নয়া দিল্লি: নির্বাচনী বন্ড অনুদান দিয়ে কি বিভিন্ন সংস্থা এবং রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে কোনও বোঝাপড়া হয়েছিল? এর তদন্ত চেয়ে আদালতের নজরাধীনে একটি বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করার আবেদন করা হয়েছিল সুপ্রিম কোর্টে। শুক্রবার সেই আবেদন খারিজ করে দিল আদালত। সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, এই আদেশ দেওয়ার সময় এখনও আসেনি এবং এটা করা আদালতের পক্ষে উপযুক্তও হবে না। প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে, কেন্দ্রীয় সরকারের ইলেক্টোরাল বন্ড প্রকল্পটি বাতিল করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। আদালত বলেছিল এই প্রকল্পটি ‘অসাংবিধানিক’। একই সঙ্গে আদালত পর্যবেক্ষণ করেছিল, এই প্রকল্পে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা এবং ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে গোপন সংঝোতা করার জায়গা রয়েছে। বিরোধী দলগুলিও পরবর্তী সময়ে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে বন্ডে অনুদান নিয়ে বিভিন্ন সংস্থাকে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের বরাত পাইয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছিল।
নির্বাচনী বন্ড প্রকল্পের মাধ্যমে বেনামে রাজনৈতিক দলগুলিকে অনুদান দেওয়া যেত। ব্যক্তিগতভাবে এবং কর্পোরেট সংস্থা হিসেবে, দুইভাবেই এইবন্ড কেনা যেত। বন্ড বিক্রি করত এসবিআই। সুপ্রিম কোর্ট এসবিআই-কে অবিলম্বে নির্বাচনী বন্ড বিক্রি করা বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিল। সেই সঙ্গে, কারা কোন তারিখে বন্ড কিনেছে এবং কোন দল কত টাকার বন্ড পেয়েছে, তার সম্পূর্ণ তালিকা প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছিল। এসবিআই-এর থেকে পাওয়া সেই তথ্য প্রকাশ করা হয়েছিল নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে। দেখা গিয়েছিল, লোকসানে চলছে এমন বেশ কিছু অনামী সংস্থাও নির্বাচনী বন্ড কিনেছে এবং রাজনৈতিক দলগুলিকে তহবিল দিয়েছে।
সেই সময়ই প্রশ্ন উঠেছিল, কেন কোনও লোকসানে চলা সংস্থা, কোটি কোটি টাকার তহবিল দেবে রাজনৈতিক দলগুলিকে? তাহলে কি এগুলো কোনও ভুয়ো সংস্থা? ভুয়ো সংস্থাগুলিকে সামনে রেখে অন্য কোনও সংস্থা টাকা দিচ্ছে? এই লোকসানকারী সংস্থাগুলি যারা রাজনৈতিক দলগুলিকে অনুদান দিয়েছে, তাদের তহবিলের উত্সের তদন্ত চেয়েই সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করা হয়েছিল। একই সঙ্গে, রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে বিশেষ বোঝাপড়ার ভিত্তিতে অনুদান দেওয়া হয়েছে বলে যদি প্রমাণিত হয়, সেই ক্ষেত্রে সেই অর্থ পুনরুদ্ধারের বিষয়েও আদালতের নির্দেশিকা চাওয়া হয়েছিল এই আবেদনে।
গত ফেব্রুয়ারিতে, এই প্রকল্প বাতিল করার সময়ে, প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ বলেছিল, স্বাধীনভাবে ভোট দেওয়ার জন্য কোনও ভোটারের রাজনৈতিক দলগুলির অনুদান সংক্রান্ত তথ্য জানা অপরিহার্য। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত করতে আইনেরও পরিবর্তন করা হয়েছিল। আগে, শুধুমাত্র লাভজনক সংস্থাগুলিই অনুদান দিতে পারত। এই বন্ড প্রকল্প চালুর সময়ে সেই বাধ্যবাধকতা তুলে নেওয়া হয়। এই পরিবর্তন অসাংবিধানিক বলে জানিয়েছিলেন প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়।