নয়াদিল্লি : ‘ন্যাড়া বেলতলায় একবারই যায়’, রাষ্ট্রপতি পদে বসতেই এই স্বতঃসিদ্ধ বাক্যটি বেশ বুঝে গিয়েছেন শ্রীলঙ্কার সদ্য নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি অনুরা কুমার দিশানায়ক। তা-ই তো পূর্বসূরিদের জুতোয় পা গলালেন না। অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে চিনকে এড়িয়ে ভারতেই আস্থা দিশানায়কের।
মাস কয়েক আগেই শেষ হয়েছে নির্বাচন। জোট বেঁধে শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতির আসনে বসেছেন বামপন্থী নেতা দিশানায়ক। আর তারপরেই ভারত সফরে দ্বীপরাষ্ট্রের প্রধান। রবিবার রাতে দিল্লিতে নামেন তিনি। মঙ্গলবার অবধি থাকবেন ভারতেই। সোমবার অর্থাৎ গতকাল দেখা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে। চলল দ্বিপাক্ষিক বৈঠক। স্বাক্ষর হল মৌ চুক্তি। মূলত, আঞ্চলিক নিরাপত্তা, ডিজিটাল পরিকাঠামো চলল আলোচনা। শ্রীলঙ্কাকে রেল সিগনালিংয়ের উন্নয়নের জন্য বড় ঋণ দিল ভারত। আর এসবের মাঝেই ভারত-শ্রীলঙ্কার নিরাপত্তা নিয়ে বড় দাবি শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতির। জানালেন, শ্রীলঙ্কার বুকে বসে ভারতের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার সাহস কারোর নেই।
তিনি বললেন, ‘ভারতীয়দের আমি নিশ্চিত করছি যে শ্রীলঙ্কার সীমানায় বসে এই দেশের নিরাপত্তায় আঘাত আনার সাহস কারোর নেই এবং আমাদের সরকারও সেই চেষ্টাকে এক মুহূর্তও সমর্থন জোগাবে না।’ নির্বাচনে জয় লাভের পর কূটনৈতিক স্তরে প্রথম বিদেশসফরে ভারতে এলেন দিশানায়ক। একইভাবে হাসিনাও চলতি বছর নির্বাচনে জয় লাভের পর প্রথম বিদেশসফর হিসাবে এসেছিলেন ভারতে। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, দিশানায়কের এই সফর ভারতের প্রতি তাঁর বন্ধুত্বপূর্ণ ভাবনাকেই চিহ্নিত করছে
দিশানায়কের মন্তব্যে চিনের দিকে আক্রমণেরই ইঙ্গিত দেখছেন আন্তর্জাতিক মহল। নিজেদের ঋণ-জালের মাধ্যমে দ্বীপরাষ্ট্রের জাঁকিয়ে বসে আছে চিন। তাঁদের হামবানটোটা বন্দর আপাতত শিয়ের সরকারের আওতায়। প্রসঙ্গত, ভারত দ্বীপরাষ্ট্রের দিকে সব সময় সাহায্যের হাত বাড়ালেও, শ্রীলঙ্কার চিন-ঘনিষ্ঠতাকে কোনও অংশেই ঠেকাতে পারেনি। উল্টে তারা একটু চিন ঘেঁষা থাকতেই পছন্দ করেছে। আর তার ফল যে কী হতে পারে সেটাও অর্থনৈতিক ধসের মধ্যে দিয়ে হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে শ্রীলঙ্কা। তবে সদ্য নির্বাচনের পর বদলেছে পরিস্থিতি। অনেকটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে অর্থনীতি। চিন-ঘনিষ্ঠতায় পড়েছে বাঁধ এমনটাই দাবি ওয়াকিবহাল মহলের।
আবার, শ্রীলঙ্কার মতোই চিনকে নিয়ে হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে মলদ্বীপও। সম্প্রতি, চারদিনের ভারত সফরে এসে এ দেশের নিরাপত্তা নিয়ে আকাশছোঁয়া দাবি করে গিয়েছেন চিনপন্থী’মলদ্বীপের রাষ্ট্রপতি মহম্মদ মুইজ্জু। বলেছেন, ‘মলদ্বীপ কখনও এমন কিছু করবে না, যাতে ভারতের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়।’
প্রসঙ্গত, শ্রীলঙ্কার জুতোতেই পা গলিয়েছে বাংলাদেশ। চিনের জালে পরে ভারতবিদ্বেষী, তারপরেই দ্বীপরাষ্ট্রে গলা অবধি উঠে যায় জল। তবে আপাতত সেই জল নামাতে তাঁদের ভরসা ভারতই। অন্যদিকে, হাসিনার নির্বাচিত সরকারের পতন, ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের গঠন। তারপর থেকেই বিশ্ব দেখছে অন্য বাংলাদেশকে। হিন্দুদের নিধন। ভারত-বিরোধী হুঙ্কার। শ্রীলঙ্কার মতো ‘ভুল পথেই’ এগোচ্ছে পড়শি দেশ, দাবি আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের।