নয়া দিল্লি: একসময়ে নীতীশ কুমারের ‘ডানা ছাঁটতে’ সাহায্য করেছিল যে দল, সেই দলই এখন মাথা ব্যাথা হয়ে দাঁড়িয়েছে বিজেপির (BJP)। কাকা-ভাইপোর লড়াইয়ের প্রভাব পড়বে ভোটে, এমনটাই আশঙ্কা করছে বিজেপি। প্রয়াত প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাম বিলাস পাসওয়ানের (Ram Vilas Paswan) দল লোক জনশক্তি পার্টি (Lok Janshakti Party) নিয়েই চাপে পড়েছে বিজেপি। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনকে (Lok Sabha Election 2024) মাথায় রেখে একদিকে যেখানে বিজেপি বিরোধী ২৪টি দল বেঙ্গালুরুতে জোট নিয়ে আলোচনায় বসছে, সেখানেই মঙ্গলবার বিজেপিও শক্তি প্রদর্শনের জন্য এনডিএ জোটের ৩০টি দলকে নিয়ে বৈঠকে বসতে চলেছে। কিন্তু লোক জনশক্তি পার্টির প্রধান চিরাগ পাসওয়ান (Chirag Paswan) ও তাঁর কাকা পশুপতিনাথ পরসের (Pashupati Paras) বিরোধের কারণে লোকসভা নির্বাচনে পাসওয়ান ভোটে ভাগ বসতে পারে বলে আশঙ্কা করছে বিজেপি।
সূত্রের খবর, বিজেপি চায় বিহারের এই দুই নেতা এক ছাতার তলায় আসুক। লোক জনশক্তি দলের কাকা ও ভাইপোর শিবির একজোট হলে পাসওয়ান ভোটে কাটাকুটি হবে না। অন্তত এমনটাই ভাবনা বিজেপির। সেই লক্ষ্যেই দিন দুয়েক আগে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই দুই শিবিরের সঙ্গেই দেখা করেন এবং তাদের একজোট হওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু সেই প্রস্তাব মানতে রাজি নয় কোনও শিবিরই।
রামবিলাস পাসওয়ানের ভাই পশুপতিনাথ পরস, যিনি বর্তমানে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন, তিনি নিত্য়ানন্দ রাইয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, “নিত্য়ানন্দ রাইয়ের সঙ্গে কথা হয়েছে। ওঁ (নিত্যানন্দ রাই) বলেছেন কাকা-ভাইপো যেন এক হয়ে যাই। কিন্তু আমি বলেছি যে এটা সম্ভব নয়। যখন কোনও সম্পর্ক খারাপ হয়ে যায়, তখন যত চেষ্টাই করা হোক না কেন, সেই সম্পর্ক জোড়া লাগে না। ঠিক যেমন দুধ কেটে গেলে, তা থেকে হাজারো চেষ্টা করলেও মাখন তৈরি করা যায় না।”
আগামিকাল, মঙ্গলবার বিজেপির এনডিএ জোটের বৈঠকে আমন্ত্রণ পেয়েছেন চিরাগ পাসওয়ান। সম্প্রতিই তিনি বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গেও দেখা করেন। ফলে নতুন করে এনডিএ জোটে চিরাগ পাসওয়ানের দল লোক জনশক্তি পার্টির সামিল হওয়ার জল্পনা শুরু হয়েছে। কিন্তু কাকা-ভাইপোর বিরোধই যদি না মেটে, তবে জোট বাঁধলেও ভাগ বসবে ভোট ব্যাঙ্কে।
যদিও পশুপতি পরসের শিবিরের তরফে জানানো হয়েছে, এনডিএ-তে চিরাগ পাসওয়ান সামিল হলে তারা বিরোধিতা করবেন না, কিন্তু তারা খোলা হাতে চিরাগকে স্বাগতও জানাবেন না। ভাইপোর এনডিএ শিবিরে যোগ প্রসঙ্গে কাকা পশুপতি বলেন, “চিরাগ পাসওয়ান এনডিএ-র অংশ নয়। ২০২০ সালের বিধানসভা নির্বাচন থেকেই ওঁ একা। এটা নির্বাচনের বছর। সমস্ত দলই আরও সদস্য যোগ করতে চায়…তাই চিরাগ পাসওয়ান ও জিতনরাম মাঝিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। বৈঠকে কী সিদ্ধান্ত হবে, তার উপরই পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ভর করছে।”
বিহার রাজনীতিতে লালু প্রসাদ, নীতীশ কুমারের মতো লোক জনশক্তি পার্টির নেতা রামবিলাস পাসওয়ানও বরাবরই পরিবারতন্ত্রে বিশ্বাসী ছিলেন। সেই কারণেই বলিউডে আত্মপ্রকাশের পর চিরাগ মুখ থুবড়ে পড়ায়, ছেলেকে হাত ধরে রাজনীতিতে নিয়ে এসেছিলেন রামবিলাস। ২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে জয়ীও হন চিরাগ। বাবা পাসোয়ানের স্বপ্ন ছিল চিরাগকে বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর পদে বসানোর। তার জন্য চিরাগের হাতে লোক জনশক্তি পার্টির দায়িত্বভার তুলে দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত ভালভাবে নেননি রামবিলাস পাসওয়ানের ছোট ভাই পশুপতি কুমার পরস।
তখন থেকেই কাকা-ভাইপোর সম্পর্ক আদায়-কাঁচকলায়। সম্পর্কে তিক্ততা বাড়ে ২০২০ সালের বিহার নির্বাচনের ঠিক আগে, রামবিলাস পাসওয়ানের মৃত্যুর পর। দলবিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগ এনে কাকা পশুপতি পরসকে দল থেকে বহিষ্কারের হুমকি দিয়েছিলেন চিরাগ পাসওয়ান। তখন পশুপতিও সাফ জানিয়েছিলেন, চিরাগের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করছেন। চিরাগের কাছে তাঁর কাকা মৃত।
এরপরে বিজেপি শিবিরে হাত মিলিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হন পশুপতি পরস। বর্তমানে হাজিপুর আসন নিয়ে কাকা-ভাইপোর লড়াই চলছে। রামবিলাস পাসওয়ানের গড় হিসাবে পরিচিত এই আসনে ২০১৯ সালে লড়েছিলেন পশুপতি পরস। কিন্তু এলজেপিত্ ফাটল ধরার পর চিরাগ এই আসনে দাবি জানিয়েছেন, কিন্তু ভাইপোকে আসন ছাড়তে রাজি নন পশুপতি।