নয়া দিল্লি: গত কয়েক বছরের মধ্যে সবথেকে জঘন্য হত্যাকান্ড। প্রতিদিনই দিল্লির শ্রদ্ধা ওয়াকার হত্যাকাণ্ডের (Shraddha Walker murder) বিভিন্ন তথ্য সামনে আসছে। অভিযুক্ত আফতাব ইতিমধ্যেই তার অপরাধ স্বীকার করেছে। পুলিশকে জানিয়েছে, সে কীভাবে শ্রদ্ধাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছিল এবং তারপর তার দেহ কেটে ৩৫ টুকরো করেছিল। তারপর দিল্লির মেহরাউলি জঙ্গলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলে দিয়েছিল সেই দেহাংশগুলি। আফতাব অপরাধ স্বীকার করলেও, তদন্তকারীদের সামনে চ্যালেঞ্জটা অত্যন্ত কঠিন। মামলাটি এখনও পর্যন্ত পুরোপুরি আফতাবের দেওয়া তথ্যের উপর নির্ভর করছে। কিন্তু, আদালতে তার অপরাধ প্রতিষ্ঠা করতে, সাক্ষ্য-প্রমাণ লাগবে দিল্লি পুলিশের। হত্যার পর ছয় মাস কেটে যাওয়ায় চ্যালেঞ্জ আরও বেশি।
দেহাংশ
পুলিশের সামনে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হল শ্রদ্ধার শরীরের বিভিন্ন অংশগুলি খুঁজে বের করা। আফতাবের বয়ান অনুযায়ী, দক্ষিণ দিল্লির ছত্তরপুরের ঘন জঙ্গলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে সেগুলি। পুলিশের একধিক দল দিনের পর দিন জঙ্গলে তল্লাশি চালাচ্ছে। তবে, কাজটা খুব কঠিন। কারণ আফতাবের দাবি, সে কোথায় দেহাংশগুলি ফেলেছিল, তা তার মনে নেই। তবে, ইতিমধ্যে শরীরের বিভিন্ন অংশসহ প্রায় দশটি ব্যাগ পাওয়া গিয়েছে। ফরেনসিক পরীক্ষায় নিশ্চিত করা হবে, সেগুলি আদৌ শ্রদ্ধার দেহাংশ কি না। এতে প্রায় ১৫ দিন সময় লাগবে।
কাটা মাথা
হত্যার একদিন পর, শ্রদ্ধার মাথা কেটে নতুন কেনা ফ্রিজে রেখেছিল আফতাব। এমনটাই অভিযোগ। কিন্তু সেটি এখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি। আফতাবের বয়ান অনুযায়ী বেশ কয়েক মাস ধরে সে মাথাটি রেখে দিয়েছিল। প্রায়শই না কি মাথাটি বের করে সে দেখত। বৃহস্পতিবার সে জানিয়েছে, শ্রদ্ধার মুখ সে পুড়িয়ে দিয়েছিল। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতকে নিশ্চিতভাবে সনাক্ত করতে মাথা এবং ধড় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
হত্যার অস্ত্র
খুনের অস্ত্র, অর্থাৎ, খুনের পর দেহটি টুকরো টুকরো করে কাটার জন্য আফতাব যে এক ফুট দীর্ঘ করাত ব্যবহার করেছিল, সেই করাতটি এখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি। পুলিশকে আফতাব বলেছে, শ্রদ্ধাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করার পর সে করাতটি কিনেছিল। কিন্তু সে দাবি করেছে, অস্ত্রটি সে কোথায় ফেলেছে, তা তার মনে নেই। অপরাধ প্রমাণের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ। তবে, হত্যার পর অনেকটা সময় কেটে গিয়েছে। তাই, করাতটি খুঁজে পেলেও, তাতে আঙুলের ছাপ বা রক্তের দাগ পাওয়াটা প্রায় অসম্ভব।
জামাকাপড়
হত্যার দিন আফতাব ও শ্রদ্ধার যে পোশাক পরেছিলেন, সেগুলিও এখনও উদ্ধার করা যায়নি। আফতাব পুলিশকে জানিয়েছে, রক্তমাখা জামাকাপড়গুলি সে আবর্জনা সংগ্রহের ভ্যানে ফেলে দিয়েছিল। এইসব জামা-কাপড়ের সন্ধান পাওয়াও প্রায় অসম্ভব।
মোবাইল ফোন
শ্রদ্ধার মোবাইল ফোনটিও পুলিশ এখনও উদ্ধার করতে পারেনি। আফতাব জানিয়েছে, ফোনটি সে দিল্লির উপকণ্ঠে কোনও স্থানে ফেলে দিয়েছে। শ্রদ্ধার ফোনের অ্যাপ ব্যবহার করে, তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে ৫৪,০০০ টাকা নিজের অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করেছিল আফতাব। ওই টাকা সে ফ্রিজ কেনার জন্য ব্যবহার করেছিল বলে জানিয়েছে দিল্লি পুলিশের একটি সূত্র। যে ফ্রিজে সে শ্রদ্ধার দেহের টুকরোগুলি রেখেছিল।
মৃত্যুর সময়
আফতাব যদিও স্বীকার করেছে, ১৮ মে সে শ্রদ্ধাকে খুন করেছিল। কিন্তু, তার মুখের কথা পুরোপুরি বিশ্বাস করা যায় না। কবে এবং ঠিক কোন সময়ে হত্যাটি ঘটেছে, তা পুলিশকে প্রমাণ করতে হবে। মৃত্যুর সময়কে নিশ্চিত করতে, শ্রদ্ধার দেহের টুকরো করা অংশগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।