পাটনা: ২০১৭ সালে আরজেডির হাত ছেড়েছিল নীতীশ কুমারের জেডিইউ। ২০১৫ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত জোটে থাকলেও পরে সেই সম্পর্ক ছিন্ন হয়। তবে গত কয়েক মাস ধরে একাধিক ঘটনায় ইঙ্গিত মিলেছিল, আবারও দূরত্ব কমছে পুরনো সঙ্গীর সঙ্গে। ২০২০-তে বিজেপির হাত ধরে জোট সরকার গঠন হলেও নীতীশ কুমার যে বিভিন্ন বিষয়ে অসন্তুষ্ট ছিলেন, এমন ইঙ্গিত আগেই মিলেছে। রাজনৈতিক মহলের মতে, এই সিদ্ধান্ত তো হঠাৎ নেননি নীতীশ। কয়েক মাস ধরে তেজস্বী যাদবের সঙ্গে পরিকল্পনা করেই ইস্তফা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নীতীশ কুমার।
কয়েক মাস পিছনে ফিরে তাকালেই দেখা যাবে, তেজস্বীর আয়োজন করা ইফতার পার্টিতে গিয়েছিলেন নীতীশ কুমার। শুধু উপস্থিত ছিলেন তাই নয়, তাঁর চলন বলে দিচ্ছিল, উপস্থিতিটা জানান দিতে চান তিনি। সংবাদমাধ্যমের সামনে তেজস্বীর সঙ্গে যে ভাবে কথাবার্তা বলছিলেন, তা তাৎপর্যপূর্ণ ছিল বলেই মনে করে রাজনৈতিক মহল। আবার নীতীশ কুমারের ইফতার পার্টিতেই সেই ছবির পুনরাবৃত্তি। তেজস্বী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। শুধু তাই নয়, আরজেডি নেতাকে গেট পর্যন্ত পৌঁছে দিতেও গিয়েছিলেন নীতীশ।
প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লালু প্রসাদের বিরুদ্ধে নতুন করে দুর্নীতির অভিযোগ সামনে আসে মাস কয়েক আগে। পশুখাদ্য কেলেঙ্কারি সংক্রান্ত মামলায় গত ফেব্রুয়ারি নতুন করে দোষী সাব্যস্ত হন লালু প্রসাদ। সে সময় বিরোধী হওয়া সত্ত্বেও নীতীশের দলের তরফে কোনও মন্তব্য করা হয়নি। নীতীশ কুমার নিজে কিংবা তাঁর দলের কোনও বিধায়ক কোনও মন্তব্য করেননি। মনে করা হয়, চুপ থেকেই তাঁরা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, লালুর বিরুদ্ধে কেন্দ্রের পদক্ষেপ তাঁরা মোটেই ভাল চোখে দেখছেন না।
শুধু তাই নয়, লালু যখন হাসপাতালে ভর্তি হন, তখন সব ব্যবস্থা নিজেই করে দিয়েছিলেন নীতীশ কুমার। তাঁকে দিল্লি নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থাও করেছিলেন তিনি।
গত জুন মাসে ছবিটা আরও খানিকটা স্পষ্ট হয়। বিধানসভা অধিবেশন চলছে অথচ, জোট সরকারের বিরুদ্ধে একটা কথাও বললেন না তেজস্বীরা।
বিহারে জাতিসুমারি করতে চেয়েছিলেন নীতীশ কুমার। বিজেপি প্রথম থেকেই তাতে আপত্তি জানায়। সে আপত্তি অগ্রাহ্য করেই গত মে মাসে নীতীশ কুমার সর্বদলীয় বৈঠক ডেকে জানিয়েছিলেন, বিহারে জাতিসুমারি হবে। আর নীতীশের সেই সিদ্ধান্তে যিনি সমর্থন করেছিলেন, তিনি হলেন তেজস্বী যাদব।
গত রবিবার মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখান তেজস্বী যাদব। সেই বিক্ষোভে আরজেডি শহরের গুরুত্বপূর্ণ সব রাস্তায় নামে। সব জায়গায় নিরাপত্তার যা ব্যবস্থা করা হয়েছিল, তাতে সরাসরি না থাকলেও নীতীশের প্রচ্ছন্ন সমর্থন ছিল বলেই মনে করছেন অনেকে।
এ সব থেকেই স্পষ্ট একজোট হওয়ার সিদ্ধান্ত রাতারাতি নেওয়া হয়নি। ঘনিষ্ঠতা ক্রমেই বাড়ছিল। আর মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে বিজেপি সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করলেন নীতীশ কুমার।