পুনে: চাই আলাদা কেবিন। চাই লালবাতি দেওয়া গাড়ি। ট্রেনি IAS অফিসার হিসেবে তাঁর ‘আবদারে’ চোখ কপালে উঠেছিল আধিকারিকদের। সংবাদ শিরোনামে উঠে আসে তাঁর নাম। বিতর্ক বাধে মহারাষ্ট্রের ট্রেনি IAS পূজা খেড়করকে নিয়ে। তারপরই সামনে আসে একের পর এক তথ্য। উঠতে থাকে একের পর এক প্রশ্ন। UPSC-তে পূজার নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে তদন্ত শুরু করে কেন্দ্র। এবার সামনে এল পূজার আরও এক ‘কীর্তির’ কথা। তিনি ডাক্তারিতে কীভাবে সুযোগ পেয়েছিলেন, তা নিয়ে এবার উঠল প্রশ্ন।
পূজার বাবা দিলীপ খেড়কর একজন প্রাক্তন IAS অফিসার। পূজার দাদুও একজন আমলা ছিলেন। তাঁদের বাড়ি মহারাষ্ট্রের আহমেদনগর জেলায়। ওবিসি নন-ক্রিমি লেয়ার ক্যাটেগরিতে ইউপিএসসি পরীক্ষা দিয়েছিলেন পূজা। নির্বাচন প্রক্রিয়ায় ছাড় পেতে নিজেকে শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী বলে হলফনামায় দাবি করেছিলেন। জানিয়েছিলেন, তাঁর দৃষ্টিতে সমস্যা রয়েছে।
যে পূজা দৃষ্টি সমস্যার কথা জানিয়েছেন ইউপিএসসি পরীক্ষায়, তিনিই নাকি ডাক্তারি পড়ার সময় জানিয়েছিলেন তাঁর কোনও শারীরিক সমস্যা নেই। এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এল।
এমবিবিএস পড়তে ২০০৭ সালে পুনের কাশীবাঈ নাভালে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন পূজা। অভিযোগ, ওবিসি নোমাডিক ট্রাইব-৩ ক্যাটেগরিতে সুযোগ পান তিনি। এই ক্যাটেগরি বানজারি সম্প্রদায়ের জন্য সংরক্ষিত। সেই ক্যাটেগরিতে সুযোগ পান পূজা। মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির জন্য তিনি ওবিসি নন-ক্রিমি লেয়ার শংসাপত্র জমা দিয়েছিলেন। অথচ ওই সময় পূজার বাবা আমলা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। অভিযোগ, প্রাইভেট কলেজ এন্ট্রাস পরীক্ষার ফল দেখে ওই মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি নেওয়া হয়েছিল তাঁকে। তাঁর কমন এন্ট্রান্স টেস্টের(CET) ফল বিবেচনা করা হয়নি।
কাশীবাঈ নাভালে মেডিক্যাল কলেজের ডিরেক্টর অরবিন্দ ভোরে অবশ্য বলছেন, দুটো পরীক্ষাই দিয়েছিলেন পূজা। কিন্তু, প্রাইভেট কলেজ এন্ট্রান্স পরীক্ষার ফল ভাল হওয়ায়, ভর্তির ক্ষেত্রে সেটাই বিবেচনা করা হয়েছে। নিট চালু হওয়ার পর অবশ্য ওই পরীক্ষা বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
মেডিক্যাল কলেজে পূজার ভর্তি নিয়ে অরবিন্দ ভোরে বলেন, “ভর্তির সময় ওবিসি নন-ক্রিমি লেয়ার শংসাপত্র জমা দিয়েছিলেন পূজা। সব শংসাপত্র খতিয়ে দেখা হয়েছিল।” ইউপিএসসি পরীক্ষায় দৃষ্টিতে সমস্যা রয়েছে বলে জানিয়েছিলেন পূজা। ডাক্তারিতে ভর্তির সময় কি কোনও শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কথা জানিয়েছিলেন? চমকে দেওয়ার মতো উত্তর দিলেন মেডিক্যাল এই কলেজের ডিরেক্টর। অরবিন্দ বলেন, “মেডিক্যাল ফিটনেস শংসাপত্র জমা দিয়েছিলেন পূজা। সেখানে কোনও শারীরিক প্রতিবন্ধকতা কথা উল্লেখ ছিল না।”
এখানেই উঠছে প্রশ্ন। যে পূজা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির সময় জানালেন, তাঁর কোনও শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নেই। তিনিই ইউপিএসসি-তে জানালেন, তাঁর দৃষ্টিতে সমস্যা রয়েছে। পূজার শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে তাঁর বাবা দিলীপ খেড়কর অবশ্য বলছেন, পূজার দৃষ্টিতে সমস্যার কথা বিশেষজ্ঞ প্যানেল মেনে নিয়েছে। তার পরই শংসাপত্র দিয়েছে তারা। তবে ওবিসি নন-ক্রিমি লেয়ার শংসাপত্র নিয়ে মুখ খোলেননি প্রাক্তন এই আমলা। কোনও পরিবারের আয় বছরে ৮ লাখের কম হলে এই শংসাপত্র পাওয়া যায়। চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সময় হলফনামায় দিলীপ খেড়কর জানিয়েছিলেন, তাঁর বছরে আয় ৪৯ লক্ষ টাকা। তাঁর মেয়ে কী করে ওবিসি নন-ক্রিমি লেয়ার শংসাপত্র পেলেন, সেই প্রশ্ন উঠছে। তদন্ত শুরু করেছে কেন্দ্রও।