নয়া দিল্লি: উসকে উঠেছে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি নিয়ে বিতর্ক। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই বিষয়ে আলোচনা চেয়েছেন। তবে, দেশের অধিকাংশ বিরোধী দলই এই বিধি প্রণয়নের বিরোধিতা করছে। এই পরিস্থিতিতে আগামী সোমবার, ৩ জুলাই, বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করার সিদ্ধান্ত নিল গণঅভিযোগ, আইন ও বিচার বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। বিজেপি সাংসদ সুশীল মোদীর নেতৃত্বে এই সংসদীয় স্থায়ী কমিটি অভিন্ন দেওয়ানি বিধির বিষয়ে আইন বিভাগ, সংসদীয় বিভাগ এবং অভিন্ন দেওয়ানি বিধির বিষয়ে গঠিত আইন কমিশনের কর্তাদের মতামত শুনবে। একই সঙ্গে এই সংসদীয় কমিটি ব্যক্তিগত আইনগুলিরও পর্যালোচনা করবে। এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে এমনও বলা হয়েছে, আসন্ন বাদল অধিবেশনেই সংসদে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি বিল আনতে পারে সরকার।
চলতি মাসের শুরুতে, আইন কমিশন এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সমস্ত পক্ষের মতামত চেয়েছিল। ২০১৮ সালে অভিন্ন দেওয়ানি বিধির বিষয়ে গঠিত আইন কমিশন বলেছিল, বিধিটির প্রণয়ন বর্তমানে ‘প্রয়োজনীয় নয় বা কাম্যও নয়।” সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ৩০ জন সদস্যকেই কমিশনের সেই রিপোর্টের অনুলিপি দেওয়া হয়েছে। আইন কমিশনের সেই উপদেশের প্রায় পাঁচ বছর পর ফের এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলির মতামত চেয়েছে আইন কমিশন।
চলতি সপ্তাহের শুরুতে, বিজেপি কর্মীদের এক কর্মসূচিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী অভিন্ন দেওয়ানি বিধির পক্ষে জোরালো সমর্থন ব্যক্ত করেছেন। তিনি প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন, দুই আইন নিয়ে কীভাবে কোনও দেশ চলতে পারে? অভিন্ন দেওয়ানি বিধির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদির এই মন্তব্য, এই বিধি প্রণয়নের বিষয়ে নতুন করে চর্চা শুরু করেছে। বিরোধীরা অভিযোগ করেছে, লোকসভা ভোটের বৈতরণী পার করতেই হঠাৎ, অভিন্ন দেওয়ানি বিধির প্রসঙ্গ তুলেছেন নরেন্দ্র মোদী। মূল্যবৃদ্ধি এবং বেকারত্বের মতো সমস্যাগুলি থেকে মনোযোগ সরাতে নির্বাচনের আগে ধর্মীয় উসকানি দিতে চাইছে বিজেপি বলে, অভিযোগ করা হয়েছে। কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস, জেডি(ইউ), আরজেডি, সপা, সিপিআইএম, সিপিআই, ডিএমকে, ন্যাশনাল কনফারেন্সের মতো বিরোধী দলগুলি অভিন্ন দেওয়ানি বিধি প্রণয়নের বিরোধিতা করেছে। এনডিএ-র প্রাক্তন শরিক, অকালি দলও ইউসিসির বিরোধিতা করেছে। আকালি দলের মুখপাত্র দলজিৎ সিং চিমা সতর্ক করেছেন, এই বিধি বাস্তবায়িত হলে, সংখ্যালঘু এবং আদিবাসী সম্প্রদায়ের উপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে।
বর্তমানে দেশে বিবাহ, বিচ্ছেদ, দত্তক গ্রহণের মতো ব্যক্তিগত বিষয়গুলির জন্য বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের নিজস্ব ব্যক্তিগত আইন রয়েছে। যেমন মুসলিম পার্সোনাল ল, হিন্দু পার্সোনাল ল ইত্যাদি। ইউনিফর্ম সিভিল কোড বা অভিন্ন দেওয়ানি বিধি, এই বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ব্যাক্তিগত আইনগুলির অবসান ঘটিয়ে, সকলের জন্য একটি অভিন্ন ব্যক্তিগত আইন জারির প্রস্তাব দেয়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জানিয়েছেন, সংবিধানেও অভিন্ন দেওয়ানি বিধি প্রণয়নের কথা বলা হয়েছে। এছাড়া, সুপ্রিম কোর্টও বারেবারেই অভিন্ন দেওয়ানি বিধি প্রণয়নের জন্য চাপ দেয়। সম্প্রতি গোয়ার এক সম্পত্তির উত্তরাধিকার সংক্রান্ত মামলার ক্ষেত্রেও অভিন্ন দেওয়ানি বিধির প্রসঙ্গ টেনেছিল শীর্ষ আদালত। গোয়াকে অভিন্ন দেওয়ানি বিধির আদর্শ উদাহরণ বলেছিল আদালত।