দেরাদুন: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি অগার যন্ত্রটি ভেঙে গিয়ে জোর ধাক্কা খেয়েছে উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশীর সিল্কিয়ারা এলাকায় ধসে পড়া সুড়ঙ্গে উদ্ধারকাজ। যা মাত্র কয়েক ঘণ্টার মামলা বলে মনে করা হচ্ছিল, এখন তাই কয়েক দিনের কাজে পরিণত হয়েছে। রবিবার সিলিয়ারা টানেলে উল্লম্বভাবে খনন কাজ শুরু হয়েছে। উদ্ধার অভিযানের ১৫তম দিনে উদ্ধারকাজে যোগ দিয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনীও। জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সদস্য, অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল সৈয়দ আতা হাসনাইন জানিয়েছেন, সুড়ঙ্গে আটকে থাকা ৪১ জন শ্রমিকেরই শরীর-স্বাস্থ্য ভাল আছে। তাদের নিয়মিত খাবার ও ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তাঁরা তাঁদের পরিজনদের সঙ্গে সর্বক্ষণ যোগাযোগও করতে পারছেন। উদ্ধারকারীরা এখন মোট ছয়টি পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছেন।
প্রথম পরিকল্পনা: অনুভূমিকভাবে হাতে হাতে খননকাজ
অগার যন্ত্রের বেশ কিছু অংশ এখনও সুড়ঙ্গে আটকে রয়েছে। সেই যন্ত্রাংশগুলি কেটে বের করার কাজ শেষ হলেই শুরু হবে ম্যানুয়াল ড্রিলিং বা খালি হাতে খননকাজ। এখনও পর্যন্ত ১৫ মিটার পর্যন্ত অগার মেশিন কাটা সম্ভব হয়েছে। এর জন্য লেজার কাটার ব্যবহার করা হচ্ছে। হায়দরারাবাদ থেকে বায়ুসেনার বিমানে প্লাজমা কাটার মেশিনও আনা হয়েছে। অগার মেশিনের অংশগুলি সম্পূর্ণ কেটে বের করতে এখনও অন্তত একদিন সময় লাগবে। অগার মেশিনে ৪৭ মিটার পর্যন্ত কাটা গিয়েছে। হাতে হাতে আরও ১৫ মিটার খনন করতে হবে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের খনি এলাকা থেকে গভীর খননে সিদ্ধহস্ত শ্রমিকদের আনা হয়েছে। ম্যানুয়াল ড্রিলিংয়ের গতি নির্ভর করছে ধ্বংসস্তূপের মধ্যে প্রতিবন্ধক হিসেবে আর কোনও ধাতব বস্তু আছে কি না, তার উপর। এখনও পর্যন্ত ৮০০ মিমি চওড়া পাইপ ঢোকানো হয়েছে। যদি সমস্যা হয় তবে ৭০০ মিমি চওড়া পাইপ ঢোকানো হবে।
দ্বিতীয় পরিকল্পনা: উল্লম্বভাবে খনন
পাহাড়ের চূড়ায় ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে ভার্টিক্যাল ড্রিলিং বা উল্লম্বভাবে খনন। ইতিমধ্যেই ১৫ মিটার খনন করা হয়ে গিয়েছে। মোট ৮৬ মিটার খনন করা লক্ষ্য। এর জন্য মোট ১০০ ঘণ্টা বা প্রায় চারদিন সময় লাগবে। ১.২ মিটার ব্যআসের একটি পাইপ এর মাধ্যমে বসানো হচ্ছে। এই পরিকল্পনা সফল হলে, এর মধ্য দিয়ে আটকে থাকা শ্রমিকদের বালতিতে করে বের করে আনার চেষ্টা করা হবে। এছাড়াও একটি সরু পাইপকে বিকল্প সাপ্লাই লাইন হিসেবে বসানো হচ্ছে। এই মুহূর্তে যে পাইপের মাধ্যমে শ্রমিকদের জন্য খাবার যাচ্ছে, তার যদি কোনও কারণে ক্ষতি হয়, তখন এই বিকল্প পাইপটি সাপ্লাই লাইন হিসেবে ব্যবহার করা হবে। পাহাড় চূড়ায় ভার্টিক্যাল ড্রিলিং-এর ক্ষেত্রে উদ্বেগ থাকছে পাথরের মধ্যে জমে থাকা জল নিয়ে। প্রতি মুহূর্তে পাহাড়ের ভিতরে জমে থাকা জল নিয়ে রিপোর্ট দিচ্ছে জিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া।
তৃতীয় পরিকল্পনা: সমান্তরাল খনন
উদ্ধারকারীদের তৃতীয় পরিকল্পনা হল পাহাড়ের পাশ থেকে সমান্তরালভাবে খনন করা। তবে, এর জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি এসে না পৌঁছনোয়, এর কাজ এখনও শুরু হয়নি। ২৮ নভেম্বর এই খননের কাজ শুরু হতে পারে। কাজ শেষ হতে ১২ থেকে ১৫ দিন সময় লাগতে পারে। এই ক্ষেত্রে মোট ১৮০ মিটার খনন করতে হবে। এখন খননের যন্ত্র বসানোর জন্য কংক্রিটের ভিত তৈরি করা হচ্ছে।
চতুর্থ পরিকল্পনা: বারাকোটের দিকে বিস্ফোরণ
বারকোটের দিক থেকেও শুরু হয়ে গিয়েছে অনুভূমিক খননের কাজ। এদিক থেকে আটকে থাকা শ্রমিকদের কাছে পৌঁছতে গেলে ৪২৩ মিটার খনন করতে হবে। এর জন্য রবিবারই ৪টি বিস্ফোরণ ঘটিয়ে সুড়ঙ্গ তৈরির চেষ্টা করা হয়েছে। ১০-১২ মিটার পর্যন্ত খনন করা গিয়েছে বলে জানিয়েছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী।
পঞ্চম পরিকল্পনা: বারাকোটের দিকে উল্লম্বভাবে খনন
সুড়ঙ্গের বারাকোট প্রান্তের দিক থেকেও উল্লম্বভাবে খনন করার পরিকল্পনা করেছে ওএনজিসি।
ষষ্ঠ পরিকল্পনা: ড্রিফ্ট প্রযুক্তি
অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল সৈয়দ আতা হাসনাইন জানিয়েছেন, এর পাশাপাশি ড্রিফ্ট প্রযুক্তির মাধ্যমে সুড়ঙ্গটির দুই পাশ ভেঙে ফেলে শ্রমিকদের উদ্ধার করার পরিকল্পনাও করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর এঞ্জিনিয়াররা এই কাজের দেখভাল করবেন।
তবে, উদ্ধারকারীদের মতে তারা সবথেকে বেশি আশাবাদী প্রথম পরিকল্পনা নিয়েই। অর্থাৎ, অনুভূমিকভাবে হাতে হাতে খননকাজের উপরই তারা সবথেকে বেশি ভরসা করছেন। সেই পরিকল্পনা যদি কোনও কারণে সফল না হয়, তবেই অন্যান্য পরিকল্পনাগুলি কাজে লাগানোর চেষ্টা করা হবে। এদিন, পাহাড়ের উপরে উল্লম্বভাবে খননের কাজ শুরু হওয়ার কারণে, সাবধানতাবশতঃ সুড়ঙ্গের ভিতরে অন্য সব কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। পাহাড়ের উপর খননের ফলে গোটা সুড়ঙ্গই কাঁপছে। ফলে সুড়ঙ্গের ভিতর ফের ধস নামার আশঙ্কা রয়েছে।