নয়া দিল্লি: উদয়পুর ‘চিন্তন শিবির’-এর সিদ্ধান্তগুলিকে কাজে লাগানোর প্রক্রিয়া শুরু করে দিল জাতীয় কংগ্রেস। কংগ্রেসের পুনরুত্থানের লক্ষ্যকে মাথায় রেখে, মঙ্গলবার (২৪ মে) দলের অন্তর্বর্তীকালীন সভানেত্রী সনিয়া গান্ধী তিনটি পৃথক কমিটি গঠন করলেন – রাজনৈতিক বিষয়ক কমিটি, টাস্ক ফোর্স ২০২৪ এবং ‘ভারত জোড়ো যাত্রার’ সমন্বয়ের জন্য একটি কেন্দ্রীয় পরিকল্পনাকারী গোষ্ঠী। রাজনৈতিক বিষয়ক কমিটির দায়িত্ব বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দলকে পরামর্শ দেওয়া। টাস্ক ফোর্স ২০২৪-এর সদস্যদের উপর ভার দেওয়া হয়েছে, উদয়পুর নব সঙ্কল্পপত্রের সিদ্ধান্তগুলি প্রয়োগ করার। আর কংগ্রেসের অতি আলোচিত ভারত জোড়ো যাত্রার সাফল্য নিশ্চিত করার দায়িত্বে থাকবেন তৃতীয় কমিটির সদস্যরা।
উল্লেখযোগ্যভাবে, রাজনৈতিক বিষয়ক কমিটিতে রাহুল গান্ধীর পাশাপাশি জায়গা পেয়েছেন গুলাম নবি আজাদ এবং আনন্দ শর্মাও। দুজনেই কংগ্রেসের বিদ্রোহী ‘জি-২৩’ গোষ্ঠীর পরিচিত মুখ। তবে এই কমিটির মাথার উপরে থাকছেন সনিয়া গান্ধী। এছাড়া কংগ্রেসের রাজ্যসভার দলনেতা মল্লিকার্জুন খড়গেকেও রাখা হয়েছে এই কমিটিতে। আছেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অম্বিকা সোনি, দিগ্বিজয় সিং, জীতেন্দ্র সিং, কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক কেসি বেনুগোপাল প্রমুখ। তবে, রাজনৈতিক বিষয়ক কমিটি এবং টাস্ক ফোর্স ২০২৪ – দুটি কমিটির কোনওটিতেই রাখা হয়নি কংগ্রেসের লোকসভার দলনেতা অধীররঞ্জন চৌধুরীকে।
টাস্ক ফোর্স ২০২৪ কমিটির মূল দায়িত্ব, নির্বাচনী ব্যবস্থাপনা। দলকে ২০২৪ সালের নির্বাচনী বৈতরণী পাড় করানোর কৌশল ঠিক করবেন তাঁরাই। এই কমিটিতেও জি-২৩ গোষ্ঠীর এক নেতাকে রাখা হয়েছে, মুকুল ওয়াসনিক। ভোট কুশলী প্রশান্ত কিশোরের সঙ্গে কংগ্রসের বনিবনা না হলেও, তাঁর প্রাক্তন সঙ্গী সুনীল কানুগোলুকে রাখা হয়েছে এই কমিটিতে। এছাড়া আছেন বরিষ্ঠ কংগ্রেস নেতা তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম। এই কমিটিতে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বঢরার পাশাপাশি গান্ধী পরিবার ঘনিষ্ঠ রণদীপ সিং সুরজেওয়ালা, অজয় ম্যাকেন, জয়রাম রমেশদেরও রাখা হয়েছে। কংগ্রেস দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই টাস্ক ফোর্সের প্রতিটি সদস্যকে আলাদা আলাদা দায়িত্ব দেওয়া হবে। কেউ দেখবেন সংগঠন, কেউ যোগাযোগ ও সংবাদমাধ্যম, কেউ জনসংযোগ, কেউ অর্থনীতি, কেউ বা দেখবেন নির্বাচন। প্রত্যেকের আওতায় থাকবে একটি করে দল। এই দলগুলি গঠনের বিষয়ে পরে জানানো হবে বলে জানিয়েছে কংগ্রেস।
উদয়পুরের চিন্তন শিবিরেই, জনসংযোগ বাড়ানোর লক্ষ্যে এবং ঘরে ঘরে কংগ্রেসের রাজনৈতিক বার্তা পৌঁছে দিতে ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’ আয়োজনের পরিকল্পনা করেছিল জাতীয় কংগ্রেস। আগামী ২ অক্টোবর মহাত্মা গান্ধীর জন্মদিবস থেকে, কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত থেকে এই যাত্রার মাধ্যমে গোটা দেশে ফের কংগ্রেসের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ান যাবে বলে আশা করছে শতাব্দী প্রাচীন দলটি। এই যাত্রার মূল দায়িত্বে রাহুল গান্ধীই থাকবেন বলে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল চিন্তন শিবির থেকে। এই যাত্রার সমন্বয়ের জন্য যে কেন্দ্রীয় পরিকল্পনাকারী কমিটি তৈরি করা হয়েছে, সেই কমিটিতে দিদ্বিজয় সিং, শচীন পাইলট, শশী থারুরদের মতো বিশিষ্ট কংগ্রেস নেতাদের রাখা হয়েছে। এছাড়া টাক্স ফোর্স ২০২৪-এর সকল সদস্য এবং কংগ্রেসের সমস্ত শাখার প্রধানরা এই কমিটিতে থাকছেন আমন্ত্রিত অতিথি হিসাবে।
রাজনৈতিক বিষয়ক কমিটি – রাহুল গান্ধী, মল্লিকার্জুন খড়গে, গুলাম নবি আজাদ, অম্বিকা সোনি, দিগ্বিজয় সিং, আনন্দ শর্মা, কে সি ভেনুগোপাল এবং জিতেন্দ্র সিং।
টাস্ক ফোর্স ২০২৪ – পি চিদম্বরম, মুকুল ওয়াসনিক, জয়রাম রমেশ, কে সি বেনুগোপাল, অজয় ম্যাকেন, প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বঢরা, রণদীপ সিং সূর্যেওয়ালা এবং সুনিল কানুগোলু।
‘ভারত জোড়ো যাত্রা’-এর সমন্বয়ের জন্য কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা কমিটি – দিগ্বিজয় সিং, শচীন পাইলট, শশী থারুর, রবনীত সিং বিট্টু, কে জে জর্জ, জোথি মণি, প্রদ্যুত বরদলুই, জিতু পাটোয়ারি এবং সেলিম আহমেদ।