মুম্বই: শুক্রবারই (২৭ মে), মাদক মামলায় শাহরুখ খানের ছেলে আরিয়ান খান-কে ক্লিনচিট দিয়েছে নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরো, বা এনসিবি। এনসিবির পেশ করা ৬,০০০ পৃষ্ঠার চার্জশিটে মোট ১৪ জন অভিযুক্তের নাম রয়েছে। তার মধ্যে নেই আরিয়ানের নাম। এদিকে সমীর ওয়াংখেড়ে, নারকোটিক্স ব্যুরোর যে অফিসার প্রাথমিকভাবে এই মাদক মামলার তদন্ত করেছিলেন, খুব শীঘ্রই তাঁর বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে। তাঁর বিরুদ্ধে জাত সংক্রান্ত ভুয়ো শংসাপত্র দাখিল করা এবং এই মাদক মামলায় ‘তদন্তে গাফিলতির’ অভিযোগ রয়েছে। এক সূত্রের দাবি, ‘কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই উপযুক্ত কর্তৃপক্ষকে সমীর ওয়াংখেড়ের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জাতের ভুয়ো শংসাপত্রের জন্য তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
গত বছর, অক্টোবর মাসের গোড়ায় মুম্বইয়ে প্রমোদতরী এনসিবির মাদক বিরোধী অভিযানর সময় এনসিবি-র মুম্বই জোনের প্রধান ছিলেন সমীর ওয়াংখেড়ে। প্রাথমিকভাবে তিনিই এই মামলার তদন্ত পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে জাত সংক্রান্ত ভুয়ো শংসাপত্র দাখিল করার অভিযোগ প্রথম তুলছিলেন মহারাষ্ট্রের মন্ত্রী নবাব মালিক। এই এনসিপি নেতা অভিযোগ করেছিলেন, এনসিবি-র অফিসারটি ওই জাল নথি ব্যবহার করেই সরকারি চাকরি পেয়েছিলেন। অক্টোবর শেষ হতে না হতেই এই মামলা থেকে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল এবং এনসিবির মধ্য জোনে বদলি করে দেওয়া হয়েছিল।
এদিন আরিয়ান খান ক্লিনচিট পাওয়ার পর, নবাব মালিক টুইট করে বলেছেন, ‘আরিয়ান খান এবং অন্য ৫ জন ক্লিন চিট পেয়েছেন। এনসিবি কি সমীর ওয়াংখেড়ে, তার দল এবং ব্যক্তিগত বাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে? নাকি অপরাধীদের রক্ষা করবে?’। গত নভেম্বর মাসে অবশ্য, ‘ন্যাশনাল কমিশন ফর শিডিউলড কাস্ট’ বা তফসিলি জাতির জাতীয় পরিষদে সমীর ওয়াংখেড়ে তাঁর দলিত পরিচয় প্রমাণের জন্য আরও একটি নথি দাখিল করেছিলেন। তিনি দাবি করেছিলেন, সেটিই তাঁর জাত পরিচায়ক আসল নথি।
জাত সংক্রান্ত নথি নিয়ে এই বিতর্কের পাশাপাশি, মাদক মামলার তদন্তে সমীর ওয়াংখেড়ের বিরুদ্ধে বেশ কিছু অনিয়ম করার অভিযোগও উঠেছে। সূত্রের খবর, তদন্তের প্রয়োজনে যেসব অনুসন্ধান চালানো হয়েছে, তার কোনও ভিডিওগ্রাফি করা হয়নি। আরিয়ান খানের ফোনে চ্যাটের বিষয়বস্তু বিশ্লেষণেও ত্রুটি ছিল। কোনওভাবেই তা আরিয়ানকে এই মামলার সঙ্গে যুক্ত করে না। মাদক সেবন করা হয়েছে, তা প্রমাণ করার জন্য কোনও মেডিকেল পরীক্ষা পর্যন্ত করা হয়নি।
সূত্রের খবর, মাদক মামলার জন্য সাক্ষী জোগার করার ক্ষেত্রেও ব্যাপক দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়া হয়েছিল। মাদক মামলার সাক্ষীদের একজন, বিশেষ তদন্তকারী দলকে বলেছেন, সমীর ওয়াংখেড়ের দল তাঁকে একটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করেছিল। ওই সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, আরও দুই সাক্ষী তদন্তকারী দলকে বলেছেন, এনসিবির অভিযানের সময় তাঁরা প্রমোদতরীতে ছিলেনই না। সমীর ওয়াংখেড়ে এবং তাঁর দলের বিরুদ্ধে আরও একটি গুরুতর অভিযোগ, সমস্ত অভিযুক্তকে একত্রিত করে সকলের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ আনা। এমনকি, আরিয়ান খানের সঙ্গে কোনও মাদক না পাওয়া গেলেও, তাঁকেও একই অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। এই সকল ত্রুটি ধরার পর এবার কেন্দ্র তাঁর বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়, সেটাই দেখার।