Indian Yellow: গোমূত্র থেকে তৈরি ভারতীয় রঙই ছড়িয়ে পড়েছিল সারা বিশ্বে, ছবি এঁকেছিলেন ভ্যান গগও

Mar 28, 2024 | 10:07 AM

Indian Yellow: একটা সময় গোমূত্রের কদর করত গোটা পৃথিবী। না চিকিৎসার জন্য নয়, একটি বিশেষ শেডের রং তৈরির জন্য। হ্যাঁ, বিশ্বাস করা কঠিন হলেও, এক সময় গোমূত্র থেকে তৈরি 'ইন্ডিয়ান ইয়োলো' রং ছড়িয়ে পড়েছিল গোটা বিশ্বে। বহু বিশ্বখ্যাত শিল্পী তাঁদের শিল্পকর্মে সেই রং ব্যবহার করেছেন।

Indian Yellow: গোমূত্র থেকে তৈরি ভারতীয় রঙই ছড়িয়ে পড়েছিল সারা বিশ্বে, ছবি এঁকেছিলেন ভ্যান গগও
গোমূত্র দিয়ে তৈরি রঙেই ছবি একেছিলেন ভ্যান গগ
Image Credit source: Twitter

Follow Us

নয়া দিল্লি: গোমূত্র – বর্তমান ভারতে কেউ কেউ দাবি করেন এর অনেক গুণ। বাকিরা সেই দাবি নস্যাৎ করে দেন। কোভিড-১৯ মহামারির সময়ও বহু মানুষ গোমূত্র পান করে করোনা দূর করতে চেয়েছিলেন। অনেক বাবাজি আবার দাবি করেন, গোমূত্রে কোনও গন্ধ নেই বলেই সেটি অত্যন্ত পবিত্র এবং তার চিকিৎসাগত গুণ রয়েছে। যদিও গবেষকদের মতে, এই দাবিগুলির কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। তবে একটা সময় এই গোমূত্রের কদর করত গোটা পৃথিবী। না চিকিৎসার জন্য নয়, একটি বিশেষ শেডের রং তৈরির জন্য। হ্যাঁ, বিশ্বাস করা কঠিন হলেও, এক সময় গোমূত্র থেকে তৈরি ‘ইন্ডিয়ান ইয়োলো’ রং ছড়িয়ে পড়েছিল গোটা বিশ্বে। বহু বিশ্বখ্যাত শিল্পী তাঁদের শিল্পকর্মে সেই রং ব্যবহার করেছেন।

‘ইন্ডিয়ান ইয়োলো’ হল হলুদ রঙেরই একটা বিশেষ শেড। কিছুটা কমলা ঘেঁষা হলুদ বলা যেতে পারে। ছবিতে উজ্জ্বল সোনালী রং আনতে, এই ইন্ডিয়ান ইয়োলো ব্যবহার করা হত। পঞ্চদশ শতাব্দীতে, ভারতেই প্রথম এই রঙের ব্যবহার শুরু হয়েছিল। মুঘল আমলের অনেক মিনিয়েচার পেইন্টিংয়ে এই রঙের ব্যবহার করা হয়েছিল। যাইহোক, পরে ভারত থেকে সমগ্র ইউরোপে ছড়িয়ে পড়েছিল এই রং। ইউরোপের অনেক বাঘা বাঘা চিত্রশিল্পীই বিভিন্ন ম্যুরাল, তৈলচিত্র এবং জলরঙে আঁকা ছবিতে ‘ইন্ডিয়ান ইয়োলো’ রং ব্যবহার করেছিলেন। সবথেকে স্পষ্ট নিদর্শন – ভ্যান গগের বিখ্য়াত ‘দ্য স্টারি নাইট’-এর হলদে চাঁদ এবং জোসেফ ম্যালর্ড উইলিয়াম টার্নারের ‘দ্য অ্যাঞ্জেল স্ট্যান্ডিং ইন দ্য সান’।

জোসেফ ম্যালর্ড উইলিয়াম টার্নারের আঁকা ‘দ্য অ্যাঞ্জেল স্ট্যান্ডিং ইন দ্য সান’

কীভাবে তৈরি হত এই রঙ? বিবিসির এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইন্ডিয়ান ইয়োলো রং কীভাবে তৈরি করা হয়, সেই বিষয়ে ১৮৮৩ সালে লন্ডনের ‘সোসাইটি অব আর্টসে’ একটি প্রতিবেদন পেশ করা হয়েছিল। প্রতিবেদনটি তৈরি করেছিলেন বিখ্যাত লেখক ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়। তিনি বিহারের মুঙ্গেরে গিয়েছিলেন ইন্ডিয়ান ইয়োলো রং তৈরির বিষয়ে গবেষণা করতে। জানা গিয়েছিল, গোমূত্রই ছিল ইন্ডিয়ান ইয়োলো রঙের ঔজ্জ্বলের রহস্য। তবে, যে কোনও গোমূত্র হলে হবে না। ওই নির্দিষ্ট রং আনার জন্য, গরুকে শুধুমাত্র আমের পাতা খাওয়ানো হত। গরুরা অনেক সময় আম পাতা খেতে চাইত না। তাই তারা যাতে ঝামেলা না করে আমপাতা খেয়ে নেয়, তার জন্য অনেক সময় গরুদের না খাইয়েও রাখা হত।

গোমূত্র থেকেই তৈরি হয়েচিল এই ভারতীয় রং

আমপাতা খাওয়া গরুদের মূত্র সংগ্রহ করে, তা একটি মাটির পাত্রে ফোটানো হত। এরপর তা ছেঁকে নিয়ে, শুকিয়ে নিলেই তৈরি হত ইন্ডিয়ান ইয়োলোর রঞ্জক। ছোট ছোট টুকরো আকারে সেগুলি তৈরি করা হত। চিত্রশিল্পীরা সেই টুকরোটি জল বা তেলের সঙ্গে মিশিয়ে প্রয়োজন অনুযায়ী ছবিতে ব্যবহার করতেন। এই রং তৈরির জন্য, না খাইয়ে রাখা-সহ গরুদের উপর বেশ কিছু অত্যাচার চলত। ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায় তাঁর প্রতিবেদনে সেই অত্যাচারের বিশদ বিবরণও দিয়েছিলেন। ১৯০৮ সালে, এই রঙ তৈরি নিষিদ্ধ করেছিল ইংরেজ শাসকরা। পরবর্তী কালে, রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করেই এই হলুদ রং প্রস্তুত করা হয়।

Next Article