বিশ্লেষণ: ‘এক দেশ, এক রেশন কার্ড’-এ আপনার সুবিধা কী? 

TV9 Bangla Digital | Edited By: সোমনাথ মিত্র

Jul 07, 2021 | 12:54 PM

One Nation One Ration Card: কেন্দ্র চাইছে, এই এক দেশ এক রেশন কার্ডের মাধ্যমে দেশের যে কোনও প্রান্তে কেউ খাদ্যসামগ্রী কিনতে পারবেন।

বিশ্লেষণ: এক দেশ, এক রেশন কার্ড-এ আপনার সুবিধা কী? 
গ্রাফিক্স- অভিজিৎ বিশ্বাস

Follow Us

নয়া দিল্লি: সারা দেশ জুড়ে এক দেশ এক রেশন কার্ড (One Nation One Ration Card) চালু করতে চায় কেন্দ্র। অবিলম্বে একাধিক রাজ্যে এই প্রকল্প চালু করার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টও। সারা দেশ জুড়ে এই প্রকল্প হলে লাভ হবে পরিযায়ী শ্রমিকদের। এমনটাই দাবি কেন্দ্রের। পরিযায়ীদের সুবিধা হবে, এ কথা পর্যবেক্ষণে জানিয়েছে দেশের শীর্ষ আদালতও। তারপরও একাধিক রাজ্যে চালু হয়নি এক দেশ এক রেশন কার্ড প্রকল্প। কেন্দ্রের এই প্রকল্পে কী কী লাভ হবে? একনজরে দেখে নেওয়া যাক প্রকল্পের এ টু জ়েড…

‘ওয়ান নেশন ওয়ান রেশন কার্ড’ প্রকল্প কী?

খাদ্য সুরক্ষা আইন, ২০১৩-এর মাধ্যমে ৮১ কোটি নাগরিককে ৩ টাকা কেজি দরে চাল ও ২ টাকা কেজি দরে ভর্তুকি-যুক্ত দম দেয় কেন্দ্র। নির্ধারিত মূল্যের দোকান থেকে মেলে সেই রেশন। এর জন্য বিভিন্ন রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মোট ২৩ কোটি কার্ডে অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্র। বর্তমান পদ্ধতিতে সেই কার্ডের মাধ্যমে কোনও ব্যক্তি নিজের পরিবারের জন্য নির্ধারিত অঞ্চলের দোকান থেকেই ভর্তুকিযুক্ত খাদ্যসামগ্রী কিনতে পারেন। এখানেই বদল আনতে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকার। কেন্দ্র চাইছে, এই এক দেশ এক রেশন কার্ডের মাধ্যমে দেশের যে কোনও প্রান্তে কেউ খাদ্যসামগ্রী কিনতে পারবেন।

ধরা যাক, কলকাতার কোনও বাসিন্দা কর্মসূত্রে কেরল গেলেন, সেখানে তিনি বর্তমান পদ্ধতিতে নিজের রেশন তুলতে পারবেন না। কারণ তাঁকে নির্ধারিত দোকান থেকেই ভর্তুকি-যুক্ত খাদ্যসামগ্রী কিনতে হবে। এই ‘ওয়ান নেশন ওয়ান রেশন কার্ড’ প্রকল্পে কেন্দ্র চাইছে সারা দেশে যাতে কোনও ব্যক্তি এই সুবিধা পান, সেই ব্যবস্থা করতে। অর্থাৎ কলকাতার কোনও ব্যক্তি যদি কর্মসূত্রে মুম্বই বা গুজরাট যান, তাহলে যেন তিনি সেখানকার নির্ধারিত মূল্যের দোকানে কার্ড দেখিয়ে খাদ্যসামগ্রী কিনতে পারেন। এর জন্য নির্ধারিত মূল্যের দোকানে বায়োমেট্রিক পদ্ধতি ব্যবহার করবে কেন্দ্র। যার মাধ্যমে ওই দোকানে গেলে খাদ্য সুরক্ষা আইনে খাদ্যসামগ্রী পাবেন যে কোনও ব্যক্তি।

কীভাবে বাস্তবিক প্রয়োগ হবে এই প্রকল্পের?

রাজ্যের বাইরে কিংবা এক জেলা থেকে অন্য জেলায়ও পরিবর্তন করা যাবে নির্ধারিত মূল্যে খাদ্যসামগ্রী কেনার দোকান। দু’টি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে এই প্রক্রিয়ার প্রযুক্তিগত সাহায্য দেখছে কেন্দ্র। www.impds.nic.in এর মাধ্যমে রাজ্যের বাইরে রেশন কার্ডের মাধ্যমে খাদ্যসামগ্রী কেনার বিষয়টি নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। আর রাজ্যের মধ্যে এক জেলা থেকে অন্য় জেলায় রেশন কার্ডের বিষয়টি নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে www.annavitaran.nic.in এর মাধ্যমে। আধার কার্ডের মাধ্যমে রেশন কার্ডের সংযুক্তিকরণ করে এই প্রকল্পের বাস্তবায়ন চায় কেন্দ্র।

কোন কোন রাজ্যে চালু হয়েছে ‘ওয়ান নেশন ওয়ান রেশন কার্ড’ প্রকল্প?

দে ৩২ টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ইতিমধ্যে ‘ওয়ান নেশন ওয়ান রেশন কার্ড’ চালু করেছে। স্রেফ অসম, ছত্তীসগঢ়, দিল্লি ও পশ্চিমবঙ্গে এখনও চালু হয়নি এই প্রকল্প। কেন্দ্রীয় সরকারের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি মাসে অন্তত ১ কোটি ৩৫ লক্ষ কার্ড এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে বদলি হচ্ছে। করোনা আবহে ২০২০ সালের এপ্রিল মাসেই ১৯ কোটি ৮০ লক্ষ মানুষ নিজেদের এই প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করেছেন।

কী বলছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার?

কেন্দ্রের এই প্রকল্পে প্রথমে ঝোঁক দেখায়নি পশ্চিমবঙ্গ সরকার। তাই অন্যান্য রাজ্যের মতো এখানে এখনও শুরু হয়নি এক দেশ এক রেশন কার্ড প্রকল্প। তবে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দেওয়ার পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ৩ মাসের মধ্যে এই প্রকল্প চালু হবে রাজ্যে। ১১ জুন, শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে, কোনও অজুহাত শোনা হবে না। এখনই এক দেশ এক রেশন কার্ড নীতি চালু করতে হবে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে। শীর্ষ আদালতের স্পষ্ট নির্দেশ, “এক বা একাধিক সমস্যা দেখানো যাবে না। এটা পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য করা হচ্ছে।”

প্রসঙ্গ পরিযায়ী:

করোনার প্রথম ঢেউয়ের সময় কার্যত অন্ন সঙ্কট দেখা দিয়েছিল পরিযায়ীদের। তাই লকডাউনে মাইলের পর মাইল হেঁটে বাড়ি ফিরতে হয়েছিল পরিযায়ী শ্রমিকদের। সেই দুর্দশার কথা বারবার রাজনৈতিক তরজায় এসেছে। এরপরই আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে কেন্দ্রের এই প্রকল্প। এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। দেশে প্রথম লকডাউনের সময় মোট তিনটি রাজ্যে সবচেয়ে বেশি পরিযায়ীরা ফিরেছিলেন। সেগুলি হল উত্তর প্রদেশ, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গ। মোট ১ কোটি ২৩ লক্ষ পরিযায়ীদের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে ফিরেছিলেন ১১ শতাংশ। তাই ওয়াকিবহাল মহলের মতে, কোনও পরিযায়ী যদি রাজ্যের বাইরে নির্ধারিত মূল্যে খাদ্যসামগ্রী কিনতে পারেন, তাহলে আখেরে লাভ ক্ষতির কিছু নেই।

আরও পড়ুন: বিশ্লেষণ: ‘ঝলসে’ যাচ্ছে কানাডা, মৃত্যু ৫০০ ছাড়িয়ে, কারণ কী?

Next Article