লখনউ: দারুণ ব্যবসা করেছিল দিবাকর বন্দ্যোপাধ্যায় পরিচালিত বলিউডি চলচ্চিত্র ‘লাভ, সেক্স আউর ধোকা’। উত্তর প্রদেশের ঝাঁসিতে এমন এক ঘটনা ঘটেছে, যাকে বলা যেতে পারে ‘লাভ, সেক্স চেঞ্জ আউর ধোকা’। এই কাহিনিতে প্রেম আছে, ধোঁকাও আছে। আর আছে ‘সেক্স চেঞ্জ’ বা লিঙ্গ পরিবর্তন। আসলে, প্রেমিকার সঙ্গে সুখে জীবন কাটাতে চেয়ে লিঙ্গ পরিবর্তন করে পুরুষ হয়েছিলেন এক মহিলা। অথচ, যে প্রেমিকার জন্য এতকিছু করলেন তিনি, সেই প্রেমিকাই শেষে অন্য পুরুষের জন্য ধোকা দিয়েছেন তাঁকে। এমনটাই অভিযোগ মহিলা থেকে পুরুষ হওয়া ওই ব্যক্তির।
এই কাহিনির সূত্রপাত ঘটে ২০১৬ সালে। সেই সময় ঝাঁসিতে বাবা-মায়ের সঙ্গেই থাকতেন সোনাল। পেয়িং গেস্ট হিসেবে তাদের বাড়ির উপরের তলায় থাকতে এসেছিলেন সানা। দুই কাছাকাছি বয়সের যুবতীর মধ্যে বন্ধু হতে দেরি হয়নি। এরপর মাস চারেক যেতে না যেতেই তাঁদের মধ্যে গড়ে উঠেছিল প্রেমের সম্পর্ক। যা নজরে এসেছিল সোনালের বাবা-মায়েরও। মেয়ের সমকামী সম্পর্ক তাঁরা মেনে নিতে পারেননি। সানাকে বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন তাঁরা। সানা সরকারি কর্মচারী, ফলে সরকারি আবাসন পেতে সমস্যা হয়নি। ২০১৭ সালেই সেই সরকারি আবাসনে উঠে গিয়েছিলেন তিনি। সানাকে বাড়ি থেকে সরিয়ে দিয়েও, তাদের সম্পর্কে ভাঙন ধরাতে পারেননি সোনালের বাবা-মা। কয়েক মাস পর সোনালও বাড়ি ছেড়ে গিয়ে সানার সরকারি ফ্ল্যাটে উঠেছিলেন।
একসঙ্গে বেশ সুখেই ছিলেন সোনাল ও সানা। এই সময় সানাকে লিঙ্গ পরিবর্তনের অস্ত্রোপচার করানোর অনুরোধ করেছিলেন সোনাল। এরপর, দুজনে মিলে গিয়েছিলেন দিল্লির স্যার গঙ্গা রাম হাসপাতালে। সেখানকার চিকিৎসকরা সানার কিছু মেডিকেল পরীক্ষা করে জানিয়েছিলেন, লিঙ্গ পরিবর্তনের অস্ত্রোপচার করার ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা নেই। এরপর, ২০২০ সালের জুন মাসে সানার অস্ত্রোপচার হয়েছিল। পুরুষ হয়ে তিনি সরকারিভাবে তাঁর নামও পরিবর্তন করিয়েছিলেন। সানা হয়েছিলেন সোহেল খান। তারপর থেকে প্তিটি ক্ষেত্রে নিজেকে সোনাল ‘সোহেল খানের স্ত্রী’ বলেই পরিচয় দিতেন সোনাল।
এই অবধি সব ঠিকঠাকই ছিল। সমস্যা শুরু হয় ২০২২-এ। এতদিন কর্মহীন অবস্থায় থাকা সোনাল, চাকরি পেয়েছিলেন ইয়াথার্থ হাসপাতালে। প্রথমে সোহেল খুশিই হয়েছিলেন। কিন্তু, কয়েকদিন পর থেকে সোনালের আচার-আচরণে কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করেছিলেন সোহেল। সোনাল তাঁকে এড়িয়ে যাচ্ছিলেন। দিনের বেশিরভাগ সময়ই তিনি হাসপাতালেই কাটাতে শুরু করেন। এই নিয়ে তাদের মধ্যে বাদানুবাদ শুরু হয়। এই সময়ই সোনাল জানান, তিনি তাঁর পরিবারকে মিস করছেন। এর পরপরই সোহেল আসল বিষয়টি ধরে ফেলেন। তিনি জানতে পেরেছিলেন, সোনাল আসলে অন্য এক পুরুষের প্রেমে পড়েছেন। সোনালের হাসপাতালেরই এক সহকর্মী।
এই নিয়ে সোনালকে প্রশ্ন করতেই তিনি সাফ জানান, ওই পুরুষকে তিনি ভালবেসে ফেলেছেন। তাঁর সঙ্গেই থাকতে চান। সোহেল জানিয়েছেন, এরপরই তাঁর বাড়ি ছেড়ে বাবা-মায়ের কাছে ফিরে গিয়েছিলেন সোনাল। এমনকি, সোহেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণ, অপহরণ ও যৌন হেনস্থার অভিযোগ এনে মামলাও করেন সোনাল ও তাঁর পরিবার। এরপর, পুলিশের কাছে গোটা ঘটনাটাই খুলে বলেন সানা ওরফে সোহেল।
পুলিশ সোনালকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠিয়েছিল, কিন্তু সোনাল হাজিরা দেয়নি। এরপর আদালতের দ্বারস্থ হন সোহেল। আদালতের হাজিরাও এড়িয়ে যান সোনাল। অবশেষে গত ১৮ জানুয়ারি সোনালকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তবে, জামিনে মুক্তি পেয়েছেন তিনি। আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি এই মামলার পরবর্তী শুনানি হওয়ার কথা।