বারাণসী: তাঁরা প্রাণ বাঁচান। অসুস্থ রোগীকে সুস্থ করে তোলেন। মুমূর্ষু রোগীকে সারিয়ে তোলার পর পরিজনদের মতো তাঁদেরও মনের মধ্যে স্বস্তির ঢেউ বয়ে যায়। সাধারণ মানুষের কাছে চিকিৎসকরা যেন সাক্ষাৎ ঈশ্বর। তবে অনেক সময় চিকিৎসার খরচ জোগাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় সাধারণ মানুষকে। চিকিৎসকের ফি দিতে গিয়ে পকেটে টান পড়ে। সেইসময় ফের চর্চায় উত্তর প্রদেশে বসবাসকারী এক বাঙালি চিকিৎসক। যিনি পদ্মশ্রী সম্মান পেয়েছেন। অবসরের পরও নেননি ‘অবসর’। বিনা পয়সায় চিকিৎসা করে চলেছেন সাধারণ মানুষের।
পদ্মশ্রী সম্মান প্রাপক ওই চিকিৎসক হলেন তপন কুমার লাহিড়ী। কার্ডিওলজিস্ট সার্জন। জন্ম ১৯৪১ সালের ৩ জানুয়ারি। কলকাতায়। পড়াশোনায় বরাবরই ভাল। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে এমবিবিএস পাশ করেন। তারপর উচ্চশিক্ষার জন্য পাড়ি দেন ইংল্যান্ড। সেখানে ১৯৬৯ সালে কার্ডিয়াক সার্জারিতে এফআরসিএস করেন। এরপর ১৯৭২ সালে থোরাসিক সার্জারিতে এমসিএইচ ডিগ্রি লাভ করেন।
দেশে ফিরে ১৯৭৪ সালে বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সে রিডার পদে যোগ দেন। সেইসময় তাঁর বেতন ছিল ২৫০ টাকা। ধীরে ধীরে সহকারী অধ্যাপক, অধ্যাপক এবং কার্ডিওথোরাসিক সার্জারি বিভাগের প্রধান হন তিনি। ১৯৯৭ সাল থেকে বেতন নেওয়া বন্ধ করে দেন। সেইসময় সবমিলিয়ে তাঁর বেতন এক লক্ষের বেশি ছিল। ২০০৩ সালে বিএইচইউ থেকে অবসর গ্রহণ করেন। তারপর থেকে ইমেরিটাস অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেন। নিজের প্রয়োজন মেটাতে ন্যূনতম টাকা রেখে পেনশনের বাকি অর্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলে দেন তিনি।
অবসরের পরও আমেরিকার একাধিক বড় হাসপাতাল তাঁকে সেদেশে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। কিন্তু, সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন চিকিৎসক তপন কুমার লাহিড়ী। স্পষ্ট জানিয়ে দেন, দেশে থেকেই অসহায় মানুষের সেবা করবেন। তাই তো, অবসরের পরও বেনারস হিন্দু ইউনির্ভাসিটিতে নিয়মিত দেখা যায় তাঁকে। সকালে হেঁটে হেঁটে বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছন। আবার হেঁটেই ফিরে আসেন। এর জন্য কোনও পারিশ্রমিক নেন না। শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে থাকার সুবিধাটুকু গ্রহণ করেছেন।
চিকিৎসা ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য ২০১৬ সালে তাঁকে পদ্মশ্রী সম্মান দেয় কেন্দ্রীয় সরকার। পদ্মশ্রী সম্মান পাওয়ার পর তিনি বলেছিলেন, “এই সম্মানের জন্য সরকারকে ধন্যবাদ। ভগবান বিশ্বনাথ ও মা অন্নপূর্ণার আশীর্বাদে আমার শেষ সময় পর্যন্ত রোগীদের সেবা করব।” মানুষের সেবার করার জন্যই বিয়ে না করার সিদ্ধান্তও নেন তিনি।
তাঁর অনেক জুনিয়র চিকিৎসক যখন দামি গাড়িতে চড়ে যান, তখনও হেঁটে যেতে দেখা যায় চিকিৎসক লাহিড়ীকে। তাঁর কোনও চারচাকা গাড়ি নেই। বারাণসীর মানুষের কাছে তিনি যেন সাক্ষাৎ ঈশ্বর।
আরও খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Tv9 বাংলা অ্যাপ (Android/ iOs)