জয়পুর: সাধারণত চোরদের (Thief) ধর্ম হল চুপিসাড়ে এসে সব জিনিসপত্র নিয়ে চম্পট দেওয়া। বাড়িতে সোনা, গয়না, টাকা, পয়সা, এমনকী খাবারও ফেলে রাখে না চোর বাবাজি। বাড়ির অতিথিদের মতো যাওয়ার আগে জানিয়ে যাওয়ার অভ্যেস বা স্বভাব তাঁদের নেই। তবে এবার একটু অন্য ধরনের চুরির ঘটনা দেখা গেল রাজস্থানের (Rajasthan) জয়সলমীর (Jaisalmer) থেকে। সেখানে একটি মিষ্টির দোকানে ঢুকে এক চোর মিষ্টি খেয়েছে। তবে সেখানেই শেষ নয়। বিদায় নেওয়ার আগে দুই পাতার একটি চিঠি লিখে রেখে গিয়েছেন মিষ্টির দোকানের (Sweet Shop) মালিকের জন্য। আর সেই চিঠি পড়ে পুলিশে অভিযোগও দায়ের করলেন না মিষ্টির দোকানের মালিক গোমারাম।
দৈনিক ভাস্করের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, জয়সলমীরের ভানিয়ানা শহরে গত ২৩ জানুয়ারির রাতে এই ঘটনা ঘটেছে। রাতে গোমারামের মিষ্টির দোকানে গিয়েছিলেন চোর বাবাজি। সেখানে মিষ্টি খাওয়ার পর দোকানের মালিকের জন্য একটি বার্তা রেখে গেলেন তিনি। গোমারাম জানিয়েছেন, ২৪ জানুয়ারি সকালে তিনি দোকান খোলেন। তারপর দোকানের অবস্থা দেখে হতভম্ব হয়ে যান তিনি। পিগি ব্যাঙ্ক গায়েব। চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে মিষ্টি। এই অবস্থা দেখেই পুলিশকে খবর দেন তিনি। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান ভানিয়ানা পুলিশ স্টেশন আধিকারিক অশোক কুমার। তল্লাশি চালিয়ে একটি চিঠি পাওয়া যায়। সেই চিঠি পড়ার পরই নিজের মন পরিবর্তন করেন গোমারাম।
পুলিশে আর অভিযোগ জানাননি তিনি।
গোমারাম পুলিশকে শুধু জানিয়েছেন, তিনি নিজেও একসময় খুব গরিব ছিলেন। তাঁর দোকানে চুরি হওয়ার কারণে তিনি খুব দুঃখিত। কিন্তু তিনি কোনও অভিযোগ দায়ের করতে চান না। তবে গোমারামের মোট ক্ষতির পরিমাণও খুব একটা কম নয়। তাঁর মিষ্টি ও ৭ হাজার টাকা মতো চুরি করা হয়েছে। গোমারাম জানিয়েছেন, চোরটি পুলিশকে একপ্রকার চ্যালেঞ্জ করে গিয়েছেন, কেউ তাঁর ক্ষতি করতে পারবেন না।
দুই পাতার চিঠিতে কী লিখেছেন সেই চোর?
“হ্যালো স্যার, আমি একজন ভাল মনের মানুষ। আমি চুরি করতে আপনার দোকানে ঢুকিনি। আমার ইচ্ছা পূরণ করতে এসেছি। হ্যাঁ, আমি আপনার দোকানের উপর থেকে তিনটি ইট সরিয়ে ভিতরে ঢুকলাম। এবং সেটাও খাওয়ার জন্য। আমি গতকাল থেকে কিছু খাইনি। আমি ক্ষুধার্ত। এই জন্য আমি আপনার দোকানে টাকা নিতে আসিনি বরং খিদে মেটাতে এসেছি।”
তিনি আরও লিখেছেন, “আমি জানি আপনি গরিব। তাই আমি আপনাকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য এই আবেদনটি লিখছি। হ্যাঁ, চুরি করার সময় আমি আমার পায়ে সামান্য আঘাত পেয়েছি। তাই এর জন্যও আপনাকে টাকা দিতে হবে। এইজন্য আমি আপনার টাকার পিগি ব্যাঙ্ক নিয়েছি। আমি আপনার দোকানের দুই টুকরো সাদা মিষ্টি ও দুই টুকরো আগ্রা পিঠে ছাড়া খুব বেশি কিছু খাইনি। শেষ কথাটা বলতে চাই, পুলিশকে ফোন করবেন না। তারা আমার ক্ষতি করতে পারবে না। বদলে তারা আপনার কাছ থেকে টাকা নেবে। সারা জীবন আমি আপনার কাছে কৃতজ্ঞ থাকব যে আপনি আমাকে এত সেবা করেছেন।” চিঠির নীচে আবার নিজেকে অতিথি হিসেবে সম্বোধন করেছেন চোর বাবাজি।