতের রাষ্ট্রপতির সরকারি বাসভবন, রাষ্ট্রপতি ভবন। এছাড়া, রাজপথের দুইপাশে নর্থ ব্লক এবং সাউথ ব্লক রয়েছে, যা ভারতের কেন্দ্রীয় সচিবালয়। নর্থ ব্লকে অর্থ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কার্যালয় রয়েছে। সাউথ ব্লকে রয়েছে বিদেশ ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মতো অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কার্যালয় ও সচিবালয় ভবনও।
এর পাশাপাশি রয়েছে বিজয় চক। এই প্রশস্ত প্লাজাতেই প্রতি বছর ২৯ জানুয়ারি ‘বিটিং দ্য রিট্রিট’ অনুষ্ঠিত হয়। এই অনুষ্ঠান প্রজাতন্ত্র দিবস উদযাপনের সমাপ্তি চিহ্নিত করে। ভারতের রাষ্ট্রপতির সামনে সেনা, নৌবাহিনী এবং বিমান বাহিনীর সামরিক ব্যান্ডগুলি বিভিন্ন সঙ্গীত পরিবেশন করে। এছাড়া রয়েছে ইন্ডিয়া গেট। এটি প্রথম বিশ্বযুদ্ধ এবং দ্বিতীয় অ্যাংলো-আফগান যুদ্ধে মৃত সৈনিকদের সম্মানে তৈরি করা হয়েছিল। পরবর্তীকালে যেসমস্ত অজ্ঞাত সৈনিক ভারতের জন্য বলিদান দিয়েছেন, তাঁদের স্মারক হিসেবে উৎসর্গ করা হয়। এছাড়া, স্বাধীনতার পর থেকে, ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর হয়ে সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ স্বীকার করা সৈনিকদের স্মরণে রয়েছে ন্যাশনাল ওয়ার মেমোরিয়াল।