লাদাখ : ২০২০ সালের ১৫ জুন। ভারত-চিন সীমান্তে গালোয়ান সংঘর্ষ। স্মৃতি এখনও দগদগে। রক্ত ঝড়েছিল ২০ জন ভারতীয় সেনার। চিনা ফৌজের তরফে প্রাণহানির সংখ্যাটা যদিও বেশি ছিল। তবে চিনের তরফে সেই সংখ্যা স্বীকার করা হয়নি। কিন্তু এই সংঘর্ষের পরও মেলেনি কোনও সমাধান। সেনা পর্যায়ে একাধিক বৈঠক হলেও স্থায়ী সমাধান মেলেনি। ভারতের বিভিন্ন মহল থেকে বিভিন্ন সময়ে দাবি করা হয়েছে যে, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় বিবাদ মেটাতে নারাজ চিন। এই আবহেই ফের সামনে এল নতুন বিতর্ক। উপগ্রহ চিত্রে ধরা পড়েছে, প্যাংগং হ্রদের উত্তর ও দক্ষিণ তীরকে সংযোগ করে নতুন পরিকাঠামো তৈরি করছে চিন। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য, গত মাসেই পুরোনো সেতু সম্পন্ন করেছে।
উপগ্রহ চিত্রে ধরা পড়েছে, এই পরিকাঠামো আগের সেতুর তুলনায় বেশি প্রশস্ত। এই নির্মাণের কাজ পুরোনো সেতুর সঙ্গে পাশাপাশি চলছিল বলে মনে করা হচ্ছে। এবং তা এই বছরের মার্চের শেষের ভাগ থেকে এপ্রিলের শুরুর দিকেই কাজ শুরু হয়েছে বলে দেখা যাচ্ছে। পুরোনো সেতুর গা ঘেঁষেই এই নতুন নির্মাণ তৈরি হচ্ছে বলে উপগ্রহ চিত্রে দেখা গিয়েছে। অবস্থানে চিনা সৈনিকদের অভিযানের জন্য এই নতুন নির্মাণ কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এই নতুন সেতুটি সম্ভবত নির্মীয়মাণ নতুন রাস্তার সঙ্গে সংযুক্ত হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অগাস্ট ২০২০ এর মতো পরিস্থিতি এড়ানোর জন্যই চিনের তরফে এই সেতু নির্মাণের চেষ্টা করা হয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী গতবার চিনের ধীর গতিতে পদক্ষেপ করাকে কাজে লাগিয়ে আশ্চর্যজনক অভিযান চালায়। এই অভিযানের ফলে কৈলাশের একটি জায়গার নিয়ন্ত্রণ নেয় ভারতীয় সেনা। ভারতীয় সেনা আক্রমণ করলে তাড়াতাড়ি পাত্তারি গোটানোর জন্যই এই নতুন সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এই সেতু তৈরি হলে চিনা অস্ত্রশস্ত্র তাদের স্থায়ী জায়গা রুতগে সরিয়ে নিয়ে যেতে কম সময় লাগবে চিনা সেনার। এবার এই সেতুর প্রশস্ততায় বোঝা যাচ্ছে, ভারী মেশিন ও মিলিটারি যান প্যাংগং হ্রদের শেষ প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে নিয়ে যাওয়ার জন্যই এই সেতু নির্মাণ।
প্রসঙ্গত, পূর্ব লাদাখের কাছে চিনা নির্মাণকে আগেই ‘বেআইনি’ বলে উল্লেখ করেছে ভারত সরকার। বিদেশ মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী ভি মুরলীধরন সংসদে এই নির্মাণ সম্পর্কে বলেছিলেন, “প্যাংগং হ্রদে চিনের বানানো সেতুর উপর নজর রেখেছে সরকার। ১৯৬২ সাল থেকে বেআইনিভাবে চিনের অধীনে থাকা এলাকায় এই সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। ভারত সরকার এই বেআইনিভাবে দখলদারি কোনওদিন মেনে নেয়নি।” প্রসঙ্গত, ভারত-চিন সীমান্ত বিবাদ নিয়ে দু’দেশের তরফেই একাধিকবার আলোচনা হয়েছে। সামরিক স্তর থেকে শুরু কূটনৈতিক স্তর পর্যন্তও বৈঠক হয়েছে। কিন্তু কোনও স্থায়ী সমাধান মেলেনি। এবং প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার কাছে বিভিন্ন জায়গায় চিন কতৃক নতুন নির্মাণ আটকাতে পারেনি। উপগ্রহ চিত্র থেকে ধরা পড়েছে লাদাখ থেকে সিকিম সীমান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত সীমানার কাছে বিভিন্ন জায়গায় কাঠামো নেটওয়ার্ক তৈরি করছে চিন।এদিকে উপগ্রহ চিত্রে চিনের নতুন নির্মাণের ছবি ধরা পড়ার মধ্যেই ভারত ও চিনের বিদেশ মন্ত্রকের দেখা হতে পারে। চিনের বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিনের কথায় আগামী ১৯ মে ভারত-চিন সহ ব্রিকস দেশের বিদেশ মন্ত্রীরা সাক্ষাৎ করবেন। পরের মাসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও চিনের প্রেসিডেন্ট জ়ি জিনপিং ১৩ তম ব্রিকস সামিটে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করবেন বলে জানা যাচ্ছে।