নয়া দিল্লি: যে দেশের নীতিই আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসবাদ, যারা সন্ত্রাসবাদীদের আশ্রয় দেয়, তাদের সমালোচনা করার ক্ষেত্রে সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশনের দ্বিধা থাকা উচিত নয়। চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফকে শুনিয়েই, মঙ্গলবার (৪ জুন) এসসিও গোষ্ঠীর শীর্ষ সম্মেলনে এই মন্তব্য করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। যুব সমাজকে উগ্রপন্থার পাঠ দেওয়া বন্ধ করার প্রয়োজনীয়তার উপরও জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রসঙ্গত, সপ্তাহ দুয়েক আগেই আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর, আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসবাদ এবং সন্ত্রাসবাদীদের আশ্রয় দেওয়ার বিরুদ্ধে যৌথ বিবৃতি দিয়েছিলেন মোদী ও বাইডেন। এর সমালোচনা করেছিল পাকিস্তান।
এদিন এসসিও শীর্ষ সম্মেলনে ভাষণ দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, “এসসিও আমদের কাছে একটি বড় পরিবারের মতো। আমাদের মতে, এসসিও গোষ্ঠীর স্তম্ভ হল – নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সংযোগ, ঐক্য, সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতা এবং পরিবেশগত সুরক্ষা।” তিনি আরও বলেন, “এসসিও গোষ্ঠীতে সহযোগিতার পাঁচটি স্তম্ভ স্থাপন করেছে ভারত। এই পাঁচ স্তম্ভ হল – স্টার্টআপ এবং উদ্ভাবন, ঐতিহ্যগত ওষুধপত্র, যুবদের ক্ষমতায়ন, ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি এবং বৌদ্ধ ঐতিহ্য।”
প্রধানমন্ত্রী মোদী আরও দাবি করেন, ইউরেশিয়া অঞ্চলে শান্তি, সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য এসসিও একটি মূল প্লাটফর্ম হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।তিনি বলেন, “বিগত দুই দশকে সমগ্র ইউরেশিয়া অঞ্চলে, এসসিও শান্তি, সমৃদ্ধি এবং উন্নয়নের এক গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে। এই অঞ্চলের সঙ্গে ভারতের হাজার হাজার বছরের পুরনো সাংস্কৃতিক সম্পর্ক রয়েছে। প্রতিটি অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে ভারতীয়দের মানবিক যোগও রয়েছে। অর্থাৎ, আমরা সবকটি দেশ একই ঐতিহ্য বহন করে চলেছি।” এবারের শীর্ষ সম্মেলনে নতুন সদস্য হিসেবে যোগদান করল ইরান। এই বিষয়ে আনন্দ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। এরপরই সন্ত্রাসবাদ ও আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসের প্রসঙ্গে আসেন প্রধানমন্ত্রী মোদী।
তিনি বলেন, “এই অঞ্চলে এবং সামগ্রিকভাবে সারা বিশ্বে শান্তি স্থাপনের পথে সবথেকে বড় হুমকি হল সন্ত্রাসবাদ। আমাদের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। কিছু কিছু দেশ তাদের বৈদেশিক নীতিতে আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসবাদকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দেয় তারা। এই দেশগুলির সমালোচনা করতে এসসিও গোষ্ঠীর দ্বিধা করা উচিত নয়। এসসিও-র সদস্য দেশগুলির উচিত এই দেশগুলির নিন্দা করা। সন্ত্রাসবাদের বিষয়ে পক্ষপাত করা উচিত নয়।” কোনও দেশের নাম না নিলেও, প্রধানমন্ত্রী যে পাকিস্তান এবং চিনকেই নিশানা করেছেন, তা বলাই বাহুল্য। পাকিস্তান যে সন্ত্রাসবাদীদের আশ্রয়দাতা, এই বিষয়টি এখন প্রতিষ্ঠিত। এর জেরে পাকিস্তানকে ধূসর তালিকাভুক্ত করেছিল এফএটিএফ। অন্যদিকে, রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে বারবারইপাক মদতপুষ্ট সন্ত্রাসবাদীদের কালো তালিকাভুক্ত করায় বাধা দিয়েছে চিন।
এদিনের শীর্ষ সম্মেলনের পর বিদেশ সচিব বিনয় কোয়াত্রা জানিয়েছেন, ভারতের সভাপতিত্বে এসসিও সদস্য দেশগুলির রাষ্ট্রনেতারা একটি ঘোষণাপত্র এবং দুটি যৌথ বিবৃতি গ্রহণ করেছেন। একটি হল মৌলবাদের মোকাবিলায় সহযোগিতা। যে মৌলবাদের যুব সমাজকে বিচ্ছিন্নতাবাদ, চরমপন্থা এবং সন্ত্রাসবাদের দিকে ঠেলে দেয়। আর দ্বিতীয়টি হল ডিজিটাল রূপান্তরের ক্ষেত্রে সহযোগিতা। এদিনের বৈঠকে ভারতের তৈরি এআই-ভিত্তিক ভাষা প্ল্যাটফর্ম ‘ভাষিনি’ ব্যবহার করা হয়। এই প্ল্যাটফর্মটি বিভিন্ন ভাষার ব্যবধান ঘুচিয়ে দিতে পারে। অর্থাৎ, এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে যে কোনও ভাষাভাষীর মানুষ অন্য যে কোনও ভাষা বুঝতে পারবেন। প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেছেন, এই প্ল্যাটফর্ম ‘ডিজিটাল প্রযুক্তি এবং সকলকে নিয়ে বৃদ্ধি’র সেরা উদাহরণ।