নয়া দিল্লি: বর্তমানে, অনেক সময়ই আমরা বলে থাকি, ওই লোকটা পুরো ‘৪২০’। হ্যাঁ, প্রতারক বা ভুয়ো অর্থে আমরা প্রায়শই ৪২০ কথাটা ব্যবহার করে থাকি। অনেক সময় কোথা থেকে এই ‘৪২০’-র উদ্ভব তা না জেনেই অনেকে এই সংখ্যাটি নেটিবাচক অর্থে ব্যবহার করে থাকেন। আসলে, এটি ভারতীয় দণ্ডবিধির একটি ধারা। ৪২০ নম্বর ধারাটি প্রতারণা সংক্রান্ত। দীর্ঘদিন ধরে এই ধারা ব্যবহার হতে হতে, ৪২০ সংখ্যাটার সঙ্গেই প্রতারণার অর্থ মিলে মিশে গিয়েছে। এমনকি, ‘চাচি ৪২০’ নামে বলিউডে সফল ফিল্মও রয়েছে। তবে, গত শুক্রবার লোকসভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ একটি বিল পেশ করেছেন। এই বিল দেশের আইন হয়ে গেলে আর কাউকে ৪২০ বলা যাবে না। অন্তত আইন অনুযায়ী, ৪২০-র সঙ্গে প্রতারণার আর কোনও যোগ থাকবে না। কারণ, প্রস্তাবিত ভারতীয় ন্যায় সংহিতায় ৪২০ নম্বর ধারাটিই আর থাকবে না। পরিবর্তে প্রতারণা সম্পর্কিত অপরাধের বিচার হবে ৩১৬ নম্বর ধারায়।
১৮৬০ সালে ব্রিটিশ শাসকরা ভারতীয় দণ্ডবিধির প্রবর্তন করেছিল। এরপর, ১৮৭২-এ ভারতীয় প্রমাণ আইন এবং ১৮৯৮-এ ফৌজদারি কার্যবিধি আইন চালু হয়েছিল। সদ্য সমাপ্ত বাদল অধিবেশনের শেষ দিন, ঔপনিবেশিক যুগের এই তিন বিধিমালা প্রতিস্থাপনের জন্য লোকসভায় তিনটি বিল পেশ করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ – ভারতীয় ন্যায় সংহিতা বিল, ২০২৩; ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা বিল, ২০২৩ এবং ভারতীয় সাক্ষ্য বিল, ২০২৩। তাঁর দাবি, এই নয়া তিন আইন ব্য়বস্থা, ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থাকে সংশোধন করবে। একই সঙ্গে বিচার ব্যবস্থায় বিলম্বের অবসান ঘটাবে এবং সর্বোচ্চ তিন বছরের মধ্যে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে।
এই নয়া তিন বিল আইনে পরিণত হলে, এতদিনের প্রচলিত আইনের ধারাগুলিতে বেশ কিছু বড় পরিবর্তন আসবে। ৪২০ ধারার কথা আগেই বলা হয়েছে। এতদিন ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় শাস্তি দেওয়া হত হত্যার অপরাধের। নয়া আইন ব্যবস্থায় ৩০২ ধারাটি ধার্য করা হয়েছে ছিনতাইয়ের অপরাধের জন্য। প্রস্তাবিত ভারতীয় ন্যায় সংহিতায় সর্বোচ্চ শাস্তি অর্থাৎ, মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে নাবালিকা ধর্ষণ এবং মব লিঞ্চিং অর্থাৎ, গণপিটুনিতে মৃত্যুর ক্ষেত্রে। ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২৪ নম্বর ধারাও মুছে যাবে নয়া ব্যবস্থায়। ১২৪ নম্বর ধারাটি ছিল রাষ্ট্রদ্রোহ সম্পর্কিত। এই আইন বাতিল নিয়ে ইতিমধ্যেই সুপ্রিম কোর্টে মামলা চলছে। তবে রাষ্ট্রদ্রোহ আইন পুরোপুরি উঠে গেল, এটা ভাবা ভুল। বিচ্ছিন্নতা, সশস্ত্র বিদ্রোহ, নাশকতামূলক কার্যকলাপের মতো অপরাধের জন্য ন্যায় সংহিতায় ১৫০ নম্বর ধারা রয়েছে। ‘রাজদ্রোহ’-এর পরিবর্তে এই ধরনের অপরাধগুলিকে বলা হয়েছে ‘দেশদ্রোহ’। ন্যায় সংহিতার ১২৪ নম্বর ধারাটি অন্যায়ভাবে বাধাদান সংক্রান্ত।