আগরতলা: বছরের শুরুতে ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচনে ঝড় তুলেছিলেন ত্রিপুরার রাজ পরিবারের সদস্য তথা তিপরাহা আদিবাসী প্রগতিশীল আঞ্চলিক জোট বা তিপ্রা মোথা দলের প্রধান প্রদ্যোত বিক্রম মাণিক্য দেব বর্মা। একের পর এক সভা উত্তাল হয়েছি ‘বুবাগ্রা বুবাগ্রা’ ধ্বনিতে। ভোটের ফলেও তার প্রভাব পড়েছিল। মঙ্গলবার (৪ জুলাই), আচমকা এক ভিডিয়ো বার্তা প্রকাস করে রাজনীতি ছাড়ার কথা ঘোষণা করলেন তিনি। শুধু রাজনীতি নয়, ‘পাবলিক লাইফ’ বা জনজীবন থেকেও সরে যাবেন বলে জানিয়েছেন প্রদ্যোত বিক্রম মাণিক্য দেব বর্মা। ভিডিয়ো বার্তায় প্রদ্যোত বলেন, “আমি আর রাজনীতি করতে চাই না, জনগণের জন্য কিছু করতে চাই। জনগণকে কিছু দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি রাজনীতি এবং জনজীবন থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
এক মিনিট ১০ সেকেন্ডের ভিডিয়োটিতে প্রদ্যোৎ দেব বর্মা আরও জানান, সাংসদ বা মন্ত্রী হয়ে কোনও লাভ নেই। জনগণের জন্য কিছু করা যাবে না। নতুন দল খুলেও কিছু করা যাবে না। তিনি জানিয়েছেন, ত্রিপুরার সকল রাজনৈতিক দলকে তাদের রাজনৈতিক প্রভেদ ভুলে দিল্লিতে গিয়ে এক সুরে রাজ্যের মানুষের কথা তুলে ধরতে হবে। তিনি বলেন, “আমি কথা বলেছি। অনেক আত্মত্যাগ করেছি। আমাদের তিপ্রাসা সমাজের সবথেকে বড় সমস্যা ঈর্ষা, ইগো। আমরা একে অন্যকে হিংসা করি। একে অন্যের সাফল্য সহ্য করতে পারি না। আপনাদের কাছে আমার আবেদন, সামনের ২-৩ মাস নিজ নিজ স্বার্থ পিছনে রেখে, একজোট হয়ে আমাদের আন্দোলনকে শক্তিশালী করে তুলুন।”
#WATCH | “I don’t want to do politics anymore, I want to give something to the people. I have decided to give something to people and quit politics and public life…”: Pradyot Kishore Manikya Debbarma, Tipra Motha chief pic.twitter.com/KtkriV929C
— ANI (@ANI) July 4, 2023
উল্লেখ্য, শনিবারই (১ জুলাই), নয় দিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ-র সঙ্গে দেখা করেন প্রদ্যোৎ দেব বর্মা এবং তিপ্রা মোথা দলের আরও বেশ কয়েকজন নেতা। তাঁরা গ্রেটার তিপ্রাল্যন্ডের বিষয়ে তাঁদের দাবিগুলি তুলে ধরেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে। তাঁদের দাবির একটি ‘সাংবিধানিক সমাধানের’ জন্য অনুরোধ করেছিল তিপ্রা মোথার প্রতিনিধিরা। সেই বৈঠকের মাত্র ২দিন পরই এই চমকে দেওয়া সিদ্ধান্ত জানালেন প্রদ্যোৎ দেব বর্মা। অমিত শাহর সঙ্গে বৈঠকের পর তিপ্রা মোথা প্রধান জানিয়েছিলেন, ত্রিপুরার আদিবাসীরা সসম্মানে জীবন কাটাক, এটাই তাঁদের মূল চাহিদা। তিনি বলেন, “ত্রিপুরার আদিবাসীদের, তাঁদের নিজ নিজ জমির উপর অধিকার চাই। আমরা সেই বিষয়েই কথা বলেছি। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি খুব স্পষ্ট। অন্য কিছু নিয়ে আমরা আগ্রহী নই।” তিনি আরও জানিয়েছিলেন, দ্রুত তাঁদের দাবিগুলি নিয়ে আলোচনা শুরু করবে কেন্দ্রীয় সরকার। অমিত শাহ তাঁকে এই আশ্বাস দিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, তিপ্রা মোথার প্রাথমিক দাবি ছিল, ত্রিপুরার আদিবাসীদের জন্য একটি পৃথক রাজ্য গঠন। ২০২১ সালে ‘গ্রেটার তিপ্রাল্যান্ড’ রাজ্যের দাবিতেই গঠিত হয়েছিল তিপ্রা মোথা পার্টি। তবে পরবর্তী সময়ে সেই দাবি থেকে সরে এসে ত্রিপুরা রাজ্যের মধ্যেই একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হিসেবে তিপ্রাল্যান্ডের দাবি তুলেছিল প্রদ্যোৎ দেব বর্মার দল। এই দাবি সামনে রেখেই ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচনে ৬০ আসনের মধ্যে ১৩ আসনে জিতে রাজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিল তিপ্রা মোথা।