আগরতলা: ত্রিপুরায় হিংসা (Tripura Violence) নিয়ে খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে রবিবারই অসমে (Assam) আটক করা হয়েছিল দুই মহিলা সাংবাদিককে (Journalists)। সোমবার তাদের গ্রেফতার করে রাজ্যে নিয়ে এল ত্রিপুরা পুলিশ (Tripura Police)। ওই দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধেই সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়ানোর অভিযোগ উঠেছে।
গত ২৬ অক্টোবর ত্রিপুরার গোমতী (Gomati) জেলায় মসজিদ (Mosque) ভাঙচুরের যে খবর ছড়িয়ে পড়ে, তা নিয়েই খবর সংগ্রহে এসেছিলেন দিল্লির সাংবাদিক সমৃদ্ধি কে সাকুনিয়া ও স্বর্ণা ঝা। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার অসম পুলিশ ওই দুই সাংবাদিককে আটক করেছে, এই খবর পাওয়ার পরই তাদের গ্রেফতার করতে রওনা দেয় ত্রিপুরা পুলিশ। বর্তমানে তাদের গ্রেফতার করে গোমতী জেলার রাধাকিশোরপুর পুলিশ স্টেশনে আনা হয়েছে। প্রাথমিক জেরার পর আজই তাদের আদালতে তোলা হবে।
জানা গিয়েছে, ত্রিপুরা পুলিশের অনুরোধেই গতকাল অসমের করিমগঞ্জ থেকে ওই দুই মহিলা সাংবাদিককে আটক করা হয়। রাতেই সেখানে পৌঁছয় ত্রিপুরা পুলিশ, কিন্তু তারা পুলিশের সঙ্গে রাতে ত্রিপুরায় ফিরতে চাননি। ভারতীয় আইন অনুযায়ী, কোনও মহিলাকে বিশেষ কোনও পরিস্থিতি ছাড়া সূর্যাস্তের পরে ও সূর্যোদয়ের আগে গ্রেফতার করা যায় না। পরে ত্রিপুরা পুলিশের আরেকটি দল আদালতের অনুমতি নিয়ে আসে। এরপরই ওই দুই সাংবাদিককে গ্রেফতার করা হয়।
ত্রিপুরা পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, ওই দুই সাংবাদিক ত্রিপুরা ছাড়ার আগে আগরতলা পুলিশের সঙ্গে কথা বলবে বলে জানিয়েছিল। কিন্তু তারা পুুলিশের অনুমতি না নিয়েই অসমে চলে যায়। তারা সোশ্যাল মিডিয়াতেও আধ পোড়া একটি কোরান ও মসজিদের ছবি পোস্ট করে গোমতী জেলার ছবি বলে দাবি করে। পুলিশের দাবি, ওই ছবিকে বিকৃত করে পোস্ট করা হয়েছে।
ওই দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের এক সমর্থক অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই এই এফআইআর দায়ের করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ত্রিপুরা পুলিশ। অভিযোগকারী কাঞ্চন দাসের বক্তব্য, ওই দুই সাংবাদিক বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠীর মধ্যে বিদ্বেষ ছড়ানোর কাজে যুক্ত ছিল এবং অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল। তারা উনাকোটি জেলার পালবাজারে গত ১৩ নভেম্বর কয়েকজন মুসলিম পরিবারের সঙ্গে দেখা করে। সেখানেই তারা হিন্দু সম্প্রদায় ও ত্রিপুরা সরকারের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক মন্তব্য করে। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৫৩-এ ধারা এবং ১২০ -বি ধারায় মামলা রুজু করা হয়।
গতকাল শিলচর যাওয়ার পথেই করিমগঞ্জ থেকে ওই দুই মহিলা সাংবাদিককে আটক করে নীলমবাজার থানার পুলিশ। বিনা অনুমতিতেই ত্রিপুরা ছেড়ে আসার অভিযোগে তাদের প্রথমে আটক ও পরে ত্রিপুরা পুলিশ গিয়ে গ্রেফতার করে।
এদিকে, গতকালই সমৃদ্ধি সাকুনিয়া টুইটে অভিযোগ করেন যে, তাদের হোটেল থেকে বেরোতে দেওয়া হচ্ছে না। সূত্রের খবর, পুলিশের তরফে তাঁদের একটি নোটিস দেওয়া হয়েছিল। সেই নোটিসে ২১ নভেম্বর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁদের হাজিরা দিতে বলা হয়েছিল৷
উল্লেখ্য, শনিবারই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফে বিবৃতি জারি করে জানানো হয়, ত্রিপুরায় মসজিদ ভাঙা ও ধর্ষণের যে খবরগুলি বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়েছে, তা সম্পূর্ণ ভুয়ো। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফে বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় ত্রিপুরার গোমতীতে যে হিংসা, ধর্ষণ ও খুনের খবর ছড়িয়ে পড়েছে, তার কোনওটিই সত্য নয়। ধর্ষণ, সংঘর্ষে আহত বা মৃত- এই ধরনের কোনও অভিযোগই দায়ের হয়নি রাজ্যের কোনও থানায়। সম্প্রতিকালে ত্রিপুরায় কোনও মসজিদ ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেনি। সাধারণ মানুষকে অনুরোধ করা হচ্ছে, তারা যেন বিকৃত তথ্য ও ভুল খবরে বিশ্বাস না করেন এবং রাজ্যে শান্তি বজায় রাখেন।