আহমেদাবাদ: তীব্র গরমের হাত থেকে বাঁচতে সকলেই তাকিয়ে আছেন আকাশের দিকে। কিন্তু, বৃষ্টির ফোঁটা পড়ার বদলে, আকাশ থেকে ঝপ-ঝপ করে মাটিতে এসে পড়ছে ডজন-ডজন পাখি। এমন অদ্ভূত ঘটনাই ঘটে চলেছে গুজরাত রাজ্য জুড়ে। বিশেষ করে আহমেদাবাদ শহরে গত কয়েক সপ্তাহে এমন বহু পাখিকে উদ্ধার করেছেন স্থানীয় পশুপ্রেমী এবং পশু-চিকিৎসকরা। তীব্র গরমে অতি ক্লান্তি এবং জলের অভাবেই পাখিগুলি উড়তে উড়তে পড়ে যাচ্ছে, এমনটাই বলছেন উদ্ধারকারীরা।
তবে, গরমের সময় এই ঘটনা পশ্চিম ভারতে বিরল নয়। বস্তুত, প্রত্যেক বছরই এই ভাবে ক্লান্ত পক্ষীকূলের আকাশ থেকে মাটিতে পতনের সাক্ষী থাকে গুজরাত। তবে, এইবারের মতো অবস্থা সাম্প্রতিক অতীতে দেখা যায়নি, দাবি পশুপ্রেমী সংগঠনগুলির। গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে গরমকালে জলের অভাবে ক্লান্ত এই পাখিদের উদ্ধার ও শুশ্রুষার কাজ করে চলেছে ‘জীবদয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট’ নামে আহমেদাবাদের একটি দাতব্য সংস্থা। সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গত কয়েক সপ্তাহে কয়েক হাজার পাখিকে উদ্ধার করেছে তারা। শুধু তাই নয়, প্রতিদিনই পায়রা, বাজপাখির মতো অতি উচ্চতায় ওড়া পাখিদের উদ্ধার করছেন সংস্থার কর্মীরা।
জীবদয়া ট্রাস্টের কর্মীরা জানিয়েছেন, এই বছর ব্যতিক্রমী গরম পড়েছে। অন্যান্য বছর এই সময়টায় তাঁরা যত পাখি উদ্ধার করেন, এই বছর তার থেকে অন্তত ১০ শতাংশ বেশি পাখিকে উদ্ধার করা হয়েছে। সরকারি পশু হাসপাতালগুলিতেও ডিহাইড্রেশনে ভোগা পাখিদের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। পশু চিকিৎসকরা সিরিঞ্জে জল নিয়ে, উদ্ধার হওয়া পাখিগুলির মুখে ঢেলে দিচ্ছেন। মাল্টি-ভিটামিন ট্যাবলেট খাইয়ে তাদের দ্রুত সুস্থ করার চেষ্টা চলছে। জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই আহমেদাবাদ শহর ও গুজরাতের অধিকাংশ এলাকাতেই জলাশয়গুলি সব শুকিয়ে গিয়েছে। পানীয় জলের তীব্র অভাবে ভুগছে এই পাখিরা। এই অবস্থায় পাখিদের পানের জন্য, নাগরিকদের বাড়ির জানলায় বা বারান্দায় একটি পাত্রে জল রাখার জন্য অনুরোধ করছেন পশু-উদ্ধারকারীরা।
তবে শুধু পাখিদেরই নয়, গরমে অসুস্থতা বাড়ছে মনুষ্য সমাজেও। পশ্চিম ভারতের রাজ্যগুলিতে ইতিমধ্যেই তাপপ্রবাহ শুরু হয়েছে। ফলে, ঝুঁকি বাড়ছে হিটস্ট্রোকের। সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গুজরাত স্বাস্থ্য দফতর থেকে রাজ্যের হাসপাতালগুলিতে বিশেষ ওয়ার্ড স্থাপনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই বিশেষ ওয়ার্ডে হিটস্ট্রোক ও অন্যান্য গরম সম্পর্কিত অসুস্থতার চিকিৎসার করা হবে।
কিন্তু, কেন এত গরম পড়ল এই বছর? আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, এই অবস্থা তৈরি হয়েছে গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে। তাঁদের যেভাবে জ্বালানী তেল পোড়ানো চলছে এবং একইসঙ্গে বনভূমি ধ্বংস চলছে, তাতে বছর বছর গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমনের পরিমাণ বাড়ছে। আর ততই তীব্রতা বাড়ছে তাপপ্রবাহের। আজ, বৃহস্পতিবারই নয়া দিল্লির মৌসম ভবন থেকে ভারতের অন্তত ৬টি রাজ্যে আগামী ৫ দিনের জন্য তাপপ্রবাহের সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এই ৬ রাজ্য হল – রাজস্থান, গুজরাট, জম্মু ও কাশ্মীর, হরিয়ানা, দিল্লি, পঞ্জাব, মধ্যপ্রদেশ।