টান ষষ্ঠদিন সুপ্রিম কোর্টে চলছে সমকামী বিবাহ মামলৈার শুনানি
নয়া দিল্লি: সমকামী বিবাহের আইনী স্বীকৃতি চেয়ে আবেদনের শুনানি চলছে সুপ্রিম কোর্টে। এই বিষয়ে অন্তত ১৫টি আবেদন শুনছে প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন ৫ বিচারপতির এক সাংবিধানিক বেঞ্চ। গত ছয়দিন ধরে টানা এই মামলার শুনানি চলছে। বুধবার শুনানির পঞ্চমদিনে, শীর্ষ আদালতকে সমকামী বিবাহের আইনী অনুমোদনের আবেদনের বিষয়টি সংসদের বিবেচনার জন্য ছেড়ে দিতে অনুরোধ করেছে কেন্দ্র। কেন্দ্রের পক্ষে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা জানান, মামলাটি একটি ‘অত্যন্ত জটিল বিষয়ের’ এবং এর ‘গভীর সামাজিক প্রভাব’ রয়েছে। বৃহস্পতিবারও এই মামলার শুনানি জারি রয়েছে। এদিন আদালতের সামনে তার যুক্তি পেশ করছে কেন্দ্র। সমকামী বিবাহ মামলার ষষ্ঠ দিনের শুনানির সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের আপডেটপেতে চোখ রাখুন এখানে –
- বৈবাহিক অবস্থার আইনি স্বীকৃতি ছাড়াই সমলিঙ্গের দম্পতিদের কী কী সামাজিক সুবিধা দেওয়া যায়, কেন্দ্রের কাছে জানতে চেয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। ৩ মে এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে। তার মধ্যে এই বিষয়ে কেন্দ্রকে প্রতিক্রিয়া জানাতে বলেছে।
- সমকামী সম্পর্কে কে মা হবেন, সেই প্রশ্নও তোলে তুষার মেহতা। তাঁর মতে, বিবাহ বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে একজন মাকে সন্তানের হেফাজত দেওয়া হয়। সমকামী সম্পর্কের ক্ষেত্রে কাকে মা হিসেবে বিবেচনা করা হবে তা নির্ধারণ করা প্রয়োজন।
- সমকামী বিয়েতে স্ত্রী কে হবেন? একটি লেসবিয়ান বিয়েতে স্ত্রী কে হবেন যাকে ভরণপোষণের অর্থ পাওয়ার অধিকার দেওয়া হবে? স্ত্রী তাঁর নিজের রক্ষণাবেক্ষণের কোনও উপায় নেই প্রতিষ্ঠা করতে পারলে স্বামীকে রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা করতে হয়। সমকামী বিয়েতে স্ত্রী কে হবে?” প্রধান বিচারপতি জবাব দেন, “যদি সমকামী বিবাহের ক্ষেত্রে আবেদন করা হয়, তবে স্বামীও ভরণপোষণ দাবি করতে পারবেন৷ কিন্তু, বিপরীত লিঙ্গের বিবাহের ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য হবে না।”
- ভারতের প্রধান বিচারপতি জানান, যদি কোনও বিপরীত লিঙ্গের দম্পতির একজন সন্তানের জন্ম দিতে অক্ষম হন, তাহলে তাদের বিয়ে বাতিল হয়ে যায় না। অতএব, কেন্দ্র এর আগে সমকামী বিবাহের বিরোধিতা করে যে প্রজনন সংক্রান্ত যুক্তি দিয়েছে তা প্রাসঙ্গিক নায়।
- তুষার মেহতা যুক্তি দিয়েছেন, “পাঁচ বছর পরের পরিস্থিতি কল্পনা করুন। ধরুন, আমি নিষিদ্ধ সম্পর্কের একজনের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছি। ভাই-বোনে সম্পর্ক গোটা বিশ্বেই অস্বাভাবিক নয়, কিন্তু এটি নিষিদ্ধ। কেউ বোনের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে দাবি করতে পারে যে সে ব্যক্তিগত পরিসরে যা করছে তা তার করার অধিকার আছে। এটাকে কীভাবে নিষিদ্ধ করা যায়?” প্রধান বিচারপতি অবশ্য এই তুলনাকে “সুদূরপ্রসারী কল্পনা” বলেছেন। তিনি জানান “বিবাহের সকল ক্ষেত্রে যৌন চাহিদা এবং ব্যক্তি স্বাধীনতা খাটে না। যৌন চাহিদা এত শক্তিশালী যে ভাই-বোনের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের অনুমতি দেওয়া হবে, এই যুক্তি দেওয়া যায় না।”
- তুষার মেহতা প্রশ্ন করেন, “আবেদনকারীর মৌলিক যুক্তি কী, যৌন পছন্দ বেছে নেওয়ার অধিকার?” জবাবে পর্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় বলেন, “না, তারা বলছে যৌন পছন্দ বেছে নেওয়ার অধিকার আমাদের দেওয়া হয়েছে। এটা পছন্দের বিষয় নয়, একটি সহজাত বৈশিষ্ট্য।”
- সলিসিটর জেনারেল বলেন, “আবেদনকারীরা তাদের প্রয়োজন অনুসারে বিশেষ বিবাহ আইন পুনরায় লিখতে, পুনর্গঠন করতে চান। একটি আইন এমন একটি আইনে পরিণত হবে যা সমকামীদের ক্ষেত্রে একভাবে প্রযোজ্য হবে এবং বিপরীত লিঙ্গের দম্পতিদের ক্ষেত্রে অন্যভাবে প্রযোজ্য হবে।”
- সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা সুপ্রিম কোর্টকে জানিয়েছেন, ‘লিঙ্গহীন মানুষ আছে, মেজাজের পরিবর্তন অনুসারে লিঙ্গ বদলে যায় এমনও ব্যক্তি আছেন, আইনে তাদের একসঙ্গে মেলানো যাবে না।