SC On Delhi Air Pollution: ‘ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে কৃষকদের দোষারোপ করা’, দিল্লির বায়ুদূষণ নিয়ে ‘সুপ্রিম’ ধমক
Supreme Court on Blaming Farmers for Pollution: বাকি রাজ্যকে দোষারোপ না করে, প্রথমে দিল্লির উপরই নজর দেওয়ার পরামর্শ দেন প্রধান বিচারপতি। আগামী দুই-তিনদিনের মধ্যে যাতে বাতাসে দূষণের পরিমাণ হ্রাস পায়, তার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ করার পরামর্শও দেন তিনি।
নয়া দিল্লি: দিল্লির বায়ুদূষণের (Delhi Air Pollution) জন্য জমিতে ফসলের অবশিষ্ট অংশ পোড়ানো (Stubble Burning)-কে কেন্দ্র করেই কৃষকদের দোষারোপ করতেই বেজায় চটল সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court)। দিল্লির বায়ুদূষণের জন্য রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারের তরফে ন্যাড়াপোড়াকেই দোষারোপ করা হলে, শীর্ষ আদালতের তরফে বলা হয়, “বর্তমানে সব বিষয়ে কৃষকদের দোষারোপ করাই ফ্যাশনে তৈরি হয়েছে।”
দীপাবলির পর থেকেই ধোঁয়াশার (Smog) চাদরে ঢাকা পড়েছে দিল্লি (Delhi)। নিত্যদিনই চড়ছে দূষণের পারদ। এই পরিস্থিতিতেই সুপ্রিম কোর্টে দিল্লির দূষণ নিয়ে একটি মামলার শুনানি শুরু হয় শনিবার। প্রধান বিচারপতি এনভি রমণ, বিচারপতি সূর্যকান্ত ও বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চের তরফে বলা হয়, “দিল্লির বায়ুদূষণের জন্য কেবল ফসলের অবশিষ্ট অংশ পোড়ানোই নয়, গাড়ি থেকে দূষণ, শিল্পাঞ্চল থেকে নির্গত বায়ু থেকে দূষণ সহ একাধিক কারণও দায়ী”। বাজি ফাটানোর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা থাকলেও দীপাবলির সময়ে দিল্লি পুলিশ বিশেষ কোনও ভূমিকা পালন না করায়, তা নিয়েও সমালোচনা করেন প্রধান বিচারপতি ও বাকি দুই বিচারপতি।
শুনানির শুরুতেই কেন্দ্রের তরফে হাজির সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা ফসলের অবশিষ্ট অংশ পোড়ানো, যা ন্যাড়াপোড়া নামে পরিচিত, তা নিয়ে বলতে শুরু করেন। তিনি বলেন, “বিগত কয়েকদিন ধরেই পঞ্জাবে যে পরিমাণে ফসলের অবশিষ্ট অংশ পোড়ানো হচ্ছে, তার কারণেই দিল্লির বাতাস বিষিয়ে উঠেছে। পঞ্জাব সরকারের সক্রিয় হয়ে ওঠা প্রয়োজন।”
এর জবাবেই প্রধান বিচারপতি এনভি রমণ বলেন, “আপনি এমনভাবে বলছেন যেন কৃষকরাই শুধু দায়ী। দিল্লির মানুষেরা কী করেছে? বাজি পোড়ানো, গাড়ি থেকে হওয়া দূষণ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে একাধিক পদক্ষেপের কী হল?” প্রধান বিচারপতির তিরস্কারে সলিসিটর জেনারেল জানান, তিনি একে একে প্রতিটি বিষয়েই কথা বলবেন। বায়ুদূষণের প্রায় ৩০ শতাংশই ন্যাড়াপোড়ার কারণে হয়। পরে তিনি ফসলের অবশিষ্ট অংশ পোড়ানো বন্ধ করতে কেন্দ্রের একাধিক পদক্ষেপ সম্পর্কেও ধাপে ধাপে আলোচনা করেন। শীর্ষ আদালতের তরফে জানতে চাওয়া হয়, বাস্তবে এই পদক্ষেপগুলি কতটা গৃহিত হয়েছে। মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে আগামী সোমবার। ওই দিনই এই বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য শীর্ষ আদালতে জমা দেওয়া হবে।
দিল্লির বাতাসে বিষাক্ত পদার্থের পরিমাণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, “দূষণের কিছু শতাংশ ন্যাড়া পোড়ার কারণে হলেও বাকিটা বাজি পোড়ানো, শিল্পাঞ্চল থেকে নির্গত বিষাক্ত ধোঁয়া, ধুলোর কারণেই হচ্ছে। দ্রুত এই দূষণ কমানোর ব্য়বস্থা করতে হবে। কীভাবে বাতাসের গুণমানের মাত্রা ২০০ পয়েন্ট কমানো যাবে, তা জানান। যদি প্রয়োজন হয়, তবে দুদিনের লকডাউনের মতো সিদ্ধান্তও নিন। আমরা সকলা সাতটার সময়ে শিশুদের এই বিষাক্ত বাতাসের মধ্যে দিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।”
বাকি রাজ্যকে দোষারোপ না করে, প্রথমে দিল্লির উপরই নজর দেওয়ার পরামর্শ দেন প্রধান বিচারপতি। আগামী দুই-তিনদিনের মধ্যে যাতে বাতাসে দূষণের পরিমাণ হ্রাস পায়, তার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ করার পরামর্শও দেন তিনি। ন্যাড়াপোড়া নিয়ে বিতর্ক থাকায় তিনি বলেন, “আপনারা পঞ্জাব ও হরিয়ানার সঙ্গে কেন কথা বলছেন না ন্যাড়াপোড়া বন্ধ করার জন্য?” জবাবে সলিসিটর জেনারেল জানান, আগামী সপ্তাহেই পঞ্জাব ও হরিয়ানার মুখ্যসচিবদের সঙ্গে যৌথ বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে।
এ দিকে, দিল্লি সরকারের তরফে উপস্থিত আইনজীবী রাহুল মেহরাও বায়ুদূষণ সম্পর্কে বলেন, “৩০ সেপ্টেম্বর দিল্লিতে বাতাসের গুণমানের মাত্রা ছিল ৮৪, বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৭৪-এ। আপনি যদি সিগারেট না খান, তবুও দিনে ২০টি সিগারেট খেলে যে পরিমাণ ক্ষতি হয় শরীরের, তা বর্তমানে হচ্ছে। ফসলের অবশিষ্ট অংশ পোড়ানোর কারণেই হয়তো এটা হচ্ছে।”
তাঁকে মাঝপথেই থামিয়ে বিচারপতি সূর্যকান্ত বলেন, “বর্তমানে এটা ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে যে কৃষকদের দোষারোপ করা। তা দিল্লি সরকারই হোক বা অন্য কেউ। বাজি পোড়ানোতেও নিষেধাজ্ঞা জারি ছিল, তার কী হল? বিগত সাতদিন ধরে কী হচ্ছে? দিল্লি পুলিশই বা কী করছিল? ”
শীর্ষ আদালতের চরম সমালোচনায় আইনজীবী রাহুল মেহরা জানান, আদালতের উল্লেখ করা বিষয়গুলি রাজ্য সরকারের কাছে তুলে ধরা হবে। একা কৃষকদের দোষারোপ করা হয়নি। ১৫ নভেম্বর পরবর্তী শুনানির দিন সরকারকে দূষণ প্রতিরোধে গৃহিত পদক্ষেপ সম্পর্কে জানাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: Madhya Pradesh: আগামী সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রীর হাতে উদ্বোধন, তার আগেই নাম বদল বিশ্বমানের রেলস্টেশনের