নয়া দিল্লি: ২০০৩ সালের ইরাক যুদ্ধের সময়, সেই দেশে ভারতী সেনা মোতায়েনের জন্য প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী-সহ গোটা ভারত সরকারের উপর প্রচণ্ড চাপ ছিল। মার্কিন আগ্রাসন ছিল বেআইনি। তাই, মার্কিন প্রশাসন ভারতকেও তাদের জাহাজে সামিল করতে আগ্রহী ছিল। এটা তাদের অভিযানকে একধরনের বৈধতা দিত। কারণ ভারতকে বারবরই উন্নয়নশীল বিশ্বের কণ্ঠ হিসেবে দেখেছে পশ্চিমী দুনিয়া। জোট নিরপেক্ষ বিশ্বে ভারত যদি তাদের সঙ্গে যুদ্ধে সামিল হত, তাহলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্রদের এই অভিযান বৈধতা পেত।
দ্বিতীয়ত, এর সঙ্গে পারমাণবিক অস্ত্রের প্রশ্ন জড়িত ছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ধরে নিয়েছিল ভারত তাদের প্রস্তাব গ্রহণ করবে। কারণ, বুশ প্রশাসন প্রচার করেছিল যে, ইরাকে অবৈধ পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি চলছে। মার্কিন প্রশাসন সরাসরি প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের সঙ্গে মোকাবিলা করেছিল। আনুষ্ঠানিকভাবে আমার এই সম্পর্কে কোনও ধারণা ছিল না। কারণ এই বিষয়টি কখনও আলোচনা করা হয়নি, বিদেশ মন্ত্রকের কোনও মতামত নেওয়া হয়নি।
আমেরিকার দিক থেকে, আমাদের জন্য যুদ্ধে যোগ দেওয়ার কাজটা সহজতর করার চেষ্টারও অভাব ছিল না। তারা বলেছিল, ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীকে এমন এক এলাকায় মোতায়েন করা হবে, যেখানে প্রকৃতপক্ষে কোনো হিংসার ঘটনা ঘটছে না। তাই ভারতীয়দের আসল লড়াইয়ে অংশ নিতে হবে না। তারা বলেছিল ভারতীয় বাহিনীর দায়িত্ব হবে একটা বৃহৎ এলাকায় শান্তি বজায় রাখা। এর ফলে, পশ্চিমী শক্তিগুলি সন্ত্রাসবাদ বিধ্বস্ত এলাকাগুলিতে যুদ্ধে মনোনিবেশ করবে।
আমরা জানিয়েছিলাম, আমাদের এই বিষয়ে স্পষ্ট নীতি রয়েছে। রাষ্ট্রপুঞ্জ অনুমোদিত না হলে আমরা কোনও শান্তিরক্ষা অভিযানে অংশ নেব না। ইরাকের ক্ষেত্রে তা ছিল না। তাই আমরা আমাদের সুবিবেচিত সু-নিয়ন্ত্রিত নীতির বিরুদ্ধে যেতে পারব না। আমি তখন যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলাম। প্রাক্তন মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব পল উলফোভিটজ এবং প্রাক্তন মার্কিন বিদেশমন্ত্রী কন্ডোলিজা রাইসের সঙ্গে দেখা করে এবং আমাদের অবস্থান স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করেছি। পরে আমাকে বলা হয়েছিল যে আমি খুব কড়া অবস্থান নিয়েছিলাম। আমি বলেছিলাম না। আমরা কী করতে পারি, আর কী করতে পারি না সেই সম্পর্কে আমি আমাদের অবস্থানটা স্পষ্টভাবে বলেছিলাম।
সরকারের মধ্য থেকেও আওয়াজ উঠেছিলাম। আমি নাম নেব না, তবে ওয়াশিংটন সফরে এক পদস্থ মন্ত্রীর ভুল করে মার্কিনিদের এমন ধারণা দিয়েছিলেন যে, আমরা সামরিক অবদান রাখতে প্রস্তুত। নয়াদিল্লিতে বৈঠকের সময়, আমি আমার দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করেছিলাম এবং সবাই তাতে একমত হয়েছিল। কিন্তু সরকারী পর্যায়ে সরাসরি বলার পরিবর্তে, আমরা একটা সর্বদলীয় অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলাম। তাতে আমরা আরও বিশ্বাসযোগ্যভাবে বলতে পেরেছিলাম যে দেশ ইরাকে যুদ্ধ করতে যেতে চায় না।
আমার নিজের মনে হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী ইরাকে সৈন্য পাঠানোর পক্ষে ছিলেন না। তবে এক-দুইজন মন্ত্রী ভবিষ্যতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের প্রেক্ষিতে সেনা পাঠানোর কথা ভেবেছিলেন। সেনা পাঠানোর বিষয়ে বাজপেয়ী পুরোপুরি রাজি ছিলেন না। ইতিমধ্যে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে স্বাভাবিক মিত্র বলে আখ্যা দিয়েছিলেন। সেই কারণেই আমরা এই পরোক্ষ উপায়টি খুঁজে নিয়েছিলাম, বলেছিলাম যে আমাদের হাত বাঁধা। কুড়ি বছর পর, আমরা এখন জানি যে সিদ্ধান্তটি সঠিক ছিল, বুদ্ধিমানের মতো সিদ্ধান্ত ছিল।