নয়া দিল্লি : মায়ের সঙ্গে জামাকাপড় ইস্ত্রি করতে দিতে দোকানে গিয়েছিল ১২ বছরের কিশোরী। সে দেখে, দোকানে কয়লা উনুনে চাপানো ইস্ত্রি। তা দিয়েই জামাকাপড় ইস্ত্রি করছে এক বৃদ্ধ দম্পতি, বেরচ্ছে কালো ধোঁয়া। এমন দৃশ্য নতুন কিছু নয়। কিন্তু সেই দৃশ্যই নাড়া দিয়েছিল ১২ বছরের বিনিশা উমাশঙ্কর। সে ভাবতে শুরু করে এ ভাবে দিনে কত কয়লা পোড়ে, এতে পরিবেশের কতটা ক্ষতি হয়। সেই শুরু। তারপর পরিবেশ রক্ষার দায় নিজের ঘাড়ে নিয়েছে সে। সম্প্রতি গ্লাসগোর জলবায়ু সম্মেলনে ১৫ বছরের সেই ছাত্রীর বক্তব্য তাক লাগিয়ে দিয়েছে গোটা বিশ্বকে। অনেকেই বলছেন, সেই ভারতের গ্রেটা থুনবার্গ।
কয়লার উনুনে চাপানো ইস্ত্রি দেখার পর থেকেই সোলার প্যানেল নিয়ে পড়াশোনা শুরু করে বিনিশা। সোলার প্যানেল নিয়ে পড়াশোনা করতে স্নাতক স্তরের বইপত্রের সাহায্য নেয় সে। দেখতে থাকে কী ভাবে বানায় সোলার প্যানেল। এরপর নিজের কাজের সেই কথা সে জানায় কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে থাকা ন্যাশনাল ইনোভেশন ফাউন্ডেশনে। এরপর ইঞ্জিনিয়ারদের সাহায্য পায় সে। তৈরি করে ফেলে একটি পূর্ণাঙ্গ সৌরচালিত ইস্ত্রি। ৬ ঘণ্টা সূর্যের আলো পেলে ৬ ঘণ্টা চলে সেই ইস্ত্রি। ইস্ত্রিটিকে সাইকেলের সঙ্গে জুড়ে দিয়ে বাড়ি বাড়ি পাঠায় সে।
এটাই শেষ নয়। একটি স্মার্ট সিলিং ফ্যানও তৈরি করেছে সে, যা চলে মোশন সেন্সরে। সেই উদ্ভাবনের জন্য পুরস্কারও পেয়েছে সে। ব্রিটিশ রাজকুমার উইলিয়ামের ‘আর্থশট প্রাইজ়’ নামে একটি পুরস্কার ঘোষণা করেছেন। তার চূড়ান্ত তালিকায় নাম রয়েছে বিনিশার। গ্লাসগোর জলবায়ু সম্মেলনে উপস্থিত রাষ্ট্রনেতাদের সামনে সে বুঝিয়ে দিয়েছে, পৃথিবীকে বাঁচাতে কিছু করতে হবে সবাইকে। তার কথায় আপনারা না এগোলে আমরাই লড়ব।
বিনিশাক কথায়, আজ সবথেকে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড়িয়ে পৃথিবী। মানব সভ্যতার উদ্ভাবনী ক্ষমতাকে কাজে লাগানোর কথা বলেছে সে। সে আরও বলে, আমরা কোনও অভিযোগ করছি না। বরং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার চেষ্টা করব। সহজ নয়, কঠিন বলেই এই পথ বেছে নিয়েছি বলে দাবি করেছে সে। সে আরও বলে, এই চ্যালেঞ্জই আমাদের প্রজন্মকে তৈরি করবে। বিনিশার বক্তব্য, আপনাদের জন্য আমরা অপেক্ষা করতে পারছি না। আপনারা এই লড়াইয়ে নেতৃত্ব না-দিলে আমরাই দেব। আপনারা যদি অতীতে আটকে থাকেন, আমরা ভবিষ্যৎ তৈরি করব।
বিনিশার বাবা পেশায় একজন বিজনেস কনসালট্যান্ট, আর মা স্কুল শিক্ষিকা। বিনিশা যে স্কুলে পড়ে, সেখানেই বিজ্ঞানের শিক্ষিকা তার মা। পড়াশোনার পাশাপাশি অন্যান্য ক্ষেত্রেও সুদক্ষ বিনিশা। ২০২০-তে তার ঝুলিতে আসে চিল্ডরেন ক্লাইমেট প্রাইজ। ইস্ত্রি তৈরি করার জন্যই ওই পুরস্কার পেয়েছিল সে। ২০১৯- এ আব্দুল কালাম পুরস্কার পায় বিনিশা। সর্বকনিষ্ঠ হিসেবে ড. প্রদীপ থেভান্নুর ইনোভেশন পুরস্কারও পায় সে। ২০২১-এ আর্থ ডে নেটওয়ার্ক রাইজিং স্টারের প্রাপক বিনিশা।
আরও পড়ুন : Chinese Journalist: ‘হয়ত আর বাঁচবে না’, জেলে ধুঁকছেন করোনা পরিস্থিতির খবর প্রকাশ করা সেই চিনা সাংবাদিক