Vladimir Putin In India: তেল, প্রতিরক্ষা ও কূটনীতি! যেসব কারণে ভারতে এলেন পুতিন
India-Russia Bilateral Strategic Partnership: ডিসেম্বরের বেলা ১১টায় হায়দরাবাদ হাউসে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক রয়েছে তাঁর প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে। কিন্তু ৪ হাজার ৩০০ কিলোমিটারের বেশি উড়ে এসে কী কী বিষয়ে আলোচনা করবেন পুতিন?

ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধ শুরুর পর এই প্রথম ভারতে এলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ৪ ডিসেম্বর সন্ধে ৭টা নাগাদ দিল্লিতে নামলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট। আর তারপর সেখান থেকে সোজা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাসভবন। ৫ ডিসেম্বর ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে দেখা করবেন পুতিন। তারপর পুতিন যোগ দেবেন ২৩তম ভারত-রাশিয়া বার্ষিক সামিটে। বেলা ১১টায় হায়দরাবাদ হাউসে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক রয়েছে তাঁর প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে। কিন্তু ৪ হাজার ৩০০ কিলোমিটারের বেশি উড়ে এসে কী কী বিষয়ে আলোচনা করবেন পুতিন?
সূত্র বলছে পুতিনের আলোচনার মূল বিষয় থাকবে তিনটি। প্রথমটি অবশ্যই বাণিজ্য, দ্বিতীয় প্রতিরক্ষা আর সবচেয়ে শেষ ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কূটনীতি।
বাণিজ্যে কী নিয়ে আলোচনা?
পুতিনের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদীর আলোচনার প্রথমের থাকার কথা বাণিজ্য সংক্রান্ত বিষয়। ২০২০ সালে ভারতের সঙ্গে রাশিয়ার দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল মাত্র ৮ বিলিয়ন ডলার। পরবর্তী ৫ বছরে অর্থাৎ ২০২৫ সালের মার্চ মাসের মধ্যে যা এসে দাঁড়িয়েছে ৬৮.৭২ বিলিয়ন ডলারে। এর মধ্যে একটা বিরাট অঙ্ক হল সস্তার রাশিয়ান ক্রুড অয়েল। রাশিয়া চাইছে আগামী ৫ অর্থবর্ষে অর্থাৎ ২০৩০ সালের মার্চ মাসের মধ্যে এই অঙ্কটাকে ১০০ বিলিয়ন ডলারে নিয়ে যেতে।
তবে, কূটনৈতিকরা মনে করছেন একদিকে রাশিয়া যেমন এই দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বাড়াতে চাইছে, তেমনই এই ব্যাপারে পিছিয়ে নেই নয়া দিল্লিও। কারণ একটাই, ভারত ও রাশিয়ার বাণিজ্য ঘাটতি। স্পষ্ট করে বললে ভারত মাত্র ৪.৮৮ বিলিয়ন ডলারের পণ্য পাঠায় পুতিনের দেশে। অন্যদিকে, প্রায় ৬৩.৮৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রাশিয়া থেকে ভারতে আসে। যার মধ্যে বেশিরভাগটাই ক্রুড অয়েল। ফলে, বাণিজ্যের ক্ষেত্রে একটা ব্যালেন্স যে ভারত নিয়ে আসতে চাইবে, সেই কথা জোর দিয়েই বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
দিল্লির সংস্থা গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ বলছে, “রাশিয়ায় একাধিক সেক্টরে ভারত এখনও ভাল করে প্রবেশ করতে পারেনি। ভারত ৭৫ মিলিয়ন ডলার করে মোবাইল ফোন ও চিংড়ি, ৬৩ মিলিয়ন ডলারের মাংস ও প্রায় ২১ মিলিয়ন ডলারের পোশাক রফতানি করে রাশিয়ায়। আর এই পরিসংখ্যানই বলে যে ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা থাকলেও রাশিয়ার খুচরো বাজারে ভারতীয় পণ্যের অবস্থাটা কেমন।”
অন্যদিকে, ভারতের তেল আমদানি নিয়ে বেশ চিন্তায় রয়েছে রাশিয়াও। কারণ, ইতিমধ্যে ভারতের উপর ৫০ শতাংশ কর বসিয়েছে আমেরিকা। আর সেই করের হাত থেকে বাঁচার জন্য ভারতীয় সংস্থাগুলো চলতি মাসেই রাশিয়া থেকে তেল আমদানি কমিয়ে দিতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করছে বিশেষজ্ঞরা। আর সেই কারণেই এই আলোচনায় একটা বিরাট জায়গা করে নেবে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য।

প্রতিরক্ষা নিয়ে কী কথা?
প্রতিরক্ষা নিয়ে ভারতের সঙ্গে এই বৈঠকে ২ বিষয়ে কথা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ২০১৮ সালের ভারতের সঙ্গে এস ৪০০ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম নিয়ে একটা চুক্তি হয় রাশিয়ার। সেই চুক্তি অনুযায়ী ভারতকে ৫ স্ক্যোয়াড্রন এস ৪০০ ডেলিভারির কথা মস্কোর। কিন্তু এখনও পর্যন্ত মাত্র ৩টে এই এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম এসেছে ভারতে। যা অপারেশন সিঁদুরের সময় কাজে লাগিয়েছে ভারতীয় সেনা। এখনও ২ স্ক্যোয়াড্রন এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম আসতে বাকি রয়েছে। আসলে ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার কারণেই এই এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ভারতে পাঠাতে দেরি করছে রাশিয়া। আর সেই বিষয়েই কথা হবে দুই দেশের মধ্যে।
এর বাইরে প্রতিরক্ষার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হবে এই বৈঠকে। সেটা হল পঞ্চম প্রজন্মের ফাইটার জেট। ক্রেমলিনের স্পোকসপার্সন দিমিত্রি পেসকভ জানিয়েছেন, সুখোই ৫৭ ফাইটার জেট নিয়ে এই বৈঠকে আলোচনা হওয়ার জোরাল সম্ভাবনা রয়েছে। আসলে এই মুহূর্তে ভারত একটি শক্তিশালী পঞ্চম প্রজন্মের ফাইটার জেটের খোঁজে রয়েছে। সেটা দাসোর রাফাল, আমেরিকার এফ ২১, বোয়িংয়ের সুপার হর্নেট বা ইউরো ফাইটার টাইফুনও হতে পারে। আর এখানেই একটা সুযোগ খুঁজছে রাশিয়া। তারা চাইছে তাদের পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান সুখোই ৫৭-কে এই বিমানগুলোর পরিবর্ত হিসাবে তুলে ধরতে চাইছে ভারতের সামনে।
হঠাৎ পঞ্চম প্রজন্মের ফাইটার জেট কেন চাইছে ভারত? কোনও সরকারি তথ্য নেই, কিন্তু সূত্র বলছে পাকিস্তান নাকি চিনের পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান কিনতে চলেছে। আর সেই কারণেই প্রস্তুত থাকতে চাইছে নয়া দিল্লিও। জানা গিয়েছে, চিনের ৪০টি জে ৩৫ ফাইয়ার জেট কিনতে চায় পাকিস্তান। আর তাই সতর্ক ভারত।

সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের বৈঠকে
কূটনৈতিক কী আলোচনা হবে?
পুতিন এমন একটা সময় ভারতে আসছেন, যে সময় আমেরিকার সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের গ্রাফে একটা খাদ তৈরি হচ্ছে। আর এটাই হয়তও এই সফরের সবচেয়ে বড় কূটনীতি। ইতিমধ্যেই ভারতের উপর বিরাট কর বসিয়েছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফলে, এই সময়ে পুতিনের বার্তা খুব স্পষ্ট, রাশিয়ার ভারতের পাশে রয়েছে। এ ছাড়াও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণেই ইউরোপে বেশ কিছুটা কোণঠাসা অবস্থায় রয়েছে রাশিয়াও। আমেরিকার সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক সময়ের সঙ্গে আরও খারাপ হয়েছে। আর সেই কারণেই পুতিন ভারতকে এই সমস্যায় মধ্যস্থতাকারী হিসাবে পেতে চায়।
এ ছাড়াও আগে চিন সফরে চিনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে পুতিনের হাসি মুখের ছবি দেখেছে বিশ্ব। সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের সেই বৈঠকে ছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। আর এই সবের মধ্যে ভারতের মাধ্যমে গ্লোবাল সাউথের সঙ্গে একটা শক্তিশালী সম্পর্কও হয়তও তৈরি করতে চাইছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট। আর এই সবের কারণেই পুতিনের এই সফরের দিকে তাকিয়ে রয়েছে আমেরিকা সহ গোটা বিশ্ব। এরপর রাজনীতি আর কূটনীতি কোনদিনে গড়ায় সেটাই দেখার।
