নয়া দিল্লি: স্বাধীনতার পর থেকে ভারত যে সব সামরিক সংঘাতে জড়িয়েছিল, তারমধ্য মিলিতভাবে সাফল্য ও পরাজয় রয়েছে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধে জয়লাভের পর এক নতুন রাষ্ট্র, বাংলাদেশ তৈরি হয়েছিল। গোটা বিশ্বে এমন সামরিক সাফল্যের নজির খুঁজলে, দ্বিতীয়টা পাওয়া যাবে না। ১৯৭১ সালে যুদ্ধের পর থেকেও ভারত-পাকিস্তানের সংঘাত বেড়েছে বই কমেনি। যখন মহারাজা হরি সিং যখন জম্মু ও কাশ্মীরকে ভারতের অংশ করার চুক্তিতেই সই করেছিলেন, সেই সময়ই কাশ্মীরের একটা বড় অংশ পাকিস্তানের অন্দরে রয়ে গিয়েছিল, যা এখনও বর্তমান। ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্বের সময়ে দেশের খুব একটা লাভ হয়নি, বরং ১৯৬৬ সালের তাসখন্দ চুক্তির মাধ্যমে ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছিল ভারত। কিন্তু ১৯৬২ সালের ভারত-চিন যুদ্ধে লজ্জাজনক পরাজয়ের মুখোমুখি হয়েছিল দুই দেশ। ভারত-চিন সংঘাত দেশের জন্য এখনও অনেকটাই বিপজ্জনক। চিনের সামরিক শক্তির ওপর আমাদের মনোযোগের অভাব সেনা সক্ষমতাকে প্রভাবিত করেছে।
ভারত সাধারণভাবে পাকিস্তানের দিকে বাড়তি নজর দিতেই অভ্যস্ত, কিন্তু সম্প্রতি পাকিস্তানের দিক থেকে নজর সরিয়ে চিনের দিকে বাড়তি নজর দেওয়ারর সিদ্ধান্ত কৌশলগত দিক থেকে অত্যন্ত ইতিবাচক। তবে শুধুমাত্র কৌশলগত দিক থেকে সঠিক থাকলেই হবে না, বরং আরও অনেক কিছু করা বাকি রয়েছে। সামরিক ক্ষেত্রে চিনের সঙ্গে ভারতের ফারাক রয়েছে। এই ফারাকগুলি চিহ্নিত করে পাল্টা রণকৌশল তৈরি করতে হবে বলেই মনে করা হচ্ছে। ভারত ও চিনের মধ্য বাড়তে থাকা বাণিজ্য থেকে এটা মনে হতে পারেই যে আগামী দিনে দুই দেশের সম্পর্ক আরও ভাল হবে এবং প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় হওয়া যাবতীয় সমস্যা সমাধান হবে। তবে ২০২০ সালে পূর্ব লাদাখের অনুপ্রবেশের কথা ভুলে গেলে চলবে না, পাশাপাশি মনে রাখতে হবে আকসাই চিনের একটা বড় অংশ চিনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
২০২০ সালের ১ জানুয়ারি বিভিন্ন দিকে মাথায় রেখেই জেনারেল বিপিন রাওয়াতকে ভারতের প্রথম সিডিএস হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছিল। ২০২০ সালের চিনা অনুপ্রবেশের অভিযোগ ওঠে। দুই দেশই সীমান্ত বরাবর সেনা মোতায়েন করেছিল এবং চিন সীমান্তের পার্বত্য পরিবেশে লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিল ভারত। বিভিন্ন বার আলোচনার পরও লাদাখ সীমান্তে তৈরি হওয়া সমস্যা এখনও সম্পূর্ণরূপে সমাধান হয়নি। কৌশলগত দিক থেকে এই পরিস্থিতিতে চিনই সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। দেশের প্রথম সিডিএস জেনারেল রাওয়াতের মৃত্যুর পর পাঁচ মাস কেটে গেলেও সরকার এখনও তাঁর উত্তরসূরি বেছে নিতে সক্ষম হয়নি। এই অক্ষমতাই চিনের পক্ষে গিয়েছে।
এমনকী চিনের অনেকদিন আগে থেকে ভারতীয় নৌবাহিনী থাকলেও চিন এখন সক্ষতার দিক থেকে ভারতীয় সেনাবাহিনীকে ছাপিয়ে গিয়েছে। প্রধান প্রতিপক্ষ ভারতকে দমন করার লক্ষ্য নিয়ে এবং জাতীয় স্বার্থ রক্ষার কারণে বিভিন্ন দেশে বন্দর তৈরির কৌশল নিয়েছে চিন। অন্যদিকে ভারত নৌসেনা বাহিনীর ক্ষমতা বৃদ্ধিতে পদক্ষেপ করলেও এখনও অনেক কিছুই করা বাকি রয়ে গিয়েছে। নৌসেনা বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধিতে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে মহড়ায় অংশ নিয়েছে। সাম্প্রতিক রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে দেশগুলিকে স্বাধীনভাবে নিরাপত্তা রক্ষার সিদ্ধান্ত নিতে হবে এবং ন্যাটোর মতো কোনও সংস্থার ছাতার তলায় গিয়ে খুব বেশি লাভ হবে না। তাই আমাদের পদাতিক বাহিনীকে আরও বেশি সক্ষম করে তোলার পাশাপাশি নৌসেনা বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধিতে বাড়তি নজর দিতে হবে। সেই কারণে প্রতিরক্ষা খাতে বাজেটে ব্যয় বরাদ্দ না কমিয়ে তা বাড়াতে হবে। চলতি বছরের বাজেটে এই কথাই উঠে এসেছিল।