Supreme Court on Rohingya: ‘অবৈধভাবে ভারতে ঢুকলে কি রেড কার্পেট বিছিয়ে দেওয়া হবে? আমরা কি রোহিঙ্গাদের রাখতে বাধ্য?’ বড় পর্যবেক্ষণ প্রধান বিচারপতির
Supreme Court on Rohingya: রোহিঙ্গারা শরণার্থী নাকি অবৈধ অনুপ্রবেশকারী? এই প্রশ্ন আগেও উঠেছে সুপ্রিম কোর্টে। আর এবার প্রধান বিচারপতি স্পষ্ট করে দিলেন, অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের ভারতে পরিষেবা বা সুবিধা পাওয়ার কোনও অধিকার নেই। দেশের দরিদ্র মানুষের কথাও এদিন মনে করিয়ে দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি।

নয়া দিল্লি: ‘রোহিঙ্গাদের কি শরণার্থী হিসেবে চিহ্নিত করেছে ভারত?’ এসআইআর আবহে বড় প্রশ্ন তুলল দেশের শীর্ষ আদালত। যারা অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করেছে, তাদের ভারতে আশ্রয় দেওয়ার বা সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার কোনও বাধ্যবাধকতা যে ভারতের নেই, সে কথা বুঝিয়ে দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সূর্য কান্ত। জেল থেকে রোহিঙ্গাদের সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে, তাদের কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না, এমন অভিযোগ নিয়েই মামলা হয়েছিল সুপ্রিম কোর্টে। আজ, মঙ্গলবার ছিল সেই মামলার শুনানি।
‘রোহিঙ্গারা কি শরণার্থী?’
মামলায় আইনজীবীর দাবি ছিল, রোহিঙ্গাদের যদি ভারত থেকে বের করে দিতে হয়, তাহলে তা নিয়ম মেনে করা উচিৎ। প্রধান বিচারপতি সূর্য কান্ত ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর বেঞ্চে মামলার শুনানি চলছিল।
আইনজীবী এদিনের শুনানিতে দাবি করেন, গত মে মাসে দিল্লি পুলিশ কয়েকজন রোহিঙ্গাকে তুলে নিয়ে যায়, তারপর থেকে তাদের আর কোনও খোঁজ নেই। এ কথা শুনে প্রধান বিচারপতি সূর্য কান্ত প্রশ্ন করেন, “রোহিঙ্গাদের শরণার্থী হিসেবে উল্লেখ করে কি সরকার কোনও অর্ডার দিয়েছে? শরণার্থী একটা আইনি শব্দ। সরকার সেটা ঘোষণা করে থাকে। যদি কাউকে শরণার্থী না বলা হয়, সে যদি অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করে থাকে, তাহলে তাদের রাখার কী দায় আছে আমাদের?”
“অনুপ্রবেশকারীদের জন্য কি রেড কার্পেট বিছিয়ে দেব?”
এরপর আইনজীবী দাবি করেন, শরণার্থী তকমা চাওয়া হচ্ছে না, ভারতে রাখার কথাও বলা হচ্ছে না। শুধু আইন মেনে যাতে রোহিঙ্গাদের দেশ থেকে বের করা হয়, সেই আর্জিই জানান তিনি। হেফাজতে থেকে নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার অভিযোগই মূলত জানান তিনি। তাঁর মতে, এভাবে তুলে নিয়ে যাওয়া হলে, দেশের নিরাপত্তাও বিঘ্নিত হতে পারে।
রোহিঙ্গা সংক্রান্ত অন্যান্য মামলার সঙ্গে এই মামলাটিও শোনা হবে বলে জানিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, “যদি আইনি স্টেটাস না থাকে, তাহলে সে একজন অনুপ্রবেশকারী। যদি কোনও অনুপ্রবেশকারী ভারতে আসে, তাহলে কি আমরা তাদের জন্য রেড কার্পেট বিছিয়ে স্বাগত জানাব? বলব যে আমরা তোমাদের সব সুবিধা দেব?” তাদের ফিরিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনও বাধা নেই বলেই মত শীর্ষ আদালতের।
‘টানেল খুঁড়ে, প্রাচীর টপকে এসে খাবার-আশ্রয় চান?’
প্রধান বিচারপতি অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ে রীতিমতো অসন্তোষ প্রকাশ করেন। বলেন, “প্রথমত অবৈধভাবে সীমান্ত পার করে প্রবেশ করেছে, অবৈধভাবে টানেল খুঁড়েছে অথবা প্রাচীর টপকে এসেছে। আর তারপর বলছে, আমরা এসেছি, এবার আমাদের আইন অনুযায়ী রাখা হোক, আমাকে খাবার দেওয়া হোক, আমাকে আশ্রয় দেওয়া হোক, আমার সন্তানকে শিক্ষা দেওয়া হোক। আমাদের আইনের বিস্তার কি এভাবে হওয়া সম্ভব?”
আইনজীবীর বক্তব্য, আইনের বিস্তার চাই না। শুধু নির্বাসনের নিয়ম মানার কথা বলা হচ্ছে।
‘আমাদের দেশের দরিদ্র মানুষের প্রতি মনোযোগ দেওয়া কি জরুরি’
অনুপ্রবেশকারীদের সুবিধা কেন দেওয়া হবে, এই প্রশ্ন তুলে দেশের দরিদ্র জনসংখ্যার কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সূর্য কান্ত। তিনি বলেন, “আমাদের দেশে দরিদ্র মানুষ আছে। তারা আমাদের দেশের নাগরিক। তারা কি কোনও সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার যোগ্য নয়? তাদের প্রতি মনোযোগ দেওয়া কি জরুরি নয়? তবে অবৈধভাবে এলেও থার্ড ডিগ্রি মেথড প্রয়োগ করার কথা বলছি না।”
চলতি বছরের মে মাসে একটি মামলা হয়েছিল সুপ্রিম কোর্টে। সেখানে মামলাকারীদের দাবি ছিল, শিশু এবং মহিলা-সহ ৪৩ জন রোহিঙ্গাকে আন্দামান সাগর হয়ে মায়ানমারে বিতাড়ন করা হচ্ছে। ওই সময় মামলাকারীদের ধমকে সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল, “আপনারা আজগুবি গল্প নিয়ে আসছেন।” পরে জুলাই মাসে একটি মামলাতেও সুপ্রিম কোর্ট প্রশ্ন তুলেছিল, রোহিঙ্গারা শরণার্থী নাকি অনুপ্রবেশকারী?
