নয়া দিল্লি : দশকের পর দশক ধরে ভারতীয় ক্রীড়াবিদরা নিজেদের কঠোর পরিশ্রম, মানসিক দৃঢ়তা এবং হার না মানা জেদের মধ্যে দিয়ে সাফল্য অর্জন করেছেন। দেশের নাম উজ্জ্বল করেছেন। অলিম্পিক্স, কমনওয়েলথ গেমস, এশিয়ান গেমস… সব জায়গাতেই সাফল্য এসেছে। তবে ভারতের পদক সংখ্যা বাকি দেশগুলির তুলনায় অনেকটা পিছিয়ে থাকে। হকি বাদ দিলে ২০০৮ সালে বেজিং অলিম্পিক্সে ভারতে প্রথম কোনও ব্যক্তিগত ইভেন্টে স্বর্ণপদক আসে। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত ক্রীড়া পরিকাঠামোর অভাব এবং ক্রীড়াবিদদের জন্য পর্যাপ্ত তহবিল ও সরকারি সহযোগিতার অভাব বার বার ফুটে উঠেছে। ভারতীয় ক্রীড়াবিদদের জন্য উন্নত মানের কোচিং এবং পরিকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য মোদী সরকার চালু করেছে টার্গেট অলিম্পিক পোডিয়াম স্কিম। ক্রীড়াবিদদের বহুমুখী-স্পোর্টিং ইভেন্টে সাফল্য অর্জনের কথা মাথায় রেখেই এই বিশেষ স্কিম চালু করেছে কেন্দ্র।
কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার পরই ক্রীড়াবিদদের অলিম্পিক্সের প্রস্তুতির কথা মাথায় রেখে দ্রুত এই বিষয়ে আমূল পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। চালু করা হয় টার্গেট অলিম্পিক পোডিয়াম স্কিম (TOPS)। এই স্কিমের উদ্দেশ্য ছিল, ২০১৬ সালে রিও অলিম্পিক্স এবং ২০২০ সালে টোকিয়ো অলিম্পিক্স এবং তার পরেও প্রতিভাবান অ্যাথলিটদের খুঁজে বের করা এবং তাঁদের সাহায্য করা। দেশের প্রতিটি প্রান্ত থেকে অ্যাথলিটদের খুঁজে বের করার প্রথম ধাপ ছিল ২০১৭-১৮ সালের খেলো ইন্ডিয়া স্কিম এবং তারপর ২০১৯ সালে ফিট ইন্ডিয়া মুভমেন্ট। স্পোর্টস অথরিটি অফ ইন্ডিয়া এই টার্গেট অলিম্পিক পোডিয়াম স্কিমের যথাযথ বাস্তবায়নের দায়িত্বে রয়েছে। স্পোর্টস অথরিটি অব ইন্ডিয়ার ডিরেক্টরের তত্ত্বাবধানে মিশন অলিম্পিক সেলও (MOC) শুরু করা হয়েছে। ভবিষ্যতের অলিম্পিক্সের জন্য ভারতীয় ক্রীড়াবিদদের তৈরি করার জন্য এক বিশাল কর্মযজ্ঞ শুরু হয় রিও অলিম্পিক্সের কয়েকদিন পর থেকে। প্রধানমন্ত্রী মোদীর তৈরি টাস্ক ফোর্সের দ্বারা জমা দেওয়া রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে মিশন অলিম্পিক্স সেল গঠিত হয়।
টার্গেট অলিম্পিক পোডিয়াম স্কিমের একটি বড় বিষয় হল স্বচ্ছ বাছাই প্রক্রিয়া। প্রথমে ক্রীড়াবিদদের স্থানীয় পর্যায়ের বিভিন্ন প্রতিযোগিতা থেকে বাছাই করা হয় এবং তারপর তাঁদের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ ও সুবিধা দেওয়া হয়। রিও অলিম্পিক্সে পদকজয়ী ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় পিভি সিন্ধু, কুস্তিগীর সাক্ষী মালিক, ২০১৮ সালের কমনওয়েলথ গেমস ও এশিয়ান গেমসে সোনাজয়ী কুস্তিগীর বজরং পুনিয়া, ২০১৮ সালের কমনওয়েলথ গেমসে পদকজয়ী কুস্তিগীর ভিনেশ ফোগাট, বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ ও কমনওয়েলথ গেমসে পদকজয়ী ভারোত্তোলক মীরাবাই চানু এবং টোকিয়ো অলিম্পিক্সে সোনাজয়ী নীরজ চোপড়া… প্রত্যেকেই এই টার্গেট অলিম্পিক পোডিয়াম স্কিমের থেকে উপকৃত হয়েছেন।
২০১৮ সালে টার্গেট অলিম্পিক পোডিয়াম স্কিমের মাধ্যমে প্যারা-অ্যাথলিটদের জন্য ৮.২ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছিল। এর মধ্যে অ্যাথলিটদের জন্য কোচিং ক্যাম্প, বিদেশি প্রশিক্ষণ এবং প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ইত্যাদি খাতে ব্যয় রয়েছে। এর পাশাপাশি কোর গ্রুপে বাছাই হওয়া ক্রীড়াবিদদের প্রতি মাসে ৫০ হাজার টাকা ভাতা এবং আনুষাঙ্গিক খরচ মেটানোর জন্য ডেভেলপমেন্ট গ্রুপের ক্রীড়াবিদদের প্রতি মাসে ২৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়।
টার্গেট অলিম্পিক পোডিয়াম স্কিমের বড় সাফল্যের প্রতিফলন হিসেবে ভারতীয় ক্রীড়াবিদরা ২০১৮ সালের এশিয়ান গেমসে ৬৯ টি পদক এনেছিলেন। এর মধ্যে ১৫ টি স্বর্ণ, ২৪ টি রৌপ্য ও ৩০ টি ব্রোঞ্জ পদক রয়েছে। এমনকী ২০১৮ সালে এশিয়ান প্যারা গেমসেও ভারত সর্বকালের সেরা সাফল্য পায়। ৭২ টি পদক আসে, যার মধ্যে ১৫ টি স্বর্ণ, ২৪ টি রৌপ্য ও ৩৩ টি ব্রোঞ্জ পদক এসেছে। বর্তমানে ৮০ জনেরও বেশি ক্রীড়াবিদ এবং ২০ জন প্যারা-অ্যাথলিট বর্তমানে কোর গ্রুপের সুবিধা পাচ্ছেন এবং প্রায় ২৫০ জন ক্রীড়াবিদ ডেভেলপমেন্ট গ্রুপের সুবিধা পাচ্ছেন।