দেহরাদুন: দীপাবলির উৎসবে যখন মেতে ওঠার প্রস্তুতি নিচ্ছিল গোটা দেশ, তখনই বিপর্যয় নেমে এসেছিল উত্তরকাশীতে (Uttarkashi)। গত সপ্তাহের রবিবার ভোরে উত্তরকাশীর নির্মীয়মাণ সুড়ঙ্গে ধস (Tunnel Collapse) নামায় ভিতরে আটকে পড়েছিলেন ৪০ জন শ্রমিক। আরেক রবিবার এসে গেল, এখনও উদ্ধার করা যায়নি ওই শ্রমিকদের। লাগাতার চেষ্টা চালানো হলেও, এখনও সাফল্যের মুখ দেখেনি উদ্ধারকারী দলগুলি। ধ্বংসস্তূপে সরিয়ে, অগার মেশিনে যান্ত্রিক ত্রুটি, নতুন করে ধস নামা-একের পর এক বাধা এসেই চলেছে উত্তরকাশীর সুড়ঙ্গের উদ্ধারকাজে। এবার ৪০ শ্রমিককে উদ্ধার করতে একসঙ্গে পাঁচ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
উদ্ধারকারী দলের তরফে গতকালই জানানো হয়েছিল, অগার মেশিন দিয়ে সোজাসুজি খননে বাধা পড়ায়, এবার উলম্ব বা সুড়ঙ্গের ছাদ খুঁড়ে ৪০ শ্রমিককে উদ্ধারের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। আজ, রবিবার থেকেই সেই কাজ শুরু হবে। অন্যদিকে, আরও উদ্ধারকারী দল যাতে সহজে সুড়ঙ্গের কাছে পৌঁছতে পারে, তার জন্য নতুন রাস্তা বানাচ্ছে বর্ডার রোডস অর্গানাইজেশন। রবিবার দুপুরের মধ্যেই এই রাস্তা তৈরি হয়ে যাবে।
যেহেতু বিপর্যয়ের সাতদিন কেটে গিয়েছে, এখনও সুড়ঙ্গ থেকে উদ্ধার হতে না পারায় মনোবল ভেঙে যাচ্ছে শ্রমিকদের। তাদের পরিবার ও অন্যান্য শ্রমিকদের মধ্যে তৈরি হচ্ছে অসন্তোষ। ইতিমধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে প্রধানমন্ত্রীর দফতর ও বিশেষজ্ঞের দল। তারাই সিদ্ধান্ত নিয়েছে পাঁচটি পদ্ধতিতে উদ্ধারকাজ চালানো।
প্রধানমন্ত্রী দফতরের প্রাক্তন উপদেষ্টা ভাস্কর কুলবে বলেন, “সুড়ঙ্গের একটা দিকে রয়েছে সিল্কিয়ারা, অন্য দিকে বারকোট। সিল্কিয়ারার দিকে সুড়ঙ্গের ভিতরে ধস নামে। সেদিক থেকেই উদ্ধারকাজের চেষ্টা চলছে সবচেয়ে বেশি।”
সিল্কিয়ারার দিক থেকেই আমেরিকান অগার মেশিন ঢোকানোর চেষ্টা শুরু হয় শুক্রবার। ৬০ মিটারের ধ্বংসস্তূপ পেরোলে, তবেই উদ্ধার করা সম্ভব ওই ৪০ শ্রমিককে। কিন্তু ২২ মিটার খননের পর আর এগোয়নি ৯০০ মিমি চওড়া পাইপ। ইন্দোর থেকে আরও একটি যন্ত্র বায়ুসেনার বিশেষ বিমানে উড়িয়ে আনা হয়েছে।
দ্বিতীয় প্রচেষ্টা চলছে বারকোটের দিক থেকে সুড়ঙ্গে খনন চলছে। এ পথেও অনেকটা সময় লেগে যাওয়ার কথা। কমপক্ষে ৪-৫দিন সময় লেগে যেতে পারে।
তৃতীয় পরিকল্পনা হল সুড়ঙ্গের উপর থেকে ভার্টিকাল ড্রিল বা উল্লম্ব ভাবে খনন। এর জন্য নেদারল্যান্ডসের একটি মেশিন আনা হচ্ছে। সুড়ঙ্গের উপরের পাহাড়ে মেশিন পৌঁছনোর রাস্তা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে শনিবারই। এমন জায়গা থেকে ভার্টিকাল খনন শুরু হবে, যেখানে কম খুঁড়েই আটকে থাকা শ্রমিকদের কাছে পৌঁছনো যেতে পারে। তবে এক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ হল সুড়ঙ্গে স্টিল এড়িয়ে খননকাজ এগোনো।
আরও দুই পরিকল্পনা মাথায় রাখা হচ্ছে। সেগুলি হল সুড়ঙ্গের ডান ও বাম দিক থেকে খনন। কিন্তু এক্ষেত্রে সবথেকে বড় প্রশ্ন হল, সাফল্য আসবে কবে? উদ্ধারকারী দলের তরফে জানানো হয়েছে, ৪০ শ্রমিককে উদ্ধার করতে আরও ৪-৫ দিন সময় লেগে যেতে পারে।কিন্তু এতদিন কি সুড়ঙ্গের গভীর অন্ধকারে জীবনযুদ্ধ চালাতে পারবেন ৪১ জন শ্রমিক? এই যুদ্ধ শুধু তো শরীরের নয়, মানসিক লড়াইতেও জিততে হবে। আটকে পড়া শ্রমিকদের মানসিক ভারসাম্য বজায় রাখতে কাউন্সেলিং করানো হচ্ছে, খাওয়ানো হচ্ছে অ্যান্টি-ডিপ্রেশন পিল।