নয়া দিল্লি : সংসদে বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় ধাপের অধিবেশন চলছে। অধিবেশন চলাকালীন এদিন লোকসভায় কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে সোশ্য়াল মিডিয়া নিয়ে আবেদন জানালেন কংগ্রেসের সভাপতি সনিয়া গান্ধী। তিনি বর্তমান দিনে সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব নিয়ে গভীরভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি এদিন অভিযোগ করেছেন, “জনসাধারণের নজরে এসেছে যে বিশ্বব্যাপী সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানিগুলি সব রাজনৈতিক দলকে সমান সুযোগ দিচ্ছে না।” তিনি বলেছেন, “গণতন্ত্রকে কবজা করার জন্য সোশ্য়াল মিডিয়ার অপব্যবহার হওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে।” তিনি এই আশঙ্কা তুলে ধরে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আর্জি জানিয়েছেন যাতে নির্বাচনী রাজনীতিতে ফেসবুক এবং অন্যান্য সোশ্য়াল মিডিয়া হস্তক্ষেপ বন্ধ করে।
বুধবার লোকসভায় জ়িরো আওয়ারের সময় কংগ্রেস নেত্রী তাঁর এই বিষয়টি উত্থাপিত করেন। তিনি বলেছেন যে ফেসবুক এবং টুইটারের মতো বিশ্বব্যাপী সংস্থাগুলিকে ব্যবহার করা হচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলির নেতাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যকে রূপ দিতে। এই অভিযোগ তুলে তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আর্জি জানিয়ে বলেছেন, “বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের নির্বাচনী রাজনীতিতে ফেসবুক এবং অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া জায়ান্টদের পদ্ধতিগত হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে।” এদিন সনিয়া গান্ধী আল জ়াজিরা এবং দ্য রিপোর্টার্স কালেকটিভের একটি প্রতিবেদনের উল্লেখ করে দাবি করেছেন যে, ফেসবুক অন্যান্য রাজনৈতিক দলের তুলনায় নির্বাচনী বিজ্ঞাপনের জন্য শাসক দল বিজেপিকে সস্তা চুক্তির প্রস্তাব দিয়েছে। তিনি আরও অভিযোগ করেছেন যে, যাঁরাই সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছে তাঁধের কন্ঠস্বর রোধ করেছে এইসব সোশ্য়াল মিডিয়া।
সনিয়া গান্ধী এদিন এই ইস্যুটিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে জোর দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “শাসকদলের যোগসাজশে ফেসবুক যেভাবে সামাজিক সম্প্রীতিকে বিঘ্নিত করছে তা আমাদের গণতন্ত্রের জন্য বিপজ্জনক। তরুণ ও বৃদ্ধের মন একইভাবে আবেগপ্রবণ বিভ্রান্তিমূলক তথ্য এবং প্রক্সি বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে ঘৃণাতে ভরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ফেসবুকের মতো কোম্পানিগুলো এ বিষয়ে সচেতন এবং এর থেকে লাভবান হচ্ছে। এই প্রতিবেদনগুলি বড় কর্পোরেশন, শাসকগোষ্ঠী এবং ফেসবুকের মতো বিশ্বব্যাপী সোশ্যাল মিডিয়া জায়ান্টগুলির মধ্যে ক্রমবর্ধমান সম্পর্ক তুলে ধরে।”
বর্তমানে আমরা ডিজিটাল যুগে দাঁড়িয়ে রয়েছি। আঙুলের এক ক্লিকে খবর ভেসে ওঠে। সোশ্যাল মিডিয়ায় আবার এক ক্লিকেই কোনও রাজনৈতিক দলের লাইভ জনসভা বা উদ্বোধন অনুষ্ঠান দেখে নিই। ফলে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারে ফেসবুক, টুইটারের মতো সোশ্যাল মিডিয়া সংস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। করোনা অতিমারি আবহে পাঁচ রাজ্য়ের বিধানসভা নির্বাচনেও নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে ভার্চুয়াল জনসভার প্রচলন বেড়েছে। সবটাই ছড়িয়ে যায় সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে। সেক্ষেত্রে এই মাধ্যম প্রভাবিত হলে জনগণের মতামতও প্রভাবিত হবে। তাই ধরে নেওয়া হয় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে যাঁর অনুগামীদের সংখ্য়া বেশি তাঁর জোর তত বেশি। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর টুইটার অ্যাকাউন্ট ঘিরে বিতর্ক দানা বেঁধেছিল। রাহুল গান্ধী কিছু মাস আগেই টুইটারের সিইও পরাগ আগরওয়ালকে একটি টুইট করে জানান টুইটারে তাঁর অনুগামীদের সংখ্যা সংস্থার তরফে ইচ্ছাকৃতভাবে কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সেখানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর টুইটারে অনুগামীদের সংখ্য়া অনেক বেশি। তারপরই টুইটারে বিতর্কের ঝড় ওঠে। বিশিষ্ট ব্যক্তি সহ নেটিজ়েনরা তাঁর এই উক্তির কটাক্ষ করেন। এরপর সংসদে এদিন সনিয়া গান্ধী সোশ্যাল মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করার আর্জি জানালেন। তিনি বলেছেন, “এটা দলীয় রাজনীতির বাইরে। ক্ষমতায় যেই থাকুক না কেন আমাদের গণতন্ত্র ও সামাজিক সম্প্রীতি রক্ষা করতে হবে।” তাহলে কি পাঁচ রাজ্যে কংগ্রেসের খারাপ ফলাফলের জন্য সোশ্যাল মিডিয়াকেই দায়ী করলেন নেত্রী!