হায়দরাবাদ: দীর্ঘদিন ধরেই মেয়ে অসুস্থ। হোমিওপ্যাথি, অ্যালোপ্যাথি- কোনও চিকিৎসাতেই সুফল মিলছিল না। শেষ অবধি গ্রামেরই কয়েকজন প্রতিবেশী জানিয়েছিলেন এক ওঝার কাছে যেতে। তিনি নাকি ঝাড়-ফুঁকেই যাবতায় রোগ নিরাময় করেন। কঠিন থেকে কঠিনতর রোগের চিকিৎসা রয়েছে ওই সাধু বাবার কাছে। প্রথমে দ্বিধা করলেও, শেষে মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়েই গিয়েছিলেন ওই ‘বাবা’র কাছে। কিন্তু সেখানে গিয়ে মেয়ের পরিণতি যে এমন হবে, তা ভাবতেও পারেননি ১৮ বছরের ওই কিশোরীর মা-বাবা। ‘ভূত’ তাড়াতে মেয়েকে জ্বলন্ত কয়লার উপর দিয়ে হাঁটতে বাধ্য করে সাধু বাবা। মেয়েটির পায়ের তলা প্রায় পুরোটাই পুড়ে গিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে তেলঙ্গানায়। ইতিমধ্যেই ওই স্ব-ঘোষিত ধর্মগুরুকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৮ বছরের তেলঙ্গানার ভিকারাবাদ কুকিন্দা গ্রামের বাসিন্দা। প্রথম বর্ষের ওই ছাত্রী দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন। পরিবারের তরফে নানা চিকিৎসা করানো হলেও, কোনও সুফল মিলছিল না। ধীরে ধীরে কথা বলার ক্ষমতাও হারিয়ে যাচ্ছিল ওই কিশোরীর। উদ্বিগ্ন মা-বাবা প্রতিবেশীদের কাছ থেকে ভাল চিকিৎসকের খোঁজ জানতে চান। সেই সময়ই কয়েকজন প্রতিবেশী জানান যে নাসকাল গ্রামে এক ‘গডম্যান’ রয়েছেন, তিনি যাবতীয় রোগ নিরাময় করেন।
গ্রামবাসীদের কথাতেই ১৩ মে, গত শুক্রবার রফি নামক ওই স্বঘোষিত ধর্মগুরুর কাছে যান তাঁরা। ওই কিশোরীকে দেখার পরই ওই ধর্মগুরু জানান, তাঁর উপরে খারাপ আত্মা ভর করেছে। সেই কারণেই বারংবার অসুস্থ হয়ে পড়ছে ওই কিশোরী। ভূত তাড়ানোর জন্য তাঁর ঝাড়ফুঁকের প্রয়োজন রয়েছে বলেও জানান তিনি। পরিবারের তরফে সম্মতি জানাতেই ওই কিশোরীকে জ্বলন্ত কয়লার উপরে দাঁড় করানো হয় এবং হাঁটতে বলা হয়।
মেয়েটির পায়ের পাতা সম্পূর্ণ পুড়ে যাওয়ায় তাঁকে সঙ্গে সঙ্গে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। চিকিৎসকের জানিয়েছেন, মেয়েটির পায়ে থার্ড ডিগ্রি বার্ন হয়েছে। স্থানীয় এক সংবাদমাধ্যমে ঘটনাটি তুলে ধরার পরই নড়েচড়ে বসে পুলিশ। ওই কিশোরীর বয়ানের ভিত্তিতে অভিযুক্ত গডম্যানকে গ্রেফতার করা হয়। তাঁকে আপাতত বিচারবিভাগীয় হেফাজতে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশের সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতি শুক্রবারই স্থানীয় একটি দরগায় বসতেন ওই ‘গডম্যান’। দূর-দূরান্ত থেকে বহু মানুষ নানা সমস্যার সমাধানের জন্য আসতেন।