নয়া দিল্লি: চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ইউক্রেনে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ শুরু করেছে রাশিয়া। যুদ্ধের ফলে সেই দেশে বসবাসকারী ভারতীয় শিক্ষার্থীরা বড় সমস্যায় পড়েছিলেন। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, মাথার উপর ছিল রুশ হামলার ঝুঁকি। বেশ কয়েকজন ভারতীয় ছাত্র প্রাণও হারান। তবে, ‘অপারেশন গঙ্গা’র মাধ্যমে বাকিদের সবাইকে দেশে ফিরিয়ে এনেছিল মোদী সরকার। সেই সময় তাদের ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল বলে দাবি করেছেন তাঁরা। এখনও সেই সুযোগ পায়নি বলে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হস্তক্ষেপ চেয়ে শনিবার থেকে নয়া দিল্লিতে তাঁরা ৫ দিনের অনশনে বসেছেন।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাঁদের আবেদন, এককালীন ব্যবস্থা হিসেবে তাঁদের ভারতীয় প্রতিষ্ঠান এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে জায়গা দিতে হবে। একি দাবিতে গত মাসে এই শিক্ষার্থীরা নয়া দিল্লির যন্তর মন্তরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছিল। এই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে একটি চিঠিও লিখেছিলেন যুদ্ধ-বিধ্বস্ত ইউক্রেন ফেরত ছাত্রছাত্রীরা। তবে, কোনও পথেই কোনও কাজ হয়নি। তাই এবার টানা ৫ দিন অনশনের পথে হাঁটছেন তাঁরা। তাদের সমস্যা সমাধানের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ করে তাঁরা বলেছেন, যত দিন যাচ্ছে, তাঁরা হতাশা, উদ্বেগ এবং অন্যান্য মানসিক সমস্যায় ডুবে যাচ্ছেন। ভবিষ্যত বাঁচাতে এছাড়া তাঁদের কোনও উপায় নেই বলে দাবি করেছেন এই শিক্ষার্থীরা তাদের ।
সরকারী সূত্রের দাবি, ইউক্রেন এবং চিন থেকে যুদ্ধ এবং করোনাভাইরাস মহামারির কারণে প্রায় ৪০,০০০ মেডিক্যাল শিক্ষার্থী দেশে ফিরে এসেছেন। তবে, মহামারির দাপট কমার পর, চিন এইসব শিক্ষার্থীদের তাদের দেশে ফিরে যাওয়ার এবং তাদের কোর্স শেষ করার অনুমতি দিয়েছে। তবে, ইউক্রেনের পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক হওয়ার কোনও ইঙ্গিত নেই। ফলে সেই দেশ থেকে ফেরা শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত একপ্রকার অনিশ্চিত। এই অবস্থায় ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই তাঁরা তাঁদের পড়োশোনা শেষ করতে চাইছেন।
সমস্যা হল, ন্যাশনাল মেডিকেল কমিশন বা এনএমসি কোনও ভারতীয় মেডিকেল কলেজে, বিদেশী মেডিকেল শিক্ষার্থীদের স্থানান্তরের অনুমতি দিচ্ছে না। বস্তুত, ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল কাউন্সিল অ্যাক্ট, ১৯৫৬ এবং ন্যাশনাল মেডিকেল কমিশন অ্যাক্ট, ২০১৯-এও বিদেশী মেডিকেল ইনস্টিটিউট থেকে ভারতের মেডিক্যাল কলেজগুলিতে মেডিকেল শিক্ষার্থীদের স্থানান্তর করার কোনও বিধান নেই। গত শুক্রবার (২২ জুলাই), স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ভারতী প্রবীণ পাওয়ার লোকসভায় জানান, বিদেশী মেডিকেল শিক্ষার্থীরা শুধুমাত্র স্ক্রীনিং টেস্ট রেগুলেশন, ২০০২ অথবা ‘ফরেন মেডিকেল গ্র্যাজুয়েট লাইসেন্স রেগুলেশনস বা এফএমসিজি, ২০২১-এর আওতায় বিদেশি প্রতিষ্ঠান থেকে দেশীয় প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তরিত হতে পারে।
গত মার্চ মাসে এনএমসি, এই বিষয়েএকটি বিজ্ঞপ্তি জারি করছিল। তাতে বলা হয়েছিল,বিদেশী মেডিক্যাল প্রতিষ্ঠান থেকে ফিরে আসা শিক্ষার্থীরা শর্ত সাপেক্ষে ভারতে তাদের ইন্টার্নশিপের অবশিষ্ট অংশ সম্পূর্ণ করতে পারবেন। তবে, এর জন্য তাঁদের অবশ্যই এফএমজিই বা স্ক্রিনিং টেস্ট পাস করতে হবে।