আগরতলা: ২০২৩ সালেই ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে রবিবার (২৬ জুন) চার বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের ফল প্রকাশ হল। এই উপনির্বাচনকে বলা হচ্ছে আগামী বছরের বিধানসভা নির্বাচনের সেমিফাইনাল। ফাইনালে কী ফল হবে, তার জন্য এখনও এক বছর অপেক্ষা করতে হবে। তবে, সেমির ফল কপালের ভাঁজ আরও বাড়ালো বামেদের। চার আসনের মধ্যে তিনটিতেই জয়ী হয়েছে বিজেপি, আগরতলা আসন দখল করেছে কংগ্রেস। আর বামেরা? একমাত্র যুবরাজনগর কেন্দ্র ছাড়া বাকি তিন কেন্দ্রেই বাম প্রার্থীরা তৃতীয় স্থানে রয়েছেন। এই চূড়ান্ত খারাপ ফলের জন্য বিজেপির সন্ত্রাস, আক্রমণ ও হুমকিকেই দায়ি করেছে ত্রিপুরা বামফ্রন্ট।
এদিন ফল প্রকাশের পর ত্রিপুরা বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে এক বিবৃতি প্রকাশ করে জানিয়েছে, গত ৫১ মাস ধরে রাজ্যে যে পরিস্থিতি চলছে, তার প্রেক্ষিতে এই উপনির্বাচনের ফলাফল অপ্রত্যাশিত। তবে, এর জন্য শাসক দলের সন্ত্রাসই দায়ী বলে মনে করছে বামেরা। তাদের অভিযোগ, শাসক দলের অর্থশক্তি, পেশি শক্তি এবং প্রশাসনিক শক্তির প্রয়োদের জন্য ভোটাররা শঙ্কাহীনভাবে মত প্রকাশ করতে পারেনি। প্রকৃত ভোটারদের ভোটদানের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এই কারণেই দলের ফল এতটা খারাপ হয়েছে বলে মনে করছে ত্রিপুরা বামফ্রন্ট।
চার কেন্দ্রের মধ্যে বড়দোয়ালি সদরে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহার বিরুদ্ধে বামেরা প্রার্থী করেছিল ফরোয়ার্ড ব্লকের রঘুনাথ সরকারকে। বাকি তিন কেন্দ্রেই প্রার্থী ছিল সিপিএম-এর। ফল অনুযায়ী রঘুনাথ সরকার তৃতীয় স্থানে রয়েছেন। ভোট পেয়েছেন মাত্র ৩২৯৮টি। সুরমা এবং আগরতলা কেন্দ্রেও তৃতীয় হয়েছেন সিপিআইএম প্রার্থীরা। সুরমা কেন্দ্রে অঞ্জন দাস পেয়েছেন ৮৪১৫ ভোট, আর আগরতলায় তৃতীয় হয়েছেন সিপিএমের কৃষ্ণা মজুমদার। তিনি পেয়েছেন ৬,৭৩৬ ভোট।
তবে, বামেরা সবথেকে বড় ধাক্কা খেয়েছে যুবরাজনগর কেন্দ্রে। এতদিন এই বিধানসভা আসন বাম দুর্গ বলেই পরিচিত ছিল। এমনকি, ২০১৮ সালে পরিবর্তনের সাক্ষী হয়েছিল ত্রিপুরা। বামেদের হাত থেকে শাসন ক্ষমতা গিয়েছিল বিজেপির হাতে। তবে, গোটা রাজ্যে গেরুয়া ঝড়ের মধ্যেও যুবরাজনগর কেন্দ্রে উড়েছিল লাল পতাকা। এদিন সেই গড়ও হাতছাড়া হয়েছে বামেদের। সিপিএম-এর শৈলেন্দ্রচন্দ্র নাথকে ৪৫৭২ ভোটে পরাজিত করেছেন বিজেপি প্রার্থী মলিনা দেবনাথ। শৈলেন্দ্রচন্দ্র নাথ ভোট পেয়েছেন ১৪,১৯৭টি।
২০১৮ সালে ত্রিপুরায় ২৫ বছরের বাম শাসনের অবসান ঘটিয়েছিল বিজেপি। তার আগে রাজ্যে বিজেপির অস্তিত্বই ছিল না বলতে গেলে। কিন্তু, ২০১৮ সালে রাজ্যের ৬০টি বিধানসভা আসনের মধ্যে ৩৬টি আসনে জয় ছিনিয়ে নিয়েছিল পদ্ম শিবির। অন্যদিকে বামেদের মধ্যে একমাত্র সিপিএম ১৬টি আসনে জিতেছিল। বামফ্রন্টের অন্যান্য শরিক দলগুলি একটিও আসন জিততে ব্যর্থ হয়েছিল। আসনহীন হয়েছিল ভারতের জাতীয় কংগ্রেসও।
তবে, গত চার বছরে বারবারই বিতর্কের সম্মুখীন হয়েছে ত্রিপুরার বিজেপি সরকার। দলের অভ্যন্তরেও মাথাচাড়া দিয়েছে বিতর্ক। যার জেরে একমাস আগেই মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে বিপ্লব দেবকে সরিয়ে মানিক সাহাকে এনেছিল বিজেপি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও মনে করেছিলেন, এই ডামাডোলের প্রভাব পড়বে নির্বাচনে। তবে, এদিনের ফল তা বুল প্রমাণ করে দিল। ৫ বছর পর ক্ষমতায় ফেরার স্বপ্ন এখনও বামেদের অধরা বলেই মনে করা হচ্ছে।