কিরণ ডি. তারে
মহারাষ্ট্রে উদ্ধব শিবির (Uddhav Thackeray fraction) ও শিন্ডে শিবিরের (Eknath Shinde fraction) মধ্যে সংঘাত ক্রমেই বাড়ছে। মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী পদে উদ্ধব ঠাকরের পুনর্বহালের আর্জি গতকালই খারিজ করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court)। কিন্তু শীর্ষ আদালতের সেই নির্দেশের পর নতুন করে এক আইনি লড়াইয়ের মধ্যে উদ্ধব ঠাকরে ও একনাথ শিন্ডে। ঠাকরে এদিন স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে তিনি তাঁর দাবিতে অনড় এবং একনাথ শিন্ডেকে নৈতিকতার খাতিরে মুখ্যমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দেওয়া উচিত বলেই মনে করছেন উদ্ধব। যে যে কারণে নতুন করে উদ্ধব ও শিন্ডের মধ্যে লড়াই বাঁধতে পারে –
সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, কোনও রাজনৈতিক দলের সভাপতিই কেবলমাত্র বিধানসভায় হুইপ নিয়োগ করতে পারেন। এক্ষেত্রে যিনি হুইপ হিসেবে দায়িত্ব পান, তিনি দলের প্রধান এবং বিধানকদের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের কাজ করেন। মহারাষ্ট্রের ক্ষেত্রে গতবছরের ৪ জুলাই যখন একনাথ শিন্ডে আস্থাভোটে জিতেছিলেন, সেই সময় শিবসেনার হুইপ ছিলেন সুনীল প্রভু। ২৮৮ আসনের বিধানসভায় শিন্ডে শিবিরের দিকে ছিল ১৬৪ ভোট। সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে যা প্রয়োজন ছিল, তার থেকে ১৯ ভোট বেশি। আর এখানেই উদ্ধবের দাবি, শিন্ডে এবং আরও ১৫ জন বিধায়কের বিধায়ক পদ খারিজ হওয়া উচিত কারণ তাঁরা দলের হুইপ সুনীল প্রভুর জারি করা নির্দেশিকা পালন করেননি।
এদিকে শিবসেনার হুইপ হিসেবে ভারত গোগাভেলেকে দায়িত্ব দেওয়া ‘বেআইনি’ বলে মন্তব্য করেছে সুপ্রিম কোর্ট। এক্ষেত্রে বিধানসভার স্পিকার রাহুল নারওয়েকরকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে একনাথ শিন্ডে এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ বিধায়কদের অযোগ্য বলে ঘোষণা করা হবে কি না। তিনি যদি সুনীল প্রভুকে বৈধ হুইপ হিসেবে স্বীকৃতি দেন, তাহলে শিন্ডে বিধায়ক পদ খোয়াতে পারেন। কিন্তু যদি বিধানসভার অধ্যক্ষ হিসেবে নারওয়েকার সুনীল প্রভুকে বৈধ হুইপ হিসেবে স্বীকৃতি না দেন, তাহলে শিন্ডের বিধায়ক পদ টিকে যাবে।
এখনও পর্যন্ত শিবসেনার অন্দরে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও ভাঙন হয়নি। বিধানসভার হিসেবে এখনও পর্যন্ত শিবসেনা একটিই দল। শিন্ডে এবং তাঁর সহযোগীরা যদি দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি বিধায়ক নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আলাদা হয়ে যায়, তাহলে তাঁদের কাছে অন্য কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মিলে বিধায়ক পদ বাঁচানোর অপশন খোলা থাকবে। বর্তমানে শিবসেনার ৫৬ জন বিধায়কের মধ্যে ৪০ জনের সমর্থন রয়েছে শিন্ডে শিবিরের দিকে। যদি তারা বিজেপি বা অন্য কোনও দলের সঙ্গে মিলে যান, তাহলে তাঁদের বিধায়ক পদ টিকে যাবে, কিন্তু সেক্ষেত্রে শিবসেনা ছাড়তে হবে তাঁদের।
শুক্রবার উদ্ধব ঠাকরে জানিয়েছেন, নির্বাচন কমিশন একনাথ শিন্ডেকে দলের নাম যে শিবসেনা দিয়েছে, সেই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করেছেন ঠাকরে। সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, বিধানসভার বাইরে কোন পক্ষের দিকে কত সমর্থন রয়েছে, তা বিবেচনা করে কে আসল দল, তা স্থির করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। উল্লেখ্য, এক্ষেত্রে কিন্তু বিধানসভার বাইরে শিন্ডের চেয়ে উদ্ধবের সমর্থক সংখ্যা বেশি। উদ্ধব ঠাকরে জানিয়েছেন, “আমরা এই বিষয়ে ইতিমধ্যেই নির্বাচন কমিশনের কাছে সমস্ত নথি জমা দিয়েছি। আমি আশা করছি যে শিবসেনা দলের নাম এবং ‘ধনুক এবং তীর’ নির্বাচনী প্রতীক ফিরে পাব।”
শিন্ডের বিরুদ্ধে লড়াইকে আলাদা মাত্রায় নিয়ে উদ্ধব ঠাকরের হাতে একটি বাড়তি অস্ত্র রয়েছে। সহানুভূতির অস্ত্র। উদ্ধব এমন একটি বাতাবরণ তৈরির চেষ্টা করছেন, যাতে সেনা সমর্থকদের কাছে শিন্ডেকে একজন চক্রান্তকারীর মতো করে তুলে ধরা যায়। উদ্ধব দেখানোর চেষ্টা করছেন যে সুপ্রিম কোর্টে তারা আইনিভাবে না জিতলেও শীর্ষ আদালতের মন্তব্যে আখেরে তাঁরই জয় হয়েছে।