নয়াদিল্লি: অশান্ত বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী পদে পদত্যাগের পর দেশ ছেড়েছেন শেখ হাসিনা। তবে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে যে উত্তেজনা ছড়িয়েছিল, তা এখনও পুরোপুরি কমেনি। এই পরিস্থিতিতে পড়শি দেশে হিন্দু ও অন্য সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার আবেদন জানাল বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠকে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের আন্তর্জাতিক সভাপতি তথা সিনিয়র আইনজীবী অলোক কুমার বলেন, “আমাদের প্রতিবেশী বাংলাদেশ এক অদ্ভুত অনিশ্চয়তা, হিংসা ও নৈরাজ্যের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের পর অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। এই সংকটের সময়ে, ভারত বাংলাদেশের সমগ্র সমাজের বন্ধু হিসেবে দৃঢ়ভাবে পাশে রয়েছে।”
তিনি বলেন, “সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে হিন্দু, শিখ ও অন্য সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় স্থান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং ঘরবাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গত রাত পর্যন্ত শুধুমাত্র পঞ্চগড় জেলায় ২২টি বাড়ি, ঝিনাইদহে ২০টি বাড়ি এবং যশোরে ২২টি দোকান মৌলবাদীদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে এবং অনেক জেলায় শ্মশানও ভাঙচুর করা হয়েছে। মন্দির ও গুরুদ্বারও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাংলাদেশে এমন কোনও জেলা নেই, যা তাদের হিংসা ও সন্ত্রাসের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়নি।”
বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সভাপতি আরও বলেন, “বাংলাদেশে হিন্দুদের ঘর, বাড়ি, দোকান, অফিস, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, মহিলা, শিশু এমনকি তাদের মন্দির, গুরুদ্বার এবং অন্য আস্থা ও বিশ্বাসের কেন্দ্রগুলি নিরাপদ নয়। বলা যায় সেখানে নির্যাতিত সংখ্যালঘুদের অবস্থা খারাপ থেকে খারাপের দিকে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতি অত্যন্ত চিন্তাজনক।” তাঁর কথায়, এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও মানবাধিকারের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ করা বিশ্বের সমগ্র সম্প্রদায়ের দায়িত্ব।
অলোক কুমার বলেন, ভারত অবশ্যই এই পরিস্থিতিতে চোখ বন্ধ করে থাকতে পারে না। ভারত ঐতিহ্যগতভাবে সারা বিশ্বের নিপীড়িত সমাজকে সাহায্য করেছে। বিশ্ব হিন্দু পরিষদ বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার জন্য সম্ভাব্য সব পদক্ষেপ করতে ভারত সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছে।
ভিএইচপি সভাপতি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, এই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে ৪,০৯৬ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তের ওপার থেকে অনুপ্রবেশের বড় চেষ্টা চালানো হতে পারে। এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। তাই আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীর সর্বদা সীমান্তে কঠোর নজরদারি রাখা দরকার এবং অনুপ্রবেশের চেষ্টা ব্যর্থ করতে হবে।
অলোক কুমার বলেন, “আমাদের আশা বাংলাদেশে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষ সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হোক। সেখানকার সমাজ যেন মানবাধিকার পায় এবং বাংলাদেশের অব্যাহত অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে কোনও বাধা না থাকে। ভারতীয় সমাজ ও সরকার এ ব্যাপারে সবসময় বাংলাদেশের পাশে থাকবে।”