নয়াদিল্লি : ‘মেজ বোন’ মুখ ফিরিয়েছে। এখন ‘বড় বোনের’ একমাত্র ত্রাতা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। ভবানীপুর কেন্দ্র তাঁর হাতের তালুর মতো চেনা। তৃণমূলের দুর্ভেদ্য গড়। মমতার বিরুদ্ধে প্রার্থী হওয়া মানে স্নায়ুর চাপ বরাবরই আলাদা মাত্রার। আর এখন ‘বড় বোন’ ভবানীপুরেও ‘ছোট বোন’ নন্দীগ্রামের পুনরাবৃত্তি করতে চাইছে গেরুয়া শিবির। তাই প্রার্থীও হতে হবে হেভিওয়েট। সেই জন্য ভবানীপুরের জল মেপে পা ফেলতে চাইছেন দিলীপ ঘোষ, শুভেন্দু অধিকারীরা। কাকে করা হবে ভবানীপুরের পদ্ম প্রার্থী, তা নিয়ে আলোচনা করতে দিল্লি উড়ে গিয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। আজ দিল্লিতে অমিত শাহ, জে পি নাড্ডার সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে তাঁর।
গেরুয়া শিবির হাবে-ভাবে এটা বুঝিয়ে দিয়েছে, ভবানীপুর সহজে মমতাকে ছেড়ে দেওয়া হবে না। কিন্তু লড়াইটা এবার আরও কঠিন। প্রথমত, সামনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর দ্বিতীয়ত, ভবানীপুরের মাটিতে একবার পরীক্ষা দিয়ে ফেলেছে বিজেপি। দুঁদে শোভনদেবের কাছে ডাহা ফেল করেছেন রুদ্রনীল ঘোষ। সুতরাং, ভবানীপুরে বিজেপির শক্তি কতটা, তা আগেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। এখন ভবানীপুর থেকে মমতার বিরুদ্ধে কাকে প্রার্থী করলে, অন্তত কাটায় কাটায় টক্কর দেওয়া যাবে, সেই উত্তরই খোঁজা হতে পারে দিল্লিতে।
হেস্টিংস সূত্রে খবর, মমতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য এখনও পর্যন্ত নয় জনের নাম ঠিক করেছে বঙ্গ বিজেপি। সেই নামের তালিকা ইতিমধ্যেই পাঠানো হয়ে গিয়েছে দিল্লির হাইকমান্ডের কাছে। শোনা যাচ্ছে, প্রস্তাবিত নামের তালিকায় রয়েছেন তথাগত রায়। ত্রিপুরা ও মেঘালয়ের রাজ্যপালের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতির পর এখনও পর্যন্ত গেরুয়া শিবিরে কোনও বড় দায়িত্ব পাননি তিনি। দীর্ঘদিনের পোড় খাওয়া এই তথাগতর রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার উপর ভরসা রাখছে বিজেপি। সম্ভবত, সেই কারণেই বর্ষীয়ান দুঁদে নেতার নাম পাঠানো হয়েছে দিল্লিতে।
এছাড়া নাম উঠে আসছে ভবানীপুর কেন্দ্রে শোভনদেবের কাছে পরাজিত রুদ্রনীল ঘোষেরও। ভবানীপুরে পরাজিত হলেও নির্বাচনী প্রচারে ভাল চাপে ফেলেছিলেন শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়কে। নিয়মিত রোড শো, বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চাওয়া… সেই সব নজর এড়িয়ে যায়নি বিজেপি রাজ্য নেতৃত্বের। এর পাশাপাশি, বোলপুরের পরাজিত বিজেপি প্রার্থী অনির্বান গঙ্গোপাধ্য়ায়, এন্টালি কেন্দ্রের পরাজিত প্রার্থী প্রিয়ঙ্কা টিবরেওয়ালকেও আর একবার সুযোগ দিতে চাইছেন দিলীপবাবুরা। বেলেঘাটায় নিহত বিজেপি প্রার্থী অভিজিৎ সরকারের দাদা বিশ্বজিৎ সরকারের নামও নাকি পাঠানো হয়েছে দিল্লিতে।
এদিকে শুভেন্দু অধিকারী সম্প্রতি মমতার উদ্দেশে বার্তা দিয়ে রেখেছিলেন। বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, বিনা যুদ্ধে ভবানীপুরের মাটি ছাড়বে না পদ্ম শিবির। নন্দীগ্রামের পুনরাবৃত্তির হুঙ্কার দিয়েছিলেন, “দল যদি আমাকেই ভবানীপুর থেকে লড়তে বলে…” আর এরপর থেকেই জল্পনা বাড়তে শুরু করেছে। তাহলে কি শুভেন্দু অধিকারীকেই প্রার্থী করবে বিজেপি? তবে সেই জল্পনাকে খুব একটা গুরুত্ব দিতে চাইছেন না রাজ্য রাজনীতির পর্যবেক্ষকরা। নন্দীগ্রামের ‘ভূমিপুত্র’-র কাছে নতুন করে পরীক্ষায় বসা মানে বিধানসভায় বিরোধী দলনেতার আসন ছেড়ে দেওয়া। খুব সম্ভবত সেটা করতে চাইবেন না শুভেন্দু।
আরও পড়ুন : বাংলার ৬১ বিজেপি বিধায়কের নিরাপত্তা ফিরিয়ে নিল কেন্দ্র, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের চিঠি এল নবান্নে