নয়া দিল্লি: মোদী পদবি নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে চরম বিপদে পড়েছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী (Rahul Gandhi)। ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনের (Lok Sabha Election 2019) প্রচারে কর্নাটকে গিয়ে রাহুল গান্ধী বলেছিলেন, ‘মোদী পদবির সকলে চোর হয় কেন? তা সে নীরব মোদীই হোক বা ললিত মোদী কিংবা নরেন্দ্র মোদী’। তাঁর এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতেই রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মানহানির মামলা (Criminal Defamation Case) করেন সুরাটের বিজেপি বিধায়ক পূর্ণেশ মোদী। সেই মামলায় গত ২৩ মার্চ সুরাট ম্যাজিস্ট্রেট আদালত রাহুল গান্ধীকে দোষী সাব্যস্ত করা হয় এবং দুই বছরের কারাদণ্ডের সাজা দেওয়া হয়। সাজা পাওয়ার পরই সাংসদ পদও খোয়ান রাহুল গান্ধী। সুরাট আদালতের ওই রায়কে চ্যালেঞ্জ করেই গত ৩ এপ্রিল সুরাট দায়রা আদালতে আর্জি জানিয়েছিলেন রাহুল। এ দিন রাহুলের সেই আবেদন খারিজ করে দেয় দায়রা আদালত। এবার কী করবেন রাহুল গান্ধী? তবে কি জেলের ভাতই লেখা রয়েছে তাঁর কপালে? রাহুল গান্ধী নিজে কিছু না বললেও, কংগ্রেসের তরফে জানানো হয়েছে, তারা আইনানুযায়ী যাবতীয় পন্থা অবলম্বন করবেন।
সামনেই কর্নাটকের বিধানসভা নির্বাচন। আগামী বছরে রয়েছে লোকসভা নির্বাচনও। কিন্তু মানহানি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ার কারণে নির্বাচনে দাঁড়াতে পারবেন না রাহুল গান্ধী। দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় লোকসভার সদস্যপদও খুইয়েছেন তিনি। এদিনের মামলার রায় রাহুল গান্ধীর জন্য় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল, কারণ এই মামলায় সুরাট দায়রা আদালত যদি সাজার উপরে স্থগিতাদেশ দিত, তবে লোকসভায় তিনি স্পিকারের কাছে নিজের সাংসদ পদ ফিরে পাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারতেন। কিন্তু আদালত রাহুল গান্ধীর সাজার উপরে স্থগিতাদেশ ঘোষণার আর্জি খারিজ করে দেওয়ায় রাহুলকে আপাতত সংসদ থেকে বিতাড়িতই থাকতে হবে। শূন্য পড়ে থাকবে তাঁর ওয়েনাডের আসন।
We will continue to avail all options still available to us under the law. @DrAMSinghvi will brief the media on Rahul Gandhi’s appeal at 4pm.
— Jairam Ramesh (@Jairam_Ramesh) April 20, 2023
বৃহস্পতিবার সুরাট দায়রা আদালত রাহুল গান্ধীর আর্জি খারিজ করে দেওয়ায় বর্তমানে রাহুল গান্ধীর কাছে একটাই পথ খোলা রয়েছে, তা হল উচ্চতর আদালতে আবেদন। এক্ষেত্রে রাহুল গান্ধী দায়রা আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে গিয়ে গুজরাট হাইকোর্টে আবেদন করতে পারেন।
মানহানি মামলায় সুরাট আদালতের রায়ের পরই কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ জানিয়েছেন, মানহানি মামলায় সাজা থেকে রাহুল গান্ধী যাতে অব্যাহতি পান, তার জন্য তারা সমস্ত বিকল্প পদ্ধতি গ্রহণ করবে। আজ বিকেল চারটেয় কংগ্রেস নেতা তথা আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি সাংবাদিক বৈঠক করে রাহুল গান্ধীর মানহানি মামলায় পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে জানাবেন।
উচ্চতর আদালতের তরফে যদি সুরাট ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের রায়ের উপরে স্থগিতাদেশ দেয়, তার অর্থ এই নয় যে রাহুল গান্ধীর কারাদণ্ডের সাজা বাতিল করে দেওয়া হল। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৮৯ ধারা অনুযায়ী, মামলার শুনানি বাকি থাকলেও, উচ্চতর আদালত সাজা বাতিল করে দিতে পারেন। এটা জামিনে মুক্তি পাওয়ারই সমান।
যদি আজই রাহুল গান্ধী সুরাট ম্যাজিস্ট্রেট আদালত বা দায়রা আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে গুজরাট হাইকোর্টে আবেদন করেন এবং হাইকোর্ট সেই সাজার উপরে স্থগিতাদেশ ঘোষণা করে, তবে রাহুল গান্ধী নিজের সাংসদ পদ ফেরানোর জন্য আবেদন করতে পারেন। ২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্ট ‘লোক প্রহরী বনাম কেন্দ্রীয় সরকার’ মামলায় রায়দানে জানিয়েছিল, যে দিন থেকে আদালত সাজার উপরে স্থগিতাদেশ ঘোষণা করবে, সেদিন থেকে সাংসদ পদ খারিজও বাতিল হয়ে যাবে।
প্রসঙ্গত, জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ৮(৩) ধারায় বলা হয়েছে, ফৌজদারি অপরাধে দু’বছরের বেশি কারাদণ্ডপ্রাপ্ত কোনও ব্যক্তি সাজা ঘোষণার দিন থেকেই জনপ্রতিনিধি হওয়ার অধিকার হারাবেন। মুক্তির পর অন্তত ছয় বছর তিনি নির্বাচনে দাঁড়াতে পারবেন না। কিন্তু উচ্চতর আদালত যদি রায়ের উপর স্থগিতাদেশ দেয়, তবে সাংসদ পদ ফিরে পাওয়া যেতে পারে। এর সাম্প্রতিক উদাহরণ হল এনসিপি সাংসদ মহম্মদ ফয়জ়ল। খুনের চেষ্টার অভিযোগে নিম্ন আদালতে সাজাপ্রাপ্ত লক্ষদ্বীপের সাংসদ মহম্মদ ফয়জ়লের সাজার উপরে কেরল হাই কোর্ট নিম্ন আদালতের রায়ে স্থগিতাদেশ দেওয়ার পরই সম্প্রতি তিনি লোকসভার সদস্যপদ ফিরে পেয়েছেন।