নয়াদিল্লি: দেশের বড় একটা অংশের মানুষ আজও যাতায়াতের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেন ট্রেনকে। তেমনই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পণ্য পরিবহণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ভারতীয় রেল। দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে পণ্য পৌঁছে দেয় মালগাড়ি। ধীর গতিতে নিজের গন্তব্যের দিকে এগিয়ে যায়। সোমবার তেমনই একটি মালগাড়ির সঙ্গে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের সংঘর্ষ হয় দার্জিলিং জেলার রাঙাপানি স্টেশনের কাছে। সেই দুর্ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। ওই সংঘর্ষের সময় মালগাড়ির গতিবেগ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে মালগাড়ির গতিবেগ, ভারতে পণ্য পরিবহণে তার ভূমিকা-সহ খুঁটিনাটি বিষয়ে জেনে নেওয়া যাক।
মালগাড়ি কী কী পণ্য পরিবহণ করে?
ভারতে মালগাড়ি বিভিন্ন রকম পণ্য পরিবহণ করে। কয়লা, লৌহ আকরিক, সিমেন্ট, পেট্রোলিয়ামজাত দ্রব্য, সার দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে দেয়। খাদ্যদ্রব্যও এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পৌঁছে দেয় মালগাড়ি। ভারতে প্রথম মালগাড়ি চলে ১৯৬৬ সালে। মুম্বই থেকে আহমেদাবাদ যায়। প্রত্যেক বছর গড়ে ১.৪ বিলিয়ন টনের বেশি পণ্য এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পৌঁছে দেয় ভারতীয় রেল। প্রত্যেক দিন ১৩৬৯টি রেকে পণ্য তোলা হয়।
মালগাড়ির গতিবেগ কত থাকে?
মালগাড়ির গতিবেগ খুব একটা বেশি হয় না। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের তথ্য বলছে, মালগাড়ির গড় গতিবেগ ২০ থেকে ২৫ কিলোমিটার। অর্থাৎ ঘণ্টায় গড়ে ২০ থেকে ২৫ কিমি পর্যন্ত যায় মালগাড়ি। তবে ইস্টার্ন ডেডিকেটেড ফ্রেট করিডরে ৬০ কিমি পর্যন্ত গতিবেগে মালগাড়ি চলতে পারে। কলকাতা-লুধিয়ানা পণ্য করিডর হল ইস্টার্ন ডেডিকেটেড ফ্রেট করিডর। ডানকুনি থেকে লুধিয়ানা পর্যন্ত ১৮৩৯ কিমি বিস্তৃত এই রেলপথ।
মালগাড়ির গতিবেগ বাড়াতে পদক্ষেপ-
ভারতীয় রেল তার বেশিরভাগ রাজস্ব ও লভ্যাংশ আয় করে পণ্য পরিবহণ করে। ফলে পণ্য পরিবহণ আরও দ্রুত করার জন্য মালগাড়ির গতিবেগ বাড়াতে চায় রেল। পণ্য-ভর্তি মালগাড়ির গতিবেগ সর্বোচ্চ ৭৫ কিমি করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আবার ওয়াগেন খালি থাকা অবস্থায় মালগাড়ির গতিবেগ ১০০ কিমি করতে পদক্ষেপ করছে রেল। শুধুমাত্র পণ্য পরিবহণের জন্য আলাদা রেল ট্র্যাক করার চেষ্টা চলছে।
দেশের দীর্ঘতম মালগাড়ি-
৬টি ইঞ্জিন। ২৯৫টি বগি। ভারতীয় রেলের দীর্ঘতম মালগাড়ির মোট দৈর্ঘ্য ৩.৫ কিলোমিটার। নাম সুপার বাসুকি। ভারতীয় রেলের বক্তব্য, বাসুকি দেশের দীর্ঘতম ও ভারী মালগাড়ি। ট্রেনটি একটি স্টেশন পার হতে প্রায় ৪ মিনিট সময় নেয়। স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে ২০২১ সালের ২২ জানুয়ারি ট্রেনটি চালানো হয়। রায়পুর ডিভিশনে মালগাড়িটি চলেছিল। একজন লোকো পাইলট, একজন অ্যাসিস্ট্যান্ট লোকো পাইলট এবং একজন গার্ড ছিলেন। বাসুকির আগে ভারতের দীর্ঘতম মালগাড়ি ছিল ২.৮ কিমি লম্বা। নাম শেষনাগ।
কত ওয়াগন নিয়ে সাধারণত মালগাড়ি চলে-
একটি মালগাড়িতে সাধারণত ৪০ থেকে ৫৮টি বগি(ওয়াগন) থাকে। একটি ওয়াগনে গড়ে ৬৫ টন পণ্য নেওয়া হয়।
ওয়াগন লিজ় নিতে পারেন ব্যবসায়ীরা-
নিজেদের পণ্য এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পৌঁছে দিতে ওয়াগন লিজ় নিতে পারেন ব্যবসায়ীরা। যদি পণ্যের পরিমাণ বেশি হয়, তবে ব্যবসায়ীরা সম্পূর্ণ ওয়াগন কিংবা প্রয়োজনে ট্রেন রেক লিজ়ে নিতে পারেন।