বেঙ্গালুরু: বিবাহের ক্ষেত্রে উপযুক্ত সঙ্গী বেছে নেওয়ার অধিকার একমাত্র, যাঁরা বিয়ে করছেন তাঁদের। এই ক্ষেত্রে রাষ্ট্র বা সমাজ কিছু বলতে পারে না। বুধবার (১৫ জুন), সাফ জানাল কর্নাটক হাইকোর্ট। এক ১৯ বছর বয়সী তরুণী বাবা-মাকে কিছু না জানিয়ে, পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করছিলেন। তাঁর বাবা তাঁর মেয়েকে আটকে রাখা হয়েছে অভিযোগ করে হেবিয়ার কর্পাস মামলার আবেদন করেছিলেন। সেই মামলার রায় ঘোষণার সময়ই, বিচারপতি বি বীরাপ্পা এবং বিচারপতি কেএস হেমলেখার ডিভিশন বেঞ্চ উপরে উল্লেখ করা ওই মন্তব্য করে। তবে, বাবা-মাকে না জানিয়ে পালিয়ে বিয়ে করাটাও ওই তরুণীর উচিত হয়নি বলে জানিয়েছে আদালত।
ডিভিশন বেঞ্চ বলেছে, ‘সংবিধান প্রদত্ত স্বাধীনতাকে সুরক্ষিত করা আদালতের দায়িত্ব। জাতি হিসেবে আমাদের বহুত্ববাদ ও বৈচিত্র্যকে ধরে রাখার পথ থেকে বিচ্যুত হতে পারে না আদালত। চলতি মামলার সমস্ত তথ্য ও পরিস্থিতি বিবেচনা করে এই আদালত মনে করছে, আবেদনকারীর কন্যাকে তাঁর স্বামীর সঙ্গে থাকার অনুমতি দেওয়াই উচিত। যেহেতু আদালত বুঝেছে যে, আবেদনকারীর মেয়েকে কেউ অবৈধভাবে আটকে রাখেনি, তাই এই আবেদন খারিজ করে দিতে বাধ্য আদালত।’
তবে, ডিভিশন বেঞ্চ বাবা-মা ও সন্তানদের মধ্যে পারস্পরিক ভালবাসার উপর সর্বোচ্চ জোর দিয়েছে। বিচারপতি বি বীরাপ্পা এবং বিচারপতি কেএস হেমলেখা জানান, আমাদের দেশে যেমন বাবা-মায়েরা তাঁদের সন্তানদের জন্য আত্মত্যাগ করে থাকেন। ছেলে-মেয়েরাও তাঁদের বাবা-মায়ের জন্য আত্মত্যাগ করেন। বাবা-মা এবং সন্তানদের মধ্যে পারস্পরিক ভালবাসা থাকলে, পরিবারের মধ্যে কখনই ফাটল ধরতে পারে না। সন্তানদের আস্থা অর্জনে বাবা-মাকে তাদের ভালবাসা দিয়ে বাড়িতে একটা সহজ পরিবেশ তৈরি করতে হয়। সেই ক্ষেত্রে সন্তানরা বাবা-মাকে কোনও কথা বলতে ভয় পাবে না। অন্যদিকে সন্তানদেরও মাথায় রাখতে হবে, বাবা-মা না থাকলে, তাদের জন্ম, কর্ম, পড়াশোনা কিছুই হত না।
বাবা-মা কে না জানিয়ে পালিয়ে বিয়ে করার জন্য ওই তরুণীকে মৃদু ভর্ৎসনাও করে আদালত। ডিভিশন বেঞ্চ বলেছে, ‘ভবিষ্যতের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এবং বিবাহিত জীবনের সঙ্গী বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা আছে তাঁর। তবে, তাঁরও এমন কিছু করা উচিত নয়, যাতে বাবা-মাকে কষ্ট পেতে হয়, যন্ত্রণা পেতে হয়।’ আদালত আরও বলেছে, ওই তরুণীর তাঁর পড়াশোনার কথা ভাবা উচিত ছিল। পালানোর বদলে, বাবা-মাকে নিজের ভালবাসার কথা জানিয়ে তাদের বোঝানোর চেষ্টা করা উচিত ছিল।
বিচারপতি বি বীরাপ্পা এবং বিচারপতি কেএস হেমলেখা আরও বলেন, সন্তানদের বোঝা উচিত, ‘প্রতিক্রিয়া, অনুরণন এবং প্রতিফলন নিয়েই জীবন চলে’। বাবা-মাকে আজ যে অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে, আগামী দিনে একই অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হতে পারে সন্তানদেরও। মনুস্মৃতির উল্লেখ করে আদালত আরও বলেছে, ১০০ বছরেও কেউ বাবা-মায়ের ঋণশোধ করতে পারে না। তাই বাবা-মা কে কীভাবে খুশি করা যায়, সেই কথা ভাবা উচিত সন্তানদের। তবে, বাবা-মা-সহ সমাজের কোনও অধিকার নেই সন্তানদের জীবন সঙ্গী বেছে দেওয়ার। জীবনসঙ্গী বেছে নেওয়াটা কোনও ব্যক্তির ব্যক্তিগত অধিকার।