হীরাবেন মোদীর সঙ্গে নরেন্দ্র মোদী
আমেদাবাদ: কথায় বলে প্রতিটি সফল পুরুষের পিছনে একজন নারীর অবদান থাকে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জীবনে সেই নারী হলেন তাঁর মা হীরাবেন। তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন, কঠোর পরিশ্রম করেছেন, কখনও টাকা-পয়সা ধার করেননি এবং সন্তানদের এমন শিক্ষা দিয়েছেন, যা তাদের আত্মনির্ভরশীল এবং মহান নেতায় পরিণত করেছে। শুক্রবার, শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন সেই মহাপ্রাণ। গত জুন মাসে তিনি ১০০ বছরে পা রেখেছিলেন। সেই সময়, নরেন্দ্র মোদীর ভাই প্রহ্লাদ মোদী, তাঁদের মা সম্পর্কে বেশ কিছু অজানা, স্বল্প জানা তথ্য প্রকাশ করেছিলেন। সেই বয়ান থেকে চিনে নেওয়া যাক হীরাবেন মোদীকে
- প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভাই প্রহ্লাদ মোদী বলেছিলেন, “মাত্র ১৫-১৬ বছর যখন মা বিয়ে করেছিলেন। আর্থিক চাপ এবং পারিবারিক সমস্যার কারণে, তিনি কখনই পড়াশোনা করার সুযোগ পাননি। কিন্তু মা চেয়েছিলেন, তাঁর সমস্ত সন্তান শিক্ষিত হোক। পরিবারের আর্থিক অবস্থা এমন ছিল যে আমাদের কাছে স্কুলের ফি দেওয়ার মতো টাকা ছিল না। কিন্তু মা কখনই টাকা ধার করেননি। ছোটখাট কাজ করে ফি দেওয়া নিশ্চিত করেছিলেন।” প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ভাড়নগরের এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছিলেন। তাঁর একটিই ইউনিফর্ম ছিল। যখনই সেটা ছিঁড়ে যেত, হীরাবেন অন্য কোনও রঙের কাপড় দিয়ে ইউনিফর্মটি সেলাই করে দিতেন।
- ভাড়নগরে, হীরাবেন ছোট বাচ্চা এবং মহিলাদের ঘরোয়া প্রতিকার দিয়ে চিকিত্সাও করতেন। প্রহ্লাদ মোদী বলেছিলেন, “আমার মা অনেক দেশি চিকিৎসা জানতেন। তিনি ‘দোসি মা’ নামে পরিচিত ছিলেন। তিনি কখনও স্কুলে না গেলেও, আমাদের গ্রামের ডাক্তার ছিলেন তিনি। তাঁর ১০০ বছর পূর্ণ করার পিছনের রহস্য হল তাঁর সারাজীবনের সংগ্রাম এবং কঠোর পরিশ্রম।”
- প্রহ্লাদ মোদী আরও বলেছিলেন, “তিনি প্রতিদিন দুই বার করে কুয়ো থেকে জল তুলতেন। এর ফলে তাঁর পিঠ শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল। তিনি প্রতিদিন পুকুরে কাপড় ধুতে যেতেন এবং এতগুলো সিঁড়ি ভাঙতেন, যা তাঁর পা এবং পুরো শরীরকে শক্তিশালী করে তুলেছিল। কখনও তিনি বাইরের খাবার খাননি। আর তাই ছেলেকে আজ তিনি বিশ্বনেতার ভূমিকায় দেখছেন।” তবে, প্রহ্লাদ মোদী জানিয়েছিলেন তাঁর প্রিয় খাবার ছিল আইসক্রিম। আইসক্রিম দেখলে তিনি নিজেকে সামলাতে পারতেন না।
- প্রহ্লাদ মোদী বলেছিলেন, “সবজি কেনার টাকা ছিল না। তখন চাস (বাটার মিল্ক) ফ্রি ছিল। শুধু বাজরার রুটি আর কড়ি রান্না করা হত। আসলে নরেন্দ্র ভাই, বাড়ি ছাড়ার কয়েক বছর আগে পর্যন্ত, শুধু দুটো রুটি আর চা ছাড়া কিছু খেত না। বাবাও খুব পরিশ্রম করতেন। আমার মাও সারাদিন কাজ করতেন। মিডিয়া এবং বিশ্ব আজ বলে প্রধানমন্ত্রী মোদী দিনে ১৮ ঘণ্টা কাজ করেন। এর অনুপ্রেরণা এসেছে আমাদের মা, হীরাবেনের থেকেই। তিনি খুবই ধার্মিক এবং সবসময়ই বলতেন দেশের জন্য আমাদের জীবন উৎসর্গ করা উচিত। তিনি নিরক্ষর ছিলেন, কিন্তু তাঁর স্বামী দামোদর তাঁকে ধর্মীয় বই পড়ে শোনাতেন।”
- হটকেশ্বর মহাদেব মন্দিরের মহারাজ ষষ্ঠী নিরঞ্জনসিংহ রাওয়াল বলেছিলেন, “তিনি (হীরাবেন) শিবরাত্রি এবং শ্রাবণের প্রথম সোমবার সময় মন্দিরে আসতেন। তিনি পূজা করতেন এবং আমাকেও আশীর্বাদ করতেন।”