নয়াদিল্লি: বিশ্ব বিখ্যাত ম্যাগাজিন টাইমস। সেই ম্যাগাজিনে সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। যে প্রতিবেদনের ছত্রে ছত্রে সমালোচনা করা হয়েছে ভারতের। মূলত মানবাধিকার আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলা হয়েছে। আরও নির্দিষ্ট করে বললে শিখদের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে বলে অভিযোগ তোলা হয়েছে টাইমসের প্রতিবেদনে। পঞ্জাবের খালিস্তান পন্থী জঙ্গিনেতা অমৃতপাল সিংকে গ্রেফতার করতে গিয়ে এই মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলা হয়েছে। তা নিয়েই প্রবল সমালোচনার মুখে বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী এই ম্যাগাজিন। এক বিচ্ছিন্নবাদী নেতা, যিনি ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার ক্ষেত্রে অন্যতম কাঁটা হয়ে উঠেছেন, যাঁর বিরুদ্ধে মাদক কারবারির মতো ভয়ঙ্কর অভিযোগ রয়েছে, হিংসায় প্ররোচনা দিয়ে দেশের সার্বভৌমত্বকে আঘাত করার অভিযোগ যাঁর বিরুদ্ধে, সেই অমৃতপাল সিংয়ের গ্রেফতারির বিষয়ে প্রশ্ন তুলে বিপাকে টাইমস ম্যাগাজিন।
কে অমৃতপাল সিং?
অমৃতপাল সিং পঞ্জাবের এক ধর্মীয় সংগঠনের প্রধান। ‘ওয়ারিস পঞ্জাব দে’ নামের এক সংগঠন চালান তিনি। যে সংগঠন পঞ্জাব ভেঙে স্বাধীন খালিস্তান গঠনের কথা বলে। স্বঘোষিত খালিস্তানি নেতা অমৃতপালের বয়স ৩০ বছর। এই বয়সেই তাঁর কার্যকলাপ দেশের সরকারের কাছে চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিজেকে ‘ভিন্দ্রানওয়ালের অনুগামী’ বলে পরিচয় দেওয়া এই ধর্মীয় নেতা নানা প্ররোচনামূলক বক্তব্য রেখে আগেও সংবাদ শিরোনামে এসেছেন। জ্বালাময়ী ভাষণ দিয়ে পঞ্জাবের যুব সমাজের একাংশের মধ্যে বিচ্ছিন্নতাবাদী মনোভাবের চাষ অমৃতপাল করছেন বলে অভিযোগ। এর পাশাপাশি মাদরক চোরাচালান, অস্ত্র কারবারের মতো গুরুতর অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। গোয়েন্দাদের দাবি, বিদেশি শক্তির সাহায্যে এ সব করে যাচ্ছেন অমৃতপাল। এমনকি তাঁর সঙ্গে পাকিস্তান যোগের দাবিও করেছেন গোয়েন্দারা।
কী লেখা হয়েছে টাইমসের প্রতিবেদনে?
স্বঘোষিত খালিস্তানি নেতা অমৃতপাল সিং গত কয়েক সপ্তাহ ধরে পলাতক। তাঁর একাধিক ঘনিষ্ঠ সহযোগীকে গ্রেফতার করেছে পঞ্জাব পুলিশ। যদিও অমৃতপালের নাগাল এখনও মেলেনি। তাঁর খোঁজে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। এই সব অভিযান করতে গিয়েই মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে টাইমসের প্রতিবেদনে। অমৃতপালকে ঘিরে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বাঁধানো দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণে পঞ্জাব জুড়ে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করা হয়েছিল। সেই পদক্ষেপের সমালোচনাও করা হয়েছে টাইমসের ম্যাগাজিনে।
টাইমসের এই প্রতিবেদন ঘিরেই উঠছে প্রশ্ন। ভারত একটি গণতান্ত্রিক, সার্বভৌম রাষ্ট্র। জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সরকারের হাতে থাকে দেশ পরিচালনার ভার। কোনও ব্যক্তি যদি দেশবিরোধী কার্যকলাপে যুক্ত থাকেন, বা দেশের জাতীয় নিরাপত্তার পক্ষে ক্ষতিকর হয়ে ওঠেন, তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশি ব্যবস্থা নেওয়া কাম্য বলে মনে করেন দেশের সর্বস্তরের মানুষ। সেখানে অমৃতপালের মতো এক জন বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা, মাদক কারবারি, যুব সমাজের হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়ায় অভিযুক্ত। তাঁর হয়েই সওয়াল শোনা যাচ্ছে বিদেশি ম্যাগাজিনে? টাইমসের ভারত বিরোধী এই মনোভাব আগেও সমালোচিত হয়েছে। যে ব্যক্তি দেশকে ভাঙতে চাইছেন, অশান্তি লাগাতে চাইছেন তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ায় বিদেশি ম্যাগাজিনের কেন গা জ্বলছে? কেন মানবাধিকারের ঢাল ব্যবহার করে এক জঙ্গিকে আড়াল করার চেষ্টা করছে? অমৃতপালের সঙ্গে ভারত বিরোধী শক্তির যোগের দাবি আগেই করেছে ভারতীয় গোয়েন্দারা। সেই দলে কি টাইমসও রয়েছে?