নয়া দিল্লি : গণতন্ত্র কোনওদিন ‘পুলিশ-রাষ্ট্র’ হতে পারে না। সোমবার এমনটাই মন্তব্য সুপ্রিম কোর্টের। গতকাল জামিনের বিধি নিয়ে একগুচ্ছ নির্দেশিকার কথাও জানিয়েছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত। প্রয়োজন ছা়ড়া তদন্তকারী সংস্থাগুলি যেন কোনও অভিযুক্তকে গ্রেফতার না করে। এই মর্মে কেন্দ্রকে নতুন আইন প্রণয়নের জন্যও বলেছে সুপ্রিম কোর্ট। গতকাল শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, নির্বিচারে গ্রেফতারের মধ্যে দিয়ে ঔপনিবেশিক মানসিকতা ফুটে ওঠে। এর ফলে দেশের ভাবমূর্তি ‘পুলিশ রাষ্ট্র’ হিসেবেই প্রতিভাত হচ্ছে।
বিচারপতি সঞ্জয় কিষাণ কউল ও এম এম সুন্দরেশের বেঞ্চ এদিন জানিয়েছে, জামিন প্রক্রিয়া নিয়ে নয়া আইন বা বিধি প্রণয়নের সত্ত্বর প্রয়োজন রয়েছে। এই মর্মে কেন্দ্রের কাছে আবেদনও জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, কোনও অভিযুক্ত জামিনের আবেদন করলে সেই বিষয়ে দুই সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এবং অন্তর্বর্তীকালীন জামিনের ক্ষেত্রে সেই সময়টা ছয় সপ্তাহ। এছাড়াও কোনও অভিযুক্তকে গ্রেফতার করার ক্ষেত্রে সকল রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলকে ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৪১ ও ৪১এ ধারা মেনে চলার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। গতকাল বিচারপতি সঞ্জয় কিষাণ কউল ও এম এম সুন্দরেশের বেঞ্চ দুঃখ প্রকাশ করে জানিয়েছে, ‘ভারতের সংশোধনাগারগুলি অসংখ্য অপরাধীতে ভরে গিয়েছে। পরিসংখ্যান খতিয়ে দেখলে জানা যাবে, এই বন্দিদের দুই-তৃতীয়াংশই বিচারাধীন। এর মধ্যে বেশিরভাগ কয়েদিদেরই হয়ত গ্রেফতার করার প্রয়োজনও ছিল না…তাঁরা শুধু দরিদ্র বা অশিক্ষিতই নয়। তাঁদের মধ্যে মহিলারাও রয়েছেন।’
আদালতের তরফে এদিন আরও জানানো হয়েছে যে গণতন্ত্র ও ‘পুলিশ রাষ্ট্র’ সহাবস্থান করতে পারে না। কারণ দু’টি একে অপরের পরিপন্থী। বেঞ্চ জানিয়েছে, ‘জামিন হল নিয়ম, আর জেল হল ব্যতিক্রম।’ অর্থাৎ, যিনি মামলা করেন তাঁকে প্রমাণ করতে হয় যে অভিযুক্ত দোষী। সেই প্রেক্ষিতে জামিনটাই স্বাভাবিক। তবে যদি কোনও অভিযুক্তকে সাজা শোনাতেই হয়, সেখানে পুলিশকে উপযুক্ত প্রমাণ দিতে হবে। তবেই স্বাভাবিক পথে না হেঁটে আদালত জেল হেফাজতের নির্দেশ দেবে। গতকাল সুপ্রিম কোর্ট এই মর্মে কিছু নির্দেশ দিয়েছে। দোষীদের জামিন দেওয়ার প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে কেন্দ্র নতুন কোনও আইন আনতে পারে বলেও জানিয়েছে শীর্ষ আদালত।