নয়া দিল্লি: সুপ্রিম কোর্ট রাষ্ট্রদ্রোহ আইনে স্থগিতাদেশ জারি করতেই শুরু হল রাজনৈতিক বিতর্ক। বুধবার সুপ্রিম কোর্টের তরফে রাষ্ট্রদ্রোহ আইনের বৈধতা যাচাইয়ের কথা বলা হয়। এই সময়ে নতুন করে কোনও রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দায়ের করা যাবে না বলেই জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে যাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় দায়ের করা হয়েছে, তারাও জামিনের আবেদন করতে পারবেন বলে জানানো হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের পরই কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী টুইট করে বলেন, ‘সত্যি কথা বলা দেশদ্রোহ নয়, দেশপ্রেম। সত্য সামনে আনা দেশপ্রেম, দেশদ্রোহ নয়’। আর রাহুলের টুইট নজরে আসতেই পাল্টা জবাব দিলেন কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা কিরণ রিজিজু। সরাসরি কংগ্রেসকে আক্রমণ করে তিনি বলেন, “যদি কোনও রাজনৈতিক দল স্বাধীনতা, গণতন্ত্রের বিরোধী হয়, তবে তা হল কংগ্রেস।”
রাষ্ট্রদ্রোহ আইন নিয়ে বিতর্ক দীর্ঘদিন ধরেই। সম্প্রতিই ওই আইন নিয়ে একাধিক মামলা দায়ের হয় সুপ্রিম কোর্টে। প্রধান বিচারপতি এনভি রামণার নেতৃত্বে তিন বিচারপতির বেঞ্চে শুনানি চলছিল। আইন নিয়ে পুনর্বিবেচনার কথা বলা হয় শীর্ষ আদালতের তরফে। প্রথমে কেন্দ্রের তরফে এই আইন পুনর্বিবেচনা করা হবে না বলে জানানো হলেও, পরে চলতি সপ্তাহের সোমবার কেন্দ্রের তরফে এই আইন পুনর্বিবেচনার কথা জানানো হয়। এরপর মঙ্গলবার শুনানিতে শীর্ষ আদালতের তরফে জানতে চাওয়া হয়েছিল যে আইন পুনর্বিবেচনা না হওয়া অবধি এই আইনে মামলা দায়ের করা হবে কিনা, তা নিয়ে রাজ্য়গুলি মতামত জানাক। কেন্দ্র এই প্রস্তাব মানতে নারাজ হলেও, সুপ্রিম কোর্টের তরফে জানানো হয়, আইন পুনর্বিবেচনা হওয়া অবধি নতুন করে কোনও মামলা দায়ের করা যাবে না। যাদের বিরুদ্ধে এই মামলা রয়েছে, তারাও জামিনের আবেদন করতে পারবেন।
শীর্ষ আদালতের এই সিদ্ধান্তের পরই কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী টুইট করেন। হিন্দি হরফে লেখা ওই টুইটে তিনি বলেন, “সত্য কথা বলা দেশভক্তি, রাষ্ট্রদ্রোহ নয়। সত্য দেশপ্রেমের প্রমাণ, রাষ্ট্রদ্রোহ নয়। সত্য শোনা রাজধর্ম। সত্যকে ধামাচাপা দেওয়া ঊদ্ধত্যের প্রমাণ।”
রাহুল গান্ধীর এই টুইটের পরই পাল্টা জবাব দেন কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা কিরণ রিজিজু। তিনি বলেন, “সারবত্তাহীন কথাবার্তা বলছেন রাহুল গান্ধী। যদি কোনও দল স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও প্রতিষ্ঠানের সম্মানবিরোধী হয়, তবে তা হল ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস। এই দল বরাবর ভারতের শক্তিকে ভাগ করার সপক্ষেই দাঁড়িয়েছে। দেশ বিভাজনের কোনও সুযোগই ছাড়েনি তারা।”
Empty words by @RahulGandhi
If there is one party that is the antithesis of freedom, democracy and respect for institutions, it is the Indian National Congress.
This Party has always stood with Breaking India forces and left no opportunity to divide India. https://t.co/Rajl1pG2v8
— Kiren Rijiju (@KirenRijiju) May 11, 2022
তিনি আরও যোগ করে বলেন, “আর…প্রথম সংশোধন কে এনেছিলেন? তিনি আর কেউ নন, পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু! এসপি মুখোপাধ্যায় ও জন সংঘই মত প্রকাশের স্বাধীনতায় কাটছাটের বিরোধিতা করেছিলেন। নেহরুজী গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত কেরল সরকারকে ভেঙে দিয়েছিলেন।”
And…
UPA Government has the worst track record of filing sedition cases. In 2012, thousands of people had sedition cases filed against them under the watchful eyes of ‘Recounting Minister’ P. Chidambaram.— Kiren Rijiju (@KirenRijiju) May 11, 2022
কিরণ রিজিজু পরবর্তী টুইটে তিনি বলেন, “যদি বাক স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের কথা বলা হয়, তবে ইন্দিরা গান্ধীজী তো সোনার মেডেলজয়ী! আমরা সকলেই জরুরি অবস্থা সম্পর্কে জানি। কিন্তু আপনারা কি এটা জানেন যে তিনি সংবিধানের ৩৫৬ অনুচ্ছেদ ৫০ বারেরও বেশি লাগু করেছিলেন! বিচারব্যবস্থাকে দুর্বল করতে উনিই যুক্ত বিচারব্যবস্থা চালু করেছিলেন।”
ইন্দিরা গান্ধীর সরকারকে আক্রমণ করে তিনি আরও বলেন, “ভারতের ইতিহাসে ইন্দিরা গান্ধীর সরকারই প্রথম ১২৪এ অনুচ্ছেদকে জামিন অযোগ্য অপরাধ বলে স্বীকৃত দেয়। কংগ্রেস কি নিজেদের অতীতের কাজগুলি দেখেছে? ইউপিএ সরকার আমলে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দায়েরের সবথেকে খারাপ রেকর্ড রয়েছে। ২০১২ সালে পি চিদাম্বরমের নজরাধীনেই হাজার হাজার মানুষের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দায়ের করা হয়েছিল।”