দেরাদুন: ১২ নভেম্বর ভোরে ধস নেমেছিল। উত্তরাখণ্ডের সিল্কিয়ারায় নির্মিয়মাণ সুড়ঙ্গে আটকে পড়েছিলেন ৪১ জন নির্মাণকর্মী। তারপর, ৯ দিন কেটে গিয়েছে। ৯ দিন পর, অবশেষে গরম গরম খাবার পেলেন আটকে পড়া শ্রমিকরা। সোমবার, একটি ৬ ইঞ্চি প্রশস্ত পাইপ ধ্বংসস্তূপের মধ্য দিয়ে প্রবেশ করাতে সফল হয়েছেন উদ্ধারকারীরা। এর কিছুক্ষণ পরই, ওই পাইপ দিয়ে বোতলে করে গরম খাবার পাঠানো হয়েছে। উদ্ধার অভিযানের দায়িত্বে থাকা কর্নেল দীপক পাতিল বলেছেন, “আমরা চওড়া মুখের প্লাস্টিকের বোতল নিয়ে এসেছি। ওই বোতলগুলি করে আমরা শ্রমিকদের কাছে কলা, আপেল, খিচুড়ি এবং ডালিয়া পাঠাচ্ছি।” ন্যাশনাল হাইওয়েজ অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশনের ডিরেক্টর, অংশু কালখো জানিয়েছেন, নয়া পাইপটি ভিতরে পাঠানো গিয়েছে, এই খবরে আটকে পড়া শ্রমিকদের মধ্যে আনন্দের পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
শ্রমিকদের জন্য খাবার তৈরি করছেন বেশ কয়েকজন রাঁধুনি। তাঁদের একজন, হেমন্ত, সংবাদ সংস্থা এএনআইকে বলেছেন, “এই খাবার সুড়ঙ্গের ভিতরে পাঠানো হবে। এই প্রথম গরম খাবার পাঠানো হচ্ছে। আমরা খিচুড়ি পাঠাচ্ছি। আমাদের যা বলা হয়েছে, আমরা শুধু সেই খাবারই তৈরি করছি।” আরেক রাঁধুনি রবি রায় বলেছেন, “আজ তাঁদের কাছে খিচুড়ি পাঠানো হচ্ছে। এছাড়া, কমলা, আপেল, মিষ্টি লেবুর শরবতও পাঠানো হয়েছে। আগামীকাল থেকে তাদের কাছে ডালিয়া-সহ অন্যান্য খাবার পাঠানো হবে।” নতুন পাইপটিকে ‘লাইফলাইন পাইপ’ বলছেন উদ্ধারকারীরা। ওই পাইপ দিয়ে আটকে পড়া শ্রমিকদের জন্য খাদ্য ছাড়াও, মোবাইল ফোন এবং চার্জারের মতো প্রয়োজনীয় জিনিসও পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন উদ্ধারকারীরা। সংবাদ সংস্থা এএনআইকে নিরাপত্তা কর্মী নিপু কুমার জানিয়েছেন, শ্রমিকদের সঙ্গে যাতে সবসময় যোগাযোগ রাখা যায়, তার জন্য সুড়ঙ্গের ভিতর আপাতত একটি ওয়াকি-টকি পাঠানো হয়েছে।
কর্নেল দীপক পাতিল জানিয়েছেন, আটকে পড়া শ্রমিকদের কাছে কী কী খাদ্য সামগ্রী পাঠানো হবে, সেই বিষয়ে চিকিৎসকদের সঙ্গে পরামর্শ করা হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, যাতে কোনওভাবে শ্রমিকদের পেট খারাপ না হয়, সেই দিকে নজর রাখতে হবে। সেই মতো আটকে পড়া শ্রমিকদের জন্য খাদ্যের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। সেই তালিকা মেনে একেক সময়ে একেক রকম খাবার পাঠানো হবে। অন্যদিকে অংশু কালখো জানিয়েছেন, এই ‘সাফল্যে’ তাঁরা উজ্জীবিত। উদ্ধারকারীরা এখন পুরো শক্তি নিয়ে শ্রমিকদের উদ্ধারকাজে নামবেন। তিনি বলেছেন, “আগে চিন্তা ছিল, প্রথম লাইফলাইনটি বন্ধ হলে কী হবে। কিন্তু এখন যেহেতু আমরা বিকল্প লাইফলাইন স্থাপন করেছি, তাই এখন আমরা পুরো শক্তি নিয়ে ঝাঁপাতে পারব।” ইতিমধ্যেই, ডিআরডিও-র ২০ কেজি এবং ৫০ কেজি ওজনের দুটি রোবোটিক্স মেশিন ঘটনাস্থলে নিয়ে আসা হয়েছে। এনএইচআইডিসিএল ডিরেক্টর বলেছেন, “এই মেশিনগুলি আমরা ভিতরে ব্যবহার করার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু, সুড়ঙ্গের ভিতরে স্তর এত ঝুরঝুরে হয়ে আছে, তাতে এই প্রচেষ্টা সফল হয়নি।”