নয়া দিল্লি: দিল্লির ভয়ঙ্কর শ্রদ্ধা ওয়াকার হত্যার পিছনে ছিল ঈর্ষা এবং অনিয়ন্ত্রিত রাগ। এমনই দাবি দিল্লি পুলিশের। মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) বিকেলে দিল্লির সাকেত আদালতে, এই মামলার ৬,৬২৯ পৃষ্ঠার চার্জশিট পেশ করেছে দিল্লি পুলিশ। চার্জশিটে পুলিশ জানিয়েছে, হত্যার দিন শ্রদ্ধা ওয়াকার তাঁর এক বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। তা জানতে পেরে অত্যন্ত রেগে গিয়েছিল অভিযুক্ত আফতাব পুনাওয়ালা। তার ভিতরের হিংস্রতা বেরিয়ে আসে। আর তার জেরেই এই হত্যাকাণ্ড। পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মীনু চৌধুরী বলেছেন, “সে যে বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিল, তা অভিযুক্ত ব্যক্তির পছন্দ হয়নি। সে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিল। সেদিনই তাঁকে হত্যা করা হয়েছিল।”
আফতাব পুনাওয়ালার বিরুদ্ধে ২০২২ সালের মে মাসে, তার লিভ-ইন পার্টনার শ্রদ্ধা ওয়াকারকে শ্বাসরোধ করে হত্যার অভিযোগ রয়েছে। শুধু তাই নয়, পুলিশের দাবি, হত্যার পর শ্রদ্ধার দেহ ৩৫ টুকরো করে একটি ৩০০ লিটারের ফ্রিজে রেখে দিয়েছিল। পরে তিন মাস ধরে দেহাংশগুলি তাদের বাড়ির কাছেই অবস্থিত ছতরপুর জঙ্গলে ফেলে দিয়েছিল। পুলিশের পক্ষ থেকে সেই জঙ্গল ও দক্ষিণ দিল্লির আরও বেশ কয়েকটি জায়গায় হানা দিয়ে কিছু হাড়গোড় সংগ্রহ করেছিল। ডিএনএ পরীক্ষা করে জানা গিয়েছে, সেই হাড়গোড়ের নমুনা শ্রদ্ধারই।
এদিন যে ৬,৬২৯ পৃষ্ঠার চার্জশিট পেশ করেছে দিল্লি পুলিশ, তাতে অন্ততপক্ষে ১০০ জন সাক্ষীর বয়ান নথিবদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়া, ফরেন্সিক এবং ইলেকট্রনিক বিভিন্ন প্রমাণাদিও নথিবদ্ধ করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, এই মামলার তদন্তের জন্য মোট নয়টি পৃথক দল তৈরি করা হয়েছিল। প্রমাণ সংগ্রহ করতে এবং সাক্ষীদর বয়ান নথিবদ্ধ করতে হরিয়ানা, হিমাচল এবং মহারাষ্ট্রেও গিয়েছিল দিল্লি পুলিশের দলগুলি। যুগ্ম কমিশনার মীনু চৌধুরী বলেছেন, “আমরা দীর্ঘ সময় ধরে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংগ্রহ করেছি। প্রমাণ বিশ্লেষণের কাজে অনেক প্রযুক্তিকে ব্যবহার করা হয়েছে। আমরা ডিএনএ এবং অন্যান্য ফরেনসিক পরীক্ষাও করেছি।”
আইনি বিশেষজ্ঞরা দিল্লি পুলিশের পেশ করা চার্জশিটটি পর্যালোচনা করছেন। মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট অভিরাল শুক্লা বলেন, “চার্জশিটটি বেশ বড়। অবশেষে আজ এটি আদালতে পেশ করা হল।” আদালত এদিন আফতাবের বিচারবিভাগীয় হেফাজতের মেয়াদ ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়িয়েছে। আদালত জানিয়েছে, ৭ ফেব্রুয়ারিই এই চার্জশিট গ্রহণ করা হবে। অন্যদিকে, আফতাব এদিন আদালতে চার্জশিটের একটি প্রতিলিপি চায়। সে জানিয়েছে, এই প্রতিলিপি যেন তাঁর আইনজীবীকে না দেওয়া হয়। কারণ তিনি আইনজীবী বদলাতে চান। জেলাশাসক জানিয়েছেন, আদালত গ্রহণ করার পরই অভিযুক্তকে চার্জশিটের কপি দেওয়া হবে।