শিলিগুড়ি: প্রকৃত সীমান্ত রেখার বিভিন্ন এলাকায় রাস্তা ও রেলপথ বানিয়েছে চিন। গত কয়েক বছরে চিনের এই কার্যকলাপ সামনে এসেছে। চিনা আগ্রাসনের জেরে সীমান্ত পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়েছে দফায় দফায়। চিনের এই কৌশলের পাল্টা হিসাবে ভারতও গত কয়েক বছরে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় যোগযোগ ব্যবস্থা উন্নত করেছে। সেই লক্ষ্যেই সেবক-রংপো রেলপথকে নাথু লা অবধি বিস্তৃত করার পরিকল্পনা করেছে ভারতীয় রেল। চিন সীমান্ত পর্যন্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা মসৃণ করার লক্ষ্যেই এই রেলপথ তৈরি করা হবে বলে জানা গিয়েছে। চিন সীমান্তের খুব কাছেই অবস্থিত সিকিমের নাথু লা। এই অঞ্চল থেকে ডোকালামের দূরত্বও খুব বেশি নয়। বছর কয়েক আগে এই ডোকালামেই ভারতীয় ও চিনা সেনা মুখোমুখি হওয়ায় সীমান্ত পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়েছিল।
বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের সেবক থেকে সিকিমের রংপো অবধি রেলপথ তৈরির কাজ চলছে। গত কয়েক বছর চলা এই কাজ অনেকটাই এগিয়েছে। এই রেলপথ হল সিকিমে প্রথম রেলপথ। এই কাজ শেষ হলেই রংপো থেকে নাথু লা অবধি রেলপথ তৈরির কাজ শুরু করা হবে বলে ভারতীয় রেল সূত্রে জানা গিয়েছে। তা হলে প্রচণ্ড শীতে বা দুর্যোগের পরিস্থিতিতেও প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার কাছে দ্রুত পৌঁছতে পারবে সেনাবাহিনী। সেই সঙ্গে সড়ক পথের পাশাপাশি বিকল্প যোগাযোগ মাধ্যমও তৈরি হবে।
বছরের অন্যান্য সময় নাথু লা যাওয়া গেলেও শীতের সময় বেশ কয়েক মাস প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এই এলাকা। এর জেরে কিছুটা হলেও সে সময় শিথিল হয় সেনার নজরদারি। বরফে রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়ার সেনাদের সরঞ্জাম নিয়ে যেতেও সমস্যায় পড়তে হয়। কিন্তু রেলপথ তৈরি হলে সেই সমস্যা আর থাকবে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। দুর্গম পরিস্থিতিতেও সহজে সীমান্তে পৌঁছে যাওয়া যাবে।
সেবক থেকে রংপো পর্যন্ত রেলপথের বড় অংশের কাজ ইতিমধ্যেই শেষ হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। ৪৪.৯৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই রেলপথে থাকবে ১৪টি টানেল ও ২৩টি ব্রিজ। এই ব্রিজ ও টানেল তৈরির ৯০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে রেল সূত্রে জানা গিয়েছে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এই রেলপথ পুরোপুরি তৈরি হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন এই রেলপথের প্রজেক্ট ডিরেক্টর মহিন্দার সিং।
তবে সেবক-রংপো রেলপথের মাত্র সাড়ে তিন কিলোমিটার পর্যন্ত থাকবে সিকিমের অভ্যন্তরে। দ্বিতীয় পর্যায়ে রংপো থেকে গ্যাংটক। এবং তৃতীয় পর্যায়ে গ্যাংটক থেকে নাথু লা পর্যন্ত এই রেলপথকে বিস্তৃত করা হবে বলে জানা গিয়েছে রেলসূত্রে। চিন সীমান্তের কথা মাথায় রেখেই এই সম্প্রসারণ করতে চাইছে ভারত।